ঢাকা, শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১

দেশ ত্যাগ করতে চাইলেও সীমান্তে আটকে যাচ্ছেন আফগানরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:০৯ পিএম, ৪ অক্টোবর ২০২১ সোমবার

দেশে চলমান চরম দুর্দশা থেকে বাঁচতে আফগানিস্তানের হাজার হাজার নাগরিক দেশ ছেড়ে পালাতে চাইছেন। তারা মূলত পাকিস্তানের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত অতিক্রম করতে চাচ্ছেন। কিন্তু সীমান্তের এপারে তালেবান ও অন্যপ্রান্তে পাকিস্তানের বাঁধার কারণে তাদের এ প্রচেষ্টা থেমে যাচ্ছে।

এমনই একজন ভুক্তভোগি জাকারিউল্লাহ। তিনি ছয়বারেরও বেশি আফগানিস্তানের সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করেছেন; কিন্তু প্রতিবারই তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অনেক সময় তাকে সহিংসতারও মুখোমুখি হতে হয়েছে। হতাশ জাকারিউল্লাহ পাকিস্তান থেকে মাত্র কয়েকশ মিটার দূরে স্পিন বলডাক অঞ্চলের একটি শহরের নোংরা রাস্তায় বসে নিজের কষ্টকর অভিজ্ঞতা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বর্ননা করেন। 

২৫ বছর বয়সী জাকারিউল্লাহ পেশায় একজন কৃষক এবং তিন সন্তানের বাবা। এএফপিকে তিনি বলেছেন, ‘তারা বলেছে শুধুমাত্র যাদের কাছে কাগজ রয়েছে তারাই যেতে পারবে। কিন্তু আমরা সীমান্ত অতিক্রম করতে চাই কাজের জন্য কারণ এখানে আমাদের জন্য কোন কাজ নেই।’

নতুন তালেবান শাসকরা আফগানদের দেশেই থাকার প্রতি জোর দিচ্ছেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি পুনঃনির্মানে তাদের কাজে লাগাতে চাইছেন। এ প্রসঙ্গে আফগানিস্তানের নাগরিক রহমাদিন ওয়ারদাক বলেছেন, ‘তারা জনসাধারণকে বলছে এটি তোমাদের দেশ। তাই তোমাদের দেশ ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে না।’ রহমাদিনও দেশ ছাড়তে চেয়েছেন কিন্তু তালেবানদের বাধার কারণে তা সম্ভব হয় নি। আফগানিস্তানের সীমান্ত থেকে একদিকে তালেবানরা যেমন তাদের দেশত্যাগের উদ্যেগকে বাধা দিচ্ছে অন্যদিকে পাকিস্তান সীমান্ত অঞ্চল চামান থেকেও আফগান নাগরিকদের সীমান্ত অতিক্রম করতে দেয়া হচ্ছে না।  

তালেবানদের সীমান্ত রক্ষী মোল্লা মৌলভী হাকার এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘প্রতিদিন আট হাজার থেকে নয় হাজার আফগান নাগরিক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই সীমান্ত অতিক্রম করতে চাইছেন। তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।’

অন্যদিকে কান্দাহার প্রদেশে কর্মরত তালেবান কর্মকর্তা মৌলভি নূর মোহাম্মদ সাইদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, কর্তৃপক্ষ ‘সাধারণ নাগরিক ও তাদের পরিবারকে দেশ ত্যাগ না করার অনুরোধ করেছেন। এররকম কিছু করলে আফগান সংস্কৃতির ওপর শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলবেন আপনি।’

সীমান্ত দিয়ে শুধুমাত্র দিনমজুর ও ব্যবসায়িদেরকে খুবই সংকীর্ণ একটি করিডোর দিয়ে কোনরকমে হামাগুড়ি দিয়ে পরবর্তী চেকপয়েন্টে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। ঐতিহ্যবাহী পাকুল টুপি পরিহিত এই দিনমজুর ও ব্যবসায়িদের ঘাড়ে বিশাল পণ্যের বোঝা থাকে; এসব নিয়েই অত্যন্ত কষ্টকরভাবে তাদেরকে চেকপয়েন্টের দিকে এগুতে হয়। দ্বিতীয় করিডোরটি বলা যায় খালিই থাকে। জরুরি চিকিৎসাসেবার জন্য কদাচিৎ বয়স্ক পুরুষ এবং নারীদের এ করিডোর দিয়ে যেতে দেয়া হয়। 

কিন্তু গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পর দেশটির অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে এবং বিদেশি সহায়তাও বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় হাজার হাজার আফগান নাগরিক এখন দেশ ত্যাগ করতে চাইছেন। এর ওপর তীব্র খরার কারণে কৃষকরা ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না। কাজ ছাড়া দূর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন কৃষকরা। যেমন, কাবুলে ৬০০ কিলোমিটার কৃষিজমি থাকতেও কাজের খোঁজে পাকিস্তান যেতে চাইছেন জাকারিউল্লাহ। কিন্তু দেখা যাচ্ছে অন্য অনেকের মতো সীমান্ত অতিক্রমে বারবার ব্যর্থ হয়ে নিজের সামান্যতম সঞ্চয়টুকোও খুইয়ে বসেছেন জাকারিউল্লাহ। 

এরইমধ্যে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে আফগানিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ নাগরিকই দূর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছেন। 

জাতিসংঘের শরনার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তা সামি উল হক সীমান্তের ক্রসিং পয়েন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। তিনি বলেছেন,‘ শুরুতে অনেকেই সীমান্ত অতিক্রম করতে পেরেছেন। কিন্তু বর্তমানে দৈনিক ২৪ হাজারের মতো মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করতে ভীড় করছেন।’ আগস্টেও শেষ দুই সপ্তাহ সীমান্ত অতিক্রমে কিছু বিধিনিষেধ ছিলো কিন্তু এরপর তালেবান ও পাকিস্তানিরা চেপে বসেছে। 

ইউএনএইচসিআরের জেষ্ঠ্য ইমার্জেন্সি কর্মকর্তা ইসলামাবাদ থেকে এএফপিকে বলেছেন, ‘দেশের অভ্যন্তরে কোন পরিবর্তন হলে প্রচুর মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। এই মুহুর্তে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও অপেক্ষার মধ্যে রয়েছি।’

সূত্র: এএফপি

এসি