বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অচল চীন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:২৩ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার
চীনে গত কয়েকদিন ধরেই বড় রকমের বিদ্যুৎ সঙ্কট চলছে। বিশেষ করে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে। বিদ্যুতের যে এরকম ঘাটতি হতে পারে সেবিষয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি।
পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে কিছু কিছু এলাকায় হাসপাতাল ও কারাখানার মতো জরুরি স্থাপনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক বাসা বাড়িতেও এখন বিদ্যুৎ নেই।
বিশ্বের বৃহত্তম একটি ব্যাঙ্ক গোল্ডম্যান স্যাক্স এই বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে চীনের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে।
চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি।
গোল্ডম্যান স্যাক্স বলছে, তারা আশা করেছিল এবছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু এখন তারা বলছে এই হার হবে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। তাদের হিসেবে বলা হচ্ছে এই বিদ্যুৎ সঙ্কটের প্রভাব পড়েছে চীনের ৪৪ শতাংশ শিল্প কারখানায়।
এর আগে আরো কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান - জাপানের নমুরা, মরগ্যান স্ট্যানলি এবং চায়না ইন্টারন্যাশনাল ক্যাপিটাল কর্পোরেশন - চীনের প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে তাদের পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছিল।
কল কারখানার পাশাপাশি লাখ লাখ মানুষ গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ ছাড়াই বসবাস করছে। লিয়াওনিং, জিলিন এবং হেইলংজিয়াং প্রদেশের বাসিন্দারা সোশাল মিডিয়া ওয়েইবোতে এই সঙ্কটের ব্যাপারে সরব হয়েছেন। তাদের অভিযোগ: বাড়িতে হিটিং চলছে না, ভবনের লিফ্ট বন্ধ, এমনকি রাস্তার ট্রাফিক লাইটও ঠিক মতো কাজ করছে না।
কিছু কিছু কর্মকর্তা এজন্য সারা দেশে কয়লার ঘাটতিকে দায়ী করছেন। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কয়লার ব্যবহার কমানোর অঙ্গীকার করেছেন - যার ফলে স্থানীয় সরকারগুলোর ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় এর সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
চীনের একটি বিদ্যুৎ কোম্পানি সতর্ক করে দিয়েছে যে এই ঘাটতি আগামী বছরের বসন্ত পর্যন্ত চলতে পারে। তারা বলছে, এটাই হয়তো চীনের "নিউ নরমাল" বা "নতুন স্বাভাবিক" অবস্থা। তবে পরে কোম্পানির এই পোস্টটি ডিলিট করে ফেলা হয়।
বিদ্যুতের এই ঘাটতি প্রথমে শুরু হয়েছিল সারা দেশের কারখানাগুলোতে - যার ফলে সেখানে উৎপাদন ব্যাহত হয়। কিন্তু পরে বিভিন্ন শহরের বাসা বাড়িতে বিদ্যুতের সঙ্কট দেখা দেয়।
কতো বিস্তৃত পরিসরে বিদ্যুতের সঙ্কট তৈরি হয়েছে সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে যে তিনটি প্রদেশে বিদ্যুতের ঘাটতি প্রকট, সেগুলোতে ১০ কোটি মানুষের বাস।
লিয়াওনিং প্রদেশে একটি কারখানায় বিদ্যুতের অভাবে হঠাৎ করেই ভেন্টিলেটর বন্ধ হয়ে গেলে ২৩ জন কর্মী কার্বন মনোক্সাইডে আক্রান্ত হয়। তাদেরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই এমন বাড়ি ঘরে হিটিং-এর জন্য স্টোভ ব্যবহার করার পর আরো কিছু লোককেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়াতে যেসব ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে তার একটিতে দেখা যাচ্ছে শেনিয়াং-এ রাস্তার বাতি বন্ধ করে রাখায় সম্পূর্ণ অন্ধকারের মধ্যে ব্যস্ত একটি হাইওয়ের একপাশ দিয়ে গাড়ি চলছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে এই পরিস্থিতিকে পার্শ্ববর্তী উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেও তুলনা করা হচ্ছে। জিলিন প্রদেশের সরকার বলছে কয়লার ঘাটতি মোকাবেলায় তারা ইনার মঙ্গোলিয়া থেকে কয়লা আনার উদ্যোগ নিয়েছে।
দশটির মতো প্রদেশের কলকারখানায় বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিষয়ে কিছু বিধি-নিষেধও আরোপ করা হয়েছে। সূত্র: বিবিসি
এসি