ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিমা তৈরির ধুম, কারিগররা হতাশ

মীর মো. শাহীন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে

প্রকাশিত : ০৯:৫২ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার

প্রতিমায় রঙের কাজ করছেন এক কারিগর

প্রতিমায় রঙের কাজ করছেন এক কারিগর

আকাশজুড়ে শরতের ভেলা। দিগন্তজুড়ে কাঁশফুল জানান দিচ্ছে আসছে শারদীয় দুর্গোৎসব। আর কয়েক সপ্তাহ পরই জমে উঠবে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব। প্রতিবছরই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জমজমাটভাবে এই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। তবে করোনার কারণে গতবারের মতো এবারও আনন্দ উৎযাপনে কিছুটা ভাটা পড়তে পারে। 

পূজা উৎসবে যেমন করোনার প্রভাব পড়েছে, তেমনি প্রভাব পড়েছে প্রতিমা কারিগরদের ওপরও। পূজাকে সামনে রেখে প্রতিমা তৈরির ধুম পড়লেও মূল্য নিয়ে হতাশা রয়েছে কারিগরদের মধ্যে।

এ বছর জেলায় ৫৮০ মন্ডপে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সে লক্ষ্যে প্রতিমা তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা কারিগররা। এখন পর্যন্ত প্রতিমা তৈরির প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে, চলছে রঙ-তুলির কাজ। 

সরেজমিন জেলা শহরের কান্দিপাড়া ও ভাদুঘর পাল পাড়াতে গিয়ে দেখা যায়, সারি-সারি প্রতিমা দাঁড় করানো আছে। দেবী দুর্গার সঙ্গে রয়েছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষী ও সরস্বতী। একদিকে চলছে প্রচণ্ড রোদে এই প্রতিমাগুলো শুকানোর কাজ, অন্যদিকে রঙ-তুলির আঁচড়ে প্রাণবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে প্রতিমাগুলো। 
প্রতিমা কারিগর দুলাল পাল বলেন, ৩৫ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। এবার ৩২টি মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। সময়মত এসব প্রতিমা মন্ডপে পৌঁছে দিতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। তবে করোনার আগে প্রতিটি প্রতিমা তৈরি করে ৪০-৭০ হাজার টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু চলমান পরিস্থিতির কারণে প্রতিমার মূল্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্য বছর প্রতিমার ভালো মূল্য পেলেও এবার তেমন ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

আরেক কারিগর ঝন্টু পাল বলেন, তেমন বেশি লাভ না হলেও বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছি। দুর্গা পূজা ছাড়াও বিভিন্ন পূজার প্রতিমা তৈরি করে থাকি। এবারের দুর্গা পূজাকে সামনে রেখে ১৭টি প্রতিমার কাজ পেয়েছি। প্রতিটি প্রতিমা তৈরিতে এবার মাত্র ২০-৩০ হাজার টাকা পাব। 
কারিগর নিকিল পাল বলেন, আমাদের হাতের তৈরি প্রতিমা কেনার জন্য জেলা ও জেলার বাইরে থেকেও ক্রেতারা ছুটে আসছেন। কিশোরগঞ্জ থেকে আসা প্রতিমা তৈরির শ্রমিক লিটন পাল বলেন, আমরা প্রতিমা তৈরির জন্য দুই মাস আগেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসেছি। প্রতিদিন কাজ করে গড়ে ৫০০ টাকা মজুরি পাচ্ছি। 

এদিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সভাপতি সোমেশ রঞ্জন রায় বলেন, জেলায় এ বছর প্রায় ৫৮০টি মন্ডপে দুর্গোউৎসব অনুষ্ঠিত হবে। তবে করোনা পরিস্থির কারণে প্রতিটি মন্ডপে যেন স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত থাকে। সেজন্য পূজা মন্ডপ কৃর্তপক্ষদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পূজা মন্ডপে ঢোকার সময় যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক ও হাত ধুয়ে সবাই মন্ডপে প্রবেশ করে সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ মোজাম্মেল হক রেজা বলেন, পূজা উপলক্ষে আমাদের পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হবে। যাতে করে কোনো জায়গায় সমস্যা না হয়। হিন্দু ধর্মালম্বী লোকজন যাতে নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপন করতে পারে, সেই দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, পঞ্জিকা মতে এ বছর দেবী দুর্গা আসবেন ঘোটকে চড়ে। আর গমন করবেন দোলায় চড়ে।

এনএস//