ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ভিনদেশী তারার মুলুকে নতুন পৃথিবী খুঁজছে নাসা!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:২১ এএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ শনিবার

ঠিকঠাক ভাবে বাঁধা নেই তিনটি তার? তা হলে তিন তারের যন্ত্র বাজবে কী ভাবে? পৃথিবীও তো তিন তারেই বাঁধা। স্থল, জল, আর আকাশ (বায়ুমণ্ডল)। এই তিন তার ঠিকভাবে বাঁধা না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের জন্মই হত না। হলেও সেই প্রাণ টিকে থাকতে পারত না।

এই অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডে ধূলিকণার চেয়েও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পৃথিবীতেই শুধু প্রাণ থাকতে যাবে কেন? কেনই বা পুরো জগত তার বাকি সুবিশাল অংশের অপচয় ঘটাবে আর কোথাও কোনও ধরনের প্রাণের জন্ম না দিয়ে?

এই সঙ্গত প্রশ্নটা বিজ্ঞানীদের মনে অনেক দিন ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে বলেই তো পৃথিবীর মতো তিন তারে বাঁধা আরও বহু ‘পৃথিবী’র খোঁজ শুরু হয়েছে জোর কদমে।

কোথায় সেই প্রাণ? আরও প্রাণ? আরও আরও ‘পৃথিবী’?

গত শতাব্দীর নয়ের দশকে প্রথম ভিনগ্রহ আবিষ্কারের পর থেকেই বিজ্ঞানীরা আরও আরও প্রাণের সন্ধানে হন্যে হয়ে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে আবিস্কৃত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ভিনগ্রহের অনেকগুলিতেই। সেই সব ভিনগ্রহ তাদের নক্ষত্রদের থেকে ঠিক কতটা দূরত্বে থাকলে তাদেরও থাকতে পারে পৃথিবীর মতোই তিনটি তার। যে দূরত্বকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, ‘গোল্ডিলক্‌স জোন’।

প্রথম ভিনগ্রহ আবিষ্কারের পর প্রায় তিন-তিনটি দশক পার হতে চলল। এখনও সেই আরও প্রাণ, অন্য ধরনের প্রাণ খোঁজার তাগিদে ভিনগ্রহের ভিন মুলুক কোনও বাতাস জোগাতে পারেনি।

ব্রহ্মাণ্ডের কোনও সীমা পরিসীমা নেই। সে তো অতল, অনন্ত। তার আর কোন কোন দিকে আর কোন কোন মুলুকে প্রাণের খোঁজতল্লাশ করা গেলে প্রাণের অস্তিত্বের গন্ধ পাওয়া যাবে এ বার তা বেছে নেওয়ার সময় এসেছে।

আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এ বার প্রাথমিক ভাবে বেছে নিয়েছে পৃথিবীর মোটামুটি কাছেপিঠে থাকা কয়েকটি ভিন‌ তারার মুলুক (‘স্টার সিস্টেম’)। যেখানে আর একটি বা আরও অনেকগুলি ‘পৃথিবী’র লুকিয়ে থাকার সম্ভাবনা যথেষ্টই বলে মনে করছে নাসা।

সেই সব ভিন মুলুকের নাম কী কী?

নাসা সেই ভিনদেশী তারার ২০টি মুলুককে প্রাথমিক ভাবে বেছে নিয়েছে।

এদের মধ্যে ১৭টি ভিনদেশী তারার মুলুক বা নক্ষত্রমণ্ডলে কী ভাবে গ্রহ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা ধরা পড়েছে চিলিতে বসানো সুবিশাল ‘আটাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে (আলমা)’ টেলিস্কোপে। কোনও নক্ষত্রমণ্ডলে এই তারা তৈরির প্রাথমিক প্রক্রিয়া চলে ১ কোটি বা তারও বেশি বছর ধরে।

আটাকামার পরের কাজ সারবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ
তবে ভূপৃষ্ঠে বসানো আটাকামার পক্ষে অন্য তারার মুলুকে গ্রহ তৈরির প্রক্রিয়ার উপর সার্বিক ভাবে নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। যে অত্যন্ত জমাট বাঁধা বিভিন্ন মৌল ও জৈব অণুর গ্যাসের মেঘের কুণ্ডলী ওই অন্য তারাদের সাম্রাজ্যে নতুন নতুন গ্রহ তৈরির তোড়জোড় শুরু করেছে তার শুধুই বাইরের অংশের আচার, আচরণ, রদবদল ধরা পড়েছে শুধু আটাকামা টেলিস্কোপে।

আরও দূরে, আরও গভীরে…

কিন্তু আরও জানতে বুঝতে হবে বিজ্ঞানীদের। তাই এখন তাঁদের মন্ত্র- ‘আরও গভীরে যাই’।

সেই গভীরে যাওয়ার জন্যই মহাকাশে এ বার হাবলের চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী টেলিস্কোপ পাঠাচ্ছে নাসা। ডিসেম্বরে উৎক্ষেপণ করা হবে সেই ‘জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ’। যে টেলিস্কোপ ওই সব ভিনদেশী তারার মুলুকে বিভিন্ন মৌল ও জৈব অণুর গ্যাসের মেঘের কুণ্ডলীর ভিতরের অংশে কী কী রদবদল ঘটছে, তা জানতে পারবে। সেই সব তথ্য জানাতে পারবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের।

যা বিশ্লেষণ করে ওই সব মুলুকে আরও ‘পৃথিবী’-র হদিশ মেলার পথ খুলে যেতে পারে বিজ্ঞানীদের সামনে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
এমএম/