আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস আজ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৫৯ এএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ শনিবার
প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে পরিচিত পাখি শকুন। এ প্রাণীটিকে বাঁচাতে সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের প্রথম শনিবার পালন করা হয় ‘আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস’।
এবার দিবসটি উপলক্ষে বন বিভাগ এবং আইইউসিএনের উদ্যোগে ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। আইইউসিএন ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে দিবসটি পালন করে আসছে।
শকুন মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে বেঁচে থাকা এক প্রকার পাখি। সাধারণত এরা অসুস্থ ও মৃতপ্রায় প্রাণীর চারদিকে শিকারি পাখির মতো তীক্ষ দৃষ্টি নিয়ে উড়তে থাকে এবং প্রাণীটি মরার জন্য অপেক্ষা করে। প্রাণীটি মারা গেলেই তাকে খাওয়ার জন্য শকুনরা হামলে পড়ে।
কয়েক যুগ আগেও গ্রামে-গঞ্জে যেখানে-সেখানে শকুন দেখা যেত। মাঠে গরু মরে পড়ে থাকলে ঝাঁক বেঁধে নামত শকুন। দিনে দিনে প্রকৃতির এ ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ বিলুপ্তির পথে। ১৯৯০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৯৯ শতাংশ শকুন বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএন। তবে গত ১০ বছরে শকুন রক্ষায় সরকারের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত এবং আইইউসিএনের নানা উদ্যোগে সেই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের আশা, শকুনের সুদিন ফিরে আসবে। সঠিকভাবে শকুনের পরিচর্যা করলে বাংলাদেশের আকাশে আবার তাদের দেখা মিলবে।
পরিবেশবিদেরা বলছেন, প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করা বর্জ্যভুক প্রাণী শকুন। এটি শুধু প্রকৃতিকে পরিস্কারই রাখে না, জীবাণুমুক্তও রাখে। মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে শকুন। বিভিন্ন রোগের জীবাণু যেমন অ্যানথ্রাক্স, যক্ষ্ণা রোগের সংক্রমণসহ অন্তত ৪০টি রোগের ঝুঁকি থেকে মানুষ ও পশু-পাখিকে রক্ষা করে। শকুন আকাশে উড়ে বেড়ানোর সময় নিচের সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পায় বলে প্রাণীর মৃতদেহ দেখে নেমে আসে। একদল শকুন মাত্র ২০ মিনিটে একটি গরুর মরদেহ খেয়ে শেষ করে দিতে পারে।
বন বিভাগ ও আইইউসিএনের জরিপে দেখা গেছে, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে পরিযায়ীসহ মোট শকুনের সংখ্যা ছিল ১০ লাখ। ২০১২ সালে তা মাত্র ৫৫০টিতে নেমে আসে। ২০১৬ সালে দেশে শকুন দেখা যায় ২৪০টি। ২০১৮ সালের বন বিভাগ ও আইইউসিএনের সর্বশেষ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে শকুন দেখা গেছে ২৬০টি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০১৬ সালে ১০ বছর মেয়াদি (২০১৬-২৫) শকুন সংরক্ষণ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, যা দেশের শকুন রক্ষা করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি কাঠামো হিসেবে কাজ করছে। ২০১৭ ও ২০১৯ সালে দেশে সপ্তম ও অষ্টম আঞ্চলিক পরিচালনা কমিটির সভায় শকুন সংরক্ষণে বিভিন্ন কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার শকুন সংরক্ষণের জন্য একটি মাইলফলক। সরকার শকুন সংরক্ষণে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। সবাই সচেতন হলে হারিয়ে যাওয়া শকুন আবার ফিরে আসবে।
আইইউসিএনের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাকিবুল আমিন বলেন, লাখ লাখ শকুন ছিল, সেখানে ২৬০টিতে নেমেছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত শকুন ফিরে আসার জন্য ক্ষতিকর ওষুধ ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশই প্রথম দেশ, যারা ক্ষতিকর কিটোপ্রোফেন ওষুধও নিষিদ্ধ করেছে। এটা আমাদের জন্য বড় সফলতা। সরকার আইইউসিএন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, ওষুধ কোম্পানি ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এটার পেছনে কাজ করেছে। নতুন করে কোনো ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে না।
তিনি বলেন, শকুন রক্ষায় এখন দরকার নজরদারি। বড় গাছ রক্ষা করতে হবে। রেমা-কালেঙ্গা অংশের বন যেন নষ্ট না হয়। এর পাশে ভারতের কিছু অংশে এখনও কিছু ক্ষতিকর ওষুধ নিষিদ্ধ হয়নি। এ বিষয়ে আন্তঃসরকার পর্যায়ে আলোচনা করা দরকার।
উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে প্রায় ১৮ প্রজাতির শকুন দেখা যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ছয় প্রজাতির শকুন। চার প্রজাতি স্থায়ী আর দুই প্রজাতি পরিযায়ী। এগুলো হলো—রাজ শকুন, গ্রিফন শকুন বা ইউরেশীয় শকুন, হিমালয়ী শকুন, সরুঠোঁট শকুন, কালা শকুন ও ধলা শকুন। সব প্রজাতির শকুনই সারা বিশ্বে বিপন্ন। স্থায়ী প্রজাতির মধ্যে রাজ শকুন অতি বিপন্ন।
এসএ/