টি-শার্ট বিক্রি করেই সফল উদ্যোক্তা মনোয়ার
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৪২ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ রবিবার | আপডেট: ১২:৪৯ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ রবিবার
তরুণ উদ্যোক্তা মনোয়ার হোসেন ও তার কারখানা
এই সময়ে টি-শার্ট এর ব্যবসা দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে খুব অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করা যায় বলে অনেক তরুণই এই ব্যবসায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন এবং অনেকে উদ্যোক্তা হয়ে সফলতাও পাচ্ছেন। এমনই এক সফল তরুণ উদ্যোক্তার গল্প বলবো আজ, যিনি টি-শার্টের ব্যবসা করে সফল হয়েছেন মাত্র এক বছরে।
পাবনা জেলার রামচন্দ্রপুরের সন্তান মনোয়ার হোসেন। বাবা মোঃ আনোয়ার হোসেন একজন ব্যবসায়ী, মা মনোয়ারা বেগম গৃহিণী। মনোয়ার পড়ালেখা করছেন পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। টেক্সটাইল বিভাগে সপ্তম সেমিষ্টারের ছাত্র তিনি। ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান মনোয়ার বাবার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে ৫ জন কারিগরকে সঙ্গী করে টি-শার্টের একটা কারখানা দেন ২০২০ সালের জানুয়ারিতে।
তার উৎপাদিত টি-শার্ট (গেঞ্জি) পাবনার স্থানীয় বাজারে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে থাকেন মনোয়ার। পরে তিনি তার উৎপাদিত টি-শার্ট অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করার জন্য একটা ই-কমার্স ওয়েবসাইট ওপেন করেন। অনলাইন ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সারাদেশে তার উৎপাদিত টি-শার্টগুলো ছড়িয়ে দেন। তার অনলাইন ই-কমার্স ওয়েবসাইট টুলপো ডট কম (Toolpo.com) ও ফেসবুক পেজ মনোয়ার হোসেন টি-শার্ট হাউজ (monowar hosan T-shirt house )। অনলাইনেও পাইকারি-খুচরা বিক্রি করে থাকেন তিনি।
মনোয়ার হোসেন তার ব্যবসায় ভিন্নতা আনতে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইজ টি-শার্টেরও অর্ডার নেন ফেসবুক পেজের মাধ্যমে। এরপর সেই চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন করে তা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেন। মনোয়ারের গ্রাফিক্স ডিজাইন নখদর্পনে থাকাতে নিজেই টি-শার্টে ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী ডিজাইন করে থাকেন। এতে গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য অতিরিক্ত খরচ হয়না তার। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই মনোয়ারের ই-কমার্স সাইট টুলপো দেশের সবচেয়ে বড় টি-শার্টের ই-কমার্স সাইটে পরিণত হয়।
মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দিনদিন আমাদের পোষক-পরিচ্ছদের পরিবর্তন ঘটছে। আজকালকার ছেলে-মেয়েরা অনেক ধরণের পোশাক পরিধান করে, তার মধ্যে আরামদায়ক ও স্টাইলিশ পোশাক হিসেবে টি-শার্ট ব্যাপক পরিচিত। ছেলেদের পাশাপাশি আজকাল মেয়েরাও টি-শার্ট পরিধান করেন। যতই দিন যাচ্ছে ততই টি-শার্টের চাহিদা বাড়ছে। তাই আমি ভেবে চিন্তে টি-শার্টের কারখানা দেই।’
শুরুর গল্পে মনোয়ার বলেন, ‘প্রথমেই আমি আমার ব্যবসা পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্স করি। টি-শার্টের ব্যবসা একটি স্মার্ট ব্যবসা। কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। সল্প পুঁজিতে, অল্প সময়েই লাভের মুখ দেখা যায় এ ব্যবসায়। আমি ২ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে মাত্র এক বছরে প্রায় ১০ লাখ টাকার টি-শার্ট বিক্রি করি।’
মনোয়ার হোসেনের বাবা মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে আমার কাছে ব্যবসা করার টাকা চাইলে আমি প্রথমে সম্মতি দেইনি। ভেবেছি নষ্টই করে নাকি টাকা বা পারবে তো ব্যবসা করতে? এসব নানা রকমের চিন্তা হতো। তবে তার ব্যবসার ধরনের কথা শুনে মনে হলো টাকা দেই। পরে আমার ছেলেকে ব্যবসা করার জন্য আমি প্রায় ২ লক্ষ টাকা দেই। আল্লাহর রহমতে আমার ছেলে মাত্র এক বছরে সেই টাকা দিয়ে ব্যবসা করে সফল হয়েছে। সে এ পর্যন্ত ১০ লক্ষ টাকার গেঞ্জি বিক্রি করেছে। আমি বাবা হিসেবে গর্বিত যে, আমার ছেলে পড়ালেখার পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ী হয়েছে। আমার ছেলের জন্য সবাই দোয়া করবেন যেন সে এলাকার একজন নামকরা ব্যবসায়ী হয়’।
মনোয়ারের ইচ্ছা তার কারখানার পণ্য একসময় বিদেশেও রপ্তানি হবে। তিনি মনে করেন, ধৈর্য্য আর পরিশ্রম করলেই সফল হওয়া যায়। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের একটা কারখানা দাড় করাতে পেরে অনেক খুশি মনোয়ার। তার মাধ্যমে আরও ৫টা লোকের কর্মসংস্থান হওয়াতে মনোয়ার নিজেকে গর্বিত মনে করেন। তার ইচ্ছা কারখানাটি একদিন আরও বড় হবে। আরও অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে।
তরুণদের প্রতি মনোয়ারের পরামর্শ, শিক্ষিত তরুণরা যেন পড়ালেখার পাশাপাশি স্বল্প পুঁজিতে কিছু একটা করে। তাহলেই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হবে। বাংলাদেশ অর্থনীতিতে আসবে স্ব-নির্ভরশীলতা।
লেখক- সাজেদুর আবেদীন শান্ত, ফিচার লেখক ও গণমাধ্যম কর্মী।
এমএম/এনএস//