‘এসপির কাছে কেন অভিযোগ করেছিস’
বেনাপোল প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৭:২০ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার
ভাঙা হাত ও পা নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ভুক্তভোগী ওবায়দুর রহমান
যশোরের শার্শায় একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ত্রাসী তৎপরতার বিষয়ে পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে অভিযোগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে এক যুবকের হাত-পা ভেঙে দিয়েছে অভিযুক্তরা। এ ব্যাপারে শার্শা থানায় নতুন করে আরও একটি অভিযোগ করা হয়েছে।
তবে, দ্বিতীয় দফায় মামলার পর প্রাণ সংশয়ে রয়েছেন বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন ভুক্তভোগীর পরিবার। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপারের দৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
গত ৩১ আগস্ট এসপির কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগে শার্শা উপজেলার পন্ডিতপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে ওবায়দুর রহমান (৪৫) জানান, শার্শার গোর্কণ এলাকার নিজাম বুড়োর জামাই সিদ্দিক হোসেন, সিদ্দিক হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, হারুন বুড়োর ছেলে মোজাম্মেল ও ডিহির শহিদুল ইসলাম মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। সিদ্দিক হোসেন মাদক কারবারে লিপ্ত থাকার পাশাপাশি পন্ডিতপুর গ্রামের ওবায়দুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা বেগমকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। এসব ঘটনায় প্রতিবাদ করায় গত ২৬ আগস্ট ওবায়দুল ইসলামকে মারপিট করে সিদ্দিক। এসময় তার স্ত্রী নাজমা বেগম এগিয়ে আসলে তাকেও মারপিট করাসহ তাঁর শ্লীলতাহানী ঘটায়।
এই ঘটনায় ওই দিনই থানায় লিখিত অভিযোগ দেন নাজমা বেগম। তদন্তের জন্য গোড়পাড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ জহুরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করে। পুলিশ আসার পর ওই চক্রটি আবার তাদের উপর হামলা করে। এছাড়া অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এরপর শহিদুল ইসলাম ডিহির একজনকে দিয়ে হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলার হুমকি দেয়। এই অভিযোগটি তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার দায়িত্ব দেন নাভারণ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরানকে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওই ঘটনা তদন্তে ওবায়দুর রহমানের পরিবারকে তার অফিসে আসতে বলেন গত ১৭ সেপ্টেম্বর। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে যাওয়ার সময় ওই দিন সকাল সাড়ে ৯টায় পথিমধ্যে সাড়াতলা বাজারে আনিছুর ডাক্তারের চেম্বারের সামনে পৌঁছলে ডিহির রনির ছেলে বহু বিতর্কিত শহিদুল এসে ওবায়দুর রহমানের উপর হামলা চালায়। ‘পুলিশ সুপারের কাছে কেন অভিযোগ করেছিস’ বলেই তাকে মারপিট করতে থাকে। এছাড়া লাঠি ও রড পেটা করে হাত-পা ভেঙে দেয়।
ওই সময় শহিদুলের সঙ্গে মারপিটে যোগ দেয় পন্ডিত পুকুর গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে ইউনুছ আলী, হারুন বুড়োর ছেলে মোজাম্মেল হোসেন, জামাই সিদ্দিক হোসেন, সিদ্দিক হোসেনের ছেলে সাব্বির হোসেন।
এ ঘটনায় চিকিৎসা নেয়ার পর গত ২০ সেপ্টেম্বর থানায় উল্লেখিতদের বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেন ওবায়দুর রহমান। অভিযোগ তদন্ত করছেন এসআই বাবলু।
ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন স্থানীয় চাপ আছে, থানায় মামলা হবে না, আদালতে গিয়ে মামলা করতে হবে। এ ঘটনায় চরম হতাশা আর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তারা। এমনকি প্রাণ সংশয়ে রয়েছেন বলেও জানান তারা।
এ ব্যাপারে নাভারণ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি তিনি অবগত আছেন। কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি ভুক্তভোগী পরিবারকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্যে বলেন।
এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বাবলু জানিয়েছেন, তিনি তদন্ত করেছেন। অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছেন। থানায় অবশ্যই মামলা রের্কড হবে। ডিউটি অফিসারকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। তবে আদালতে মামলা করতে বলেছেন ভুক্তভোগীর এমন অভিযোগ সত্য নয়।
এনএস//