ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের জন্মবার্ষিকী আজ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:০১ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ বুধবার
কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ’র ১২৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৮৯৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছাত্রাবস্থায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত এই মহান ব্যক্তি পরবর্তীকালে বিশ্বব্যাপী বাঙালি সংস্কৃতি প্রসারে অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে খ্যাত হন। তিনি ছিলেন একজন গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মগুরু এবং ইসকন বা হরেকৃষ্ণ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য।
হিন্দুধর্মের গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদটি সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল তার জীবনের উদ্দেশ্য। তিনি ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ইসকন। এছাড়া ১৯৬৯ সালের ১৪ ডিসেম্বরে তিনি শ্রী শ্রী রাধা-লন্ডনেশ্বর শ্রী-বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থায় নেতৃত্বদানের মাধ্যমে তিনি ভারতে এবং বিশেষ করে পাশ্চাত্যে গৌড়ীয় বৈষ্ণব তত্ত্ব প্রচার করতে শুরু করেন।
ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি ‘হয়ে ওঠেন পাশ্চাত্য বিকল্প সংস্কৃতির এক অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। সহস্রাধিক আমেরিকান যুবক যুবতীকে তিনি বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত করেন’।
তার প্রতিষ্ঠিত ইসকনের মূল ভিত্তি ছিল হিন্দু কৃষ্ণধর্মের একটি বিশেষ রূপ। ভাগবত পুরাণ এই সম্প্রদায়ের কেন্দ্রীয় ধর্মগ্রন্থ। ১৯৭৭ সালে প্রভুপাদের মৃত্যুর পরও ইসকনের প্রসার অব্যাহত থাকে এবং এই সম্প্রদায় ভারতে সম্মান অর্জন করে।
তার পূর্বাশ্রমের নাম ছিল অভয়চরণ দে। তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্র ছিলেন। তিনি বিবাহিত ছিলেন এবং তার সন্তানাদিও ছিল। ১৯৫৯ সালে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করার পর বৈষ্ণব শাস্ত্রের ভাষ্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। এরপর ১৯৬০-এর দশকে পরিব্রাজক সন্ন্যাসী হিসাবে আমেরিকায় যাত্রা করে তিনি তার আধ্যাত্মিক মতাদর্শ প্রচার করতে থাকেন। ১৯৬৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জন্মাষ্টমীর পরের দিন তিনি পাশ্চাত্যে প্রথম দীক্ষা অনুষ্ঠান আয়োজন করেন ও ১১ জনকে দীক্ষা দেন। ১৯৬৭ সালের ৯ জুলাই সানফ্রান্সিসকো শহরের রাজপথে তিনিই পাশ্চাত্যে প্রথম রথযাত্রা পরিচালনা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারত ও অন্যান্য জায়গায় ভ্রমণ করে তিনি অসংখ্য শিষ্যসংগ্রহে সফল হন।
তিনি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বৈদিক দর্শন ও সংস্কৃতি প্রসঙ্গে মতবিনিময় করেন। তৎকালীন জনপ্রিয় ব্যান্ড বিটলসের স্বনামধন্য তারকা জর্জ হ্যারিসন, বিখ্যাত ফোর্ড কোম্পানির উত্তরাধিকারী আলফ্রেড ফোর্ডসহ বহু বরেণ্য ব্যক্তি তাঁর আদর্শের অনুসারী হন।
শ্রীল প্রভুপাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবশত জর্জ হ্যারিসন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত নিজের বাড়িটি আধ্যাত্মিক অনুশীলনের জন্য দান করেন। প্রভুপাদের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় ভক্তিবেদান্ত মেনর। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সাহায্যার্থে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাডিসন গার্ডেন স্কয়ারে আয়োজিত কনসার্ট ফর বাংলাদেশে জর্জ হ্যারিসনের অংশগ্রহণেও শ্রীল প্রভুপাদের অনুপ্রেরণা ছিল।
১৯৬৫ সালে ৭০ বছর বয়সে পাশ্চাত্যবাসীর মধ্যে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা প্রচারের লক্ষ্যে আমেরিকায় পাড়ি জমান ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আমেরিকায় তখন হিপ্পি আন্দোলন শুরু হয়েছে। এলএসডির নেশায় দিশাহীন যুবক-যুবতীরা যথেচ্ছাচারে রত।
সে সময় স্বামী প্রভুপাদ নিউইয়র্কের টমকিনস স্কয়ার পার্কে প্রথম প্রচারকার্য শুরু করেন। সেখানকার লক্ষ্যভ্রষ্ট যুবক-যুবতীরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁর অমৃতময় কথা শ্রবণ করতে থাকেন। ধীরে ধীরে তাঁরা তাঁদের বদভ্যাসগুলো থেকে সরে আসতে শুরু করে। স্বামী প্রভুপাদ তাঁদের নিয়ে সাপ্তাহিক অধিবেশন শুরু করেন। ধীরে ধীরে আমেরিকানরা বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকেন। বাংলা সাহিত্যের অনন্য গ্রন্থ শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী বিরচিত ‘শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত’র ইংরেজি ভাষা রচনার মাধ্যমে তিনি পাশ্চাত্যবাসীদের বাংলা ভাষা শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় আজ পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ বাংলা ভাষা শিখতে প্রয়াসী হচ্ছেন। শ্রীল প্রভুপাদের অনবদ্য অবদান তাঁর গ্রন্থাবলি। তিনি ৭০টির বেশি গ্রন্থ রচনা করেন।
১৯৭৭ সালের ১৪ নভেম্বর বৃন্দাবনে অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ দেহত্যাগ করেন। তাঁর স্মৃতিতে মায়াপুর, বৃন্দাবন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু সমাধিসৌধ নির্মিত হয়েছে।
এসএ/