ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

কর্পোরেট ট্যাক্স সমাধানে দুই বই

কাশফিয়া রহমান

প্রকাশিত : ০৩:৪০ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ শনিবার

কোম্পানি প্রতিদিনই অসংখ্য লেনদেন করে থাকে। এই লেনদেনগুলো সংঘটিত হওয়ার পর টাকা পরিশোধ করতে হয়। টাকা পরিশোধ করার সময় কোম্পানির অ্যাকাউন্টস বা ফাইন্যান্স বিভাগে যারা চাকরি করেন তাদের সবার আগে বিবেচনা করতে হয়, উক্ত খরচের ওপর থেকে উৎসে কর কর্তন করতে হবে কিনা? কতো কর্তন করতে হবে, কীভাবে উৎসে কর হিসেব করতে হবে এবং কর্তনের পর কীভাবে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে ইত্যাদি।

উৎসে কর কর্তন একটা নিয়মিত কাজ কিন্তু সময় সময় ট্যাক্স সার্কেলে কিছু ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হয়। কোম্পানির আয়কর রিটার্ন বছরে একবার দাখিল করতে হয় তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এছাড়াও সারা বছর ধরে মাসিক, তিন মাস অন্তর, ছয় মাস অন্তর, বাৎসরিক কিছু রিটার্ন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত ফরমে দাখিল করতে হয়।

উৎসে কর কর্তন বা সময় সময় ট্যাক্স ফাইল সার্কেলে জমা না দিলে আয়কর আইনে বিভিন্ন ধরনের জরিমানা এবং শাস্তির বিধান রয়েছে। তাই যারা ব্যবসা করেন বা অ্যাকাউন্টস এবং ফাইন্যান্স বিভাগে চাকরি করেন তাদের জন্য ওপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো জানা অত্যন্ত জরুরি।

আমরা আয়কর আধ্যাদেশ ১৯৮৪ পড়ে সহজে বুঝতে পারি না বা কোথায় কী আছে তা খুঁজে পেতে অনেক সময় ব্যয় হয়ে যায়। তাই হাতের কাছে যদি ব্যাখ্যাসহ বাস্তব জীবনের উদাহরণ ব্যবহার করে কোনো বই থাকে তাহলে খুব সুবিধা হয়। এই সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়েই জসীম উদ্দিন রাসেল যে বই দুইটি লিখেছেন তা যারা অ্যাকাউন্টস এবং ফাইন্যান্স বিভাগে চাকরি করেন তাদের অনেক কাজে আসবে।

বই দুইটি যখন আপনি হাতে নেবেন তখন আপনার একটা ভালো লাগা কাজ করবে। চমৎকার কাভার ডিজাইন এবং উন্নত কাগজের ওপর ঝকঝকে লেখা আপনার ভালো লাগা আরো বাড়িয়ে দিবে। সাদা কাগজের পরিবর্তে ক্রিম কালারের কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে এতে করে দীর্ঘ সময় ধরে পড়লেও আপনার চোখে রিফ্ল্যাক্ট হবে না।

আয়কর একটি জটিল বিষয় এবং এই জটিল বিষয়টাকে সহজভাবে লেখার চেষ্টা করেছেন জসীম উদ্দিন রাসেল। প্রতিটি বইয়ের শুরুতেই কীভাবে আপনি বইটি পড়লে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন তা গুছিয়ে সুন্দরভাবে তিনি বলেছেন যা বিদেশি বইগুলোতে দেখা যায়।

ইংরেজিতে লেখা হলেও খুবই সহজ শব্দ যেগুলো আমরা সচরাচর ব্যবহার করে থাকি সেসব শব্দ ব্যবহার করে লিখেছেন। তাই আপনি যখন পড়বেন তখন কোথাও থামতে হবে না। বই দুইটি পড়ে আপনি কী জানতে পারবেন? কীভাবে আপনি উপকৃত হতে পারেন? তা চলুন একে একে জেনে নেই।

ট্যাক্স ডিডাকশন ২০২১: এভরিথিং ইউ শুড নো অ্যাবাউট টিডিএস অ্যান্ড বিডিএস ইন বাংলাদেশ

আপনার কর্মক্ষেত্রে উৎসে আয়কর এবং ভ্যাট কর্তন করতে গিয়ে বাস্তবে যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হন ‘ট্যাক্স ডিডাকশন ২০২১’ বইটিতে তারই সমাধান রয়েছে। ট্যাক্স এবং ভ্যাটসহ কোনো বিল যদি উপস্থাপন করা হয় তাহলে আপনি পেমেন্ট করার সময় কীভাবে উৎসে আয়কর এবং ভ্যাট গণনা করবেন তা যেমন আলোচনা রয়েছে আবার তেমনি ট্যাক্স এবং ভ্যাট ছাড়া কোনো বিল যদি উপস্থাপন করা হয় তখন আপনি কীভাবে উৎসে আয়কর এবং ভ্যাট গণনা করবেন তাও আলোচনা রয়েছে।

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্তনকৃত কর সরকারি কোষাগারে জমা দিতে না পারলে জরিমানা কতো দিতে হবে সে সম্পর্কে রয়েছে বিস্তারিত আলোচনা এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই লেখক উদাহরণসহ আলোচনা করেছেন। উৎসে আয়কর এবং ভ্যাট সম্পর্কে আপনি হাতে-কলমে এই বইটি থেকে শিখতে পারবেন। তাই বইটি প্র্যাক্টিকাল গাইড হিসেবে আপনার কাজে আসবে। উৎসে আয়কর ও ভ্যাট কর্তনের হার, ট্র্যাজারি চালান, মূসক-৬.৩ এবং মূসক ৬.৬ কীভাবে পূরণ করতে হবে তা বইটিতে ধাপে ধাপে আলোচনা করেছেন।

ট্যাক্স কমপ্ল্যায়েন্স ২০২১: ইউর কমপ্লিট গাইড ফর বিজনেস ইন বাংলাদেশ

কোম্পানি ট্যাক্স রিটার্ন ছাড়াও সারা বছর ধরে কিছু বিবরণী বা রিটার্ন ট্যাক্স সার্কেলে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাখিল করতে হয়। যেমন, প্রতি মাসে উৎসে কর কর্তনের উপর দুইটি বিবরণী দাখিল করতে হয়। আবার ভ্যাট রিটার্নও দাখিল করতে হয়। তার আগে উৎসে কর কর্তন এবং ভ্যাট কর্তনের জন্য উৎসে কর কর্তন সনদও ইস্যু করতে হয়। ‘ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স ২০২১’ বইটিতে লেখক এসব গুরত্বপূর্ণ বিষয় বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

মাসিক ভিত্তিতে রিটার্ন বা বিবরণী দাখিল করার পাশাপাশি তিন মাস অন্তর অন্তর বছরে চারবার অগ্রিম কর জমা দিতে হয়। কীভাবে অগ্রিম কর গণনা করতে হয় এবং জমা না দিলে কতো জরিমানা দিতে হয় তা উদাহরণসহ বইটিতে দেখানো হয়েছে। প্রতিটি রিটার্ন বা ফরম যেমন বইটিতে অর্ন্তভুক্ত আছে আবার তেমনি কীভাবে আপনি তা পূরণ করবেন সে সম্পর্কে রয়েছে আলোচনা।

এছাড়া আরও কিছু ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স রয়েছে যা একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আয়কর আইন অনুযায়ী মেনে চলতে হয়। এগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ট্যাক্স সার্কেলে দাখিল করতে না পারলে কী জরিমান রয়েছে এবং তা কীভাবে গণনা করতে হয় তা উদাহরণসহ দেখানো হয়েছে। তাই ‘ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স ২০২১’ বইটি আপনার কমপ্লিট গাইড হিসেবে কাজে দিবে।

বই দুটো প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা রুটস। ট্যাক্স ডিডাকশন ২০২১ বইটির দাম ৩৬০ টাকা এবং ট্যাক্স কমপ্ল্যায়েন্স ২০২১ বইটির দাম ২৮০ টাকা। বইগুলো রকমারি ডট কম, লিটন পাবলিকেশনসহ বিভিন্ন বইয়ের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে।

বই দুটির লেখক জসীম উদ্দিন রাসেল দি ইন্সটিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অফ বাংলাদেশ (আইসিএবি)-র ফেলো মেম্বার। তিনি ট্যাক্স কনসালট্যান্ট হিসেবে কোম্পানির ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট, ট্যাক্স অ্যাডভাইসরি, ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স ইত্যাদি কাজে সহায়তা দিয়ে থাকেন।

এএইচ/