ঢাকা, শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১

যে কারণে না খেলেই পাকিস্তান ছাড়ল নিউজিল্যান্ড

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৫২ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ শুক্রবার

নিউজিল্যান্ড দল

নিউজিল্যান্ড দল

নিরাপত্তার কারণে পাকিস্তান সফর বাতিল করে দিল নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল। আজ (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করার সূচি ছিলো কিউইদের। কিন্তু প্রথম ওয়ানডে শুরুর কিছুক্ষণ আগেই সফর বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় কিউই টিম ম্যানেজমেন্ট। সফরে তিন ওয়ানডের পর পাঁচ ম্যাচের  টি-টোয়েন্টি সিরিজও খেলার কথা ছিল তাদের।  

এদিন বিকেলেই পাকিস্তান সফর বাতিলের খবর নিশ্চিত করেছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট (এনজেডসি)। এক বিবৃতিতে এনজেডসি জানিয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে পাকিস্তানে নিরাপত্তাজনিত যে হুমকির খবর তাদের কাছে আছে, এরপর এ সফর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

এনজেডসি জানায়, ‘নিউজিল্যান্ড সরকার নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক করার পর ব্লাকক্যাপসরা পাকিস্তান সফর বাতিল করেছে। রাওয়ালপিন্ডিতে আজ তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে হওয়ার কথা ছিল। পাকিস্তানে নিরাপত্তার অবনতি হওয়ায়, মাঠে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের নিরাপত্তা কর্মকর্তার পরামর্শের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, নিউজিল্যান্ড এ সফর চালিয়ে যাবে না।’

অন্যদিকে, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) বলছে, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড আজ আমাদের জানিয়েছে, নিরাপত্তা নিয়ে তাদের সরকার জাতীয় দলকে সতর্ক করেছে। তাই সফর স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিউইরা।’

তবে নিরাপত্তাজনিত কোনো হুমকি নিউজিল্যান্ডকে দেয়া হয়েছে বলে কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই বলেই দাবি করেছে পিসিবি। তারা জানায়, ‘পিসিবি ও পাকিস্তান সরকার প্রতিটা সফরকারী দলের জন্যই পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকেও আমরা একই নিরাপত্তা দিয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে যে, বিশ্বের অন্যতম সেরা গোয়েন্দা সংস্থা পাকিস্তানের আছে। সফরকারী দলের উপর কোনো হুমকি নেই।’

তা সত্ত্বেও হঠাৎ করেই নিউজিল্যান্ড সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানায় পিসিবি। গণমাধ্যমকে বোর্ডটি আরও বলেছে, ‘নিউজিল্যান্ড দলের সাথে থাকা নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পুরোটা সময় পাকিস্তান সরকারের দেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। তবে হঠাৎ করে নিউজিল্যান্ডের এমন সিদ্ধান্তে হতাশ পিসিবি।’

এত আয়োজনের পরও হুট করে সিরিজ না খেলা পিসিবির জন্য যে বড় ক্ষতি- সেটাও বুঝতে পারছেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী ডেভিড হোয়াইট। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি আয়োজক হিসেবে এটা পিসিবির জন্য বড় একটি ধাক্কা। তবে খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সিরিজ বাতিল করাই একমাত্র বিকল্প পথ বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

দলের পাকিস্তান সফর বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী হিথ মিলসও। তিনি বলেন, ‘এই সফরের পুরো প্রক্রিয়ায় আমরা ছিলাম এবং এই সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করছি। ক্রিকেটাররা নিরাপদ। সবাই তাদের জন্য কাজ করছে।’

এদিকে, দীর্ঘ ১৮ বছর পর সফরে আসে নিউজিল্যান্ড। সেই ২০০২ সালে পাকিস্তান সফরে এসে করাচিতে নিউজিল্যান্ড টিম হোটেলের বাইরে বোমা বিস্ফোরণের কারণে মাঝপথেই পাকিস্তান সফর শেষ করেছিলো কিউইরা। ঐ সফরে এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হেরেছিলো নিউজিল্যান্ড।

সফরে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও খেলার কথা ছিল তাদের। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে ঐ সফরের বাকী পাঁচ ওয়ানডে খেলতে আবারো পাকিস্তানে যায় নিউজিল্যান্ড। আর সেটাই ছিলো কিউইদের সর্বশেষ পাকিস্তান সফর। 

এরপর গত ১৮ বছরে আর পাকিস্তান সফর করা হয়নি নিউজিল্যান্ডের। কারণ ২০০৯ সালে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের কাছে সফররত শ্রীলঙ্কা দলকে বহনকারী বাসে জঙ্গী হামলা হয়। সেই হামলার পর আন্তর্জাতিক দলগুলো পাকিস্তান সফরে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর বাধ্য হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিজেদের হোম ভেন্যু বানাতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। 

আর এবার নিউজিল্যান্ডের এমন সিদ্ধান্তে বড় ধরনের ধাক্কাই খেল পিসিবি। নিউজিল্যান্ডের পর ইংল্যান্ড দলের পাকিস্তান সফর করার কথা ছিলো। এখন সেটিও অনিশ্চিয়তার মুখে পড়বে বলে ধারণা করছে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) জানিয়ে দিয়েছে, পাকিস্তানে সিরিজ খেলতে যাওয়ার বিষয়ে তারা পর্যালোচনা করবে, তারপর ২৪-৪৮ ঘণ্টা পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানাবে তাঁরা।

ইসিবি-র তরফে জানানো হয়েছে, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে নিউজিল্যান্ড যে পাকিস্তান সফর বাতিল করে দিয়েছে, সেই সম্পর্কে আমরা সবটাই জানি। আমাদের সিকিউরিটি টিম পাকিস্তানে রয়েছে, তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি, যাতে পুরো পরিস্থিতিটা বুঝতে পারি। ইসিবি বোর্ড পরবর্তী ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে যে, পাকিস্তান সফরে আদৌ দল পাঠানো হবে কিনা।’ 

এই নিরাপত্তাজনিত কারণেই ২০০৫ সালের পর থেকে পাকিস্তানে যায়নি ইংল্যান্ড। কিন্তু ২০২০ সালের গ্রীষ্মে যখন করোনার জেরে লকডাউন চলছিল, তখন পাকিস্তান ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়েছিল। তাতে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড কিছুটা হলেও লাভবান হয়েছিল। তাদের সাহায্য হয়েছিল। সেই সৌজন্যের খাতিরেই বিশ্বকাপের আগে রাওলপিণ্ডিতে গিয়ে ১৩ এবং ১৪ অক্টোবর দু'টি টি-টোয়েন্টি খেলতে রাজি হয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু নিরাপত্তার কারণেই এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাও।

এনএস//