ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

২০ দিন ধরে বেনাপোলে আটকে আছে ৫ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:১০ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ বুধবার

গত ২০ দিন ধরে ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রফতানি পণ্য বোঝাই হাজার হাজার ট্রাক বেনাপোল বন্দরসহ আশে পাশের প্রধান সড়ক এলাকায় অবস্থান করছে। সংকীর্ণ সড়কে পাশাপাশি ট্রাক রেখে দেওয়ার ফলে এ বন্দর এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র যানজটে বেনাপোল স্থলবন্দর কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে। 

বেনাপোল স্থলবন্দরের চেকপোস্ট রফতানি গেট, টার্মিনাল, বেনাপোল পৌর টার্মিনাল, বন্দর, কাস্টমস এলাকা, বাজারসহ যশোর-বেনাপোলের প্রধান সড়ক হয়ে শার্শা উপজেলা সদর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক যানজটে এলাকাবাসীসহ পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হতে
হচ্ছে।

দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের পেট্রোপোল বন্দরের জায়গা সংকটের কারণ দেখিয়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ভারত। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এই সংকট কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হচ্ছে। ভারত প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ৩৫০ থেকে ৪০০ ট্রাক পণ্য বাংলাদেশে রফতানি করলেও বাংলাদেশি পণ্য নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা বরাবরই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ভারত আগে ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক রফতানি পণ্য গ্রহণ করলেও বর্তমানে ৯০ থেকে ১০০ ট্রাক রফতানি পণ্য গ্রহণ করছে। 

দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা বিরাজ করলেও প্রশাসনের কোন কর্তাব্যক্তিকে তা নিরসনে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। দফায় দফায় আলোচনা করেও কোন সুরাহা করা যায়নি যানজটের। এতে রফতানি বাণিজ্যেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিদিন এক একটি ট্রাককে পণ্য পরিবহনের ভাড়ার পাশাপাশি ১৬শ‘ টাকা করে ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে। সময় মতো এসব পণ্যবাহী ট্রাক গন্তব্যে যেতে না পারায় লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এদেশের রফতানিকারকরা। এ নিয়ে বন্দর ও আশেপাশের এলাকায় বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষ ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন।

 বন্দর সংশ্লিস্টরা জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে রফতানি বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ ট্রাক রফতানি পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাংলাদেশি ট্রাক আসছে বেনাপোল বন্দরে। ভারত নিচ্ছে ১০০ ট্রাক। ১০০ থেকে দেড়শ‘ ট্রাক প্রতিদিন বাড়তি থেকে যাচ্ছে। রফতানি পণ্যের এসব ট্রাক রাখার মতো টার্মিনাল বা স্থান বেনাপোল বন্দরেও নেই। এ কারণে বন্দরের আশপাশের শাখা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে ট্রাকগুলো। এতে বন্দর এলাকায় ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে ট্রাকের জটলার কারণে বেনাপোল চেকপোস্ট রফতানি গেট থেকে শার্শা উপজেলা সদর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কে স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও পাসপোর্টধারী যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। 

আটকে থাকা রফতানি পণ্যবাহী ট্রাকের কারণে বেনাপোল এলাকার বিভিন্ন সড়কে রিকশা-ভ্যানও যাতায়াত করতে পারছে না। অনেকে পায়ে হেঁটে চেকপোস্টে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে রোগী, নারী ও শিশুদের কষ্টের শেষ নেই। মুমুর্ষ কোন রোগী নিয়ে একটি এ্যাম্বুলেন্স যাওয়ারও উপায় নেই। এ অবস্থায় বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন সভা করে এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরে রফতানি বাণিজ্য রাত ১১টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে, তবু সমস্যার কোন সুরাহা হয়নি। দিন দিন তা আরো প্রকট আকার ধারন করেছে। 

যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ওপর যত্রতত্র পণ্যবোঝাই প্রায় পাঁচ হাজার ট্রাক ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। জায়গার অভাবে বেনাপোল বন্দর অভ্যন্তরে ট্রাকগুলো যেমন রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তেমনি জায়গা না থাকায় ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দর থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাকও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে না। দীর্ঘদিন ধরে যানজট বেনাপোল স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানি ব্যাহত করলেও সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। যানজট নিরসনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বেনাপোলে স্থায়ী ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন দাবি জানিয়েছেন।

বেনাপোল ট্রাক-লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহীন জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে সয়াবিনের ভূষি, পাট ও পাটজাত দ্রব্য এবং গার্মেন্টস, সাবান, ব্যাটারি, গার্মেন্টস ঝুট ভারতে রফতানি হচ্ছে। প্রতিদিন এসব পণ্য নিয়ে ২০০-২৫০ ট্রাক ভারতে প্রবেশের জন্য বেনাপোল বন্দরে আসছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মাত্র ১০০ ট্রাক গ্রহণ করছে। এ কারণে বেনাপোল বন্দর এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া বেনাপোল বন্দরে রফতানি পণ্যের ট্রাক রাখার কোনও টার্মিনাল নেই।

বেনাপোল বন্দরের উপ পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ভারতের পেট্রাপোল বন্দর হয়ে পণ্য আমদানি বাড়ার পাশাপাশি পণ্য রফতানিও বেড়েছে দ্বিগুণ। শত শত পণ্য বোঝাই ট্রাক ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় বেনাপোল বন্দর, বন্দরের আশেপাশে ও প্রধান সড়কে অবস্থান করছে। এতে বন্দর এলাকায় আমদানি-রফতানি পণ্য খালাস ব্যাহত হচ্ছে। 

তিনি আরও জানান, রফতানি বাণিজ্য আরও গতিশীল করতে সম্প্রতি ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু ওপারের টার্মিনালে জায়গা না থাকায় তারা বেশি ট্রাক নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
কেআই/