নাচে-গানে ওঁরাও সম্প্রদায়ের কারাম পূজা উদযাপন
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:৩৮ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ শনিবার
ঠাকুরগাঁওয়ে ক্ষুদ্র-নৃতাত্বিকগোষ্ঠি ওঁরাও সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় কারাম পূজা ও সামাজিক উৎসব উদযাপিত হয়েছে। মাদল, ঢোল, করতাল ও ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয় এই পূজা উৎসব। বিপদ-আপদ ও অভাব-অনটন থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে মূলত এই কারাম পূজা পালন করা হয়।
আজ শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বরে) দুপুরে আবারও নেচে-গেয়ে ও পূজা অর্চনার মধ্যদিয়ে স্থানীয় নদীতে কারামের ডালটি বিসর্জন দিয়েই শেষ হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
এর আগে শুক্রবার রাত ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর পাঁচপীরডাঙ্গা গ্রামে উড়াও মহল্লায় কারাম পূজা উদযাপন কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ জেলা শাখা ও ইএসডিও প্রেমদীপ প্রকল্পের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব।
উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান। গেস্ট অব অনার ছিলেন পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন, বিশেষ অতিথি ছিলেন নারী কল্যাণ ক্লাবের সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন।
কারাম পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিশ্বানাথ কেরকাটার সভাপতিত্বে উৎসব অনুষ্ঠানে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নরেন চন্দ্র পাহান, জেলা যুবলীগের সভাপতি সমীর দত্ত, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুব আলম মুকুল, জাতীয় পরিষদের উপদেষ্টা এডভোকেট ইমরান চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কারাম একটি গাছের নাম। ওড়াঁও জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা গাছটিকে পবিত্র এবং মঙ্গলেরও প্রতীক মনে করেন। প্রতিবছর বাংলা আশ্বিন মাসের শুরুতে এ উৎসবকে ঘিরে ঠাকুরগাঁওয়ে ওড়াঁও সম্প্রদায়ের বসবাসরত এলাকাগুলো মুখরিত হয়ে উঠে।
কথিত আছে আদিবাসীদের দুই সহোদর ধর্মা ও কর্মা। ধর্মা কারাম গাছকে পূজা করতো। আর সেই গাছ একদিন কর্মা তুলে নিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। তখন নানা বিপদ-আপদ ও অভাব দেখা দিলে আবার সেই গাছ খুজেঁ আনা হয়। তখন থেকে সেই গাছকে বিশ্বাস করে ধর্ম পালন করায় সকল বিপদের হাত থেকে রক্ষা পান ধর্মা। আর কর্মা ধর্ম পালন না করায় ক্ষতির সম্মুখিন হয়।
উৎসবের প্রথম দিন ওড়াঁও সম্প্রদায়ের লোকজন উপবাস করে কারাম গাছের ডাল কেটে আনেন। সেই ডাল তাদের স্থায়ী বা অস্থায়ী পূজা মণ্ডপে রেখে পূজা-অর্চনা, নাচ-গান ও গল্প বলার মধ্য দিয়ে এই উৎসব পালন করেন। এরপরই আমন্ত্রিত অতিথি ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি, সাংস্কৃতিকর্মী, ওঁরাও সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোর এবং অসংখ্য নারী-পুরুষ।
এএইচ/