ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৯ ১৪৩১

জালিয়াতি করে বিপুল সম্পদের মালিক নকল নবিশ শফিক

সাইদুল ইসলাম

প্রকাশিত : ১২:৩৪ পিএম, ৬ অক্টোবর ২০২১ বুধবার | আপডেট: ১২:৩৬ পিএম, ৬ অক্টোবর ২০২১ বুধবার

একজন নকল নবিশ নকলের একটি পাতা লিখলে পাবেন ২৪ টাকা। কিন্তু গত ১২ বছরে একটি নকলও না লিখে অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক বেনে গিয়েছেন নরসিংদী সাব রেজিস্ট্রি অফিসের নকল নবিশ শফিকুল ইসলাম। এই শফিকুলের নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছে দলিল জালিয়াত সিন্ডিকেট। অভিযোগ আছে, তার সাথে দফারফা ছাড়া কোন দলিলই হয়না।

নরসিংদী সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দুই নকল নবিশ ও দলিল লেখকের অভিযোগ, এই রেজিস্ট্রি অফিসটা সম্পূর্ণভাবে নকল নবিশ শফিক চালায়। তার কথা ছাড়া সাব রেজিস্ট্রারও নড়তে পারে না, ডিস্ট্রিক রেজিস্ট্রারও নড়তে পারে না। শফিক যা বলে তাই। সে একা এই অফিসটি কন্ট্রোল করছে।

এই অভিযোগের অনুসন্ধানে নরসিংদী সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যায় একুশের টিম। 

একেক দলিলের জন্য বিভিন্ন হারে টাকা নেয়া হচ্ছে। আর একটি কক্ষে দিনের অবৈধ লেনদেন গুছিয়ে রাখছেন এক ব্যক্তি। কয়েক বান্ডিল টাকা রেখেছেন ড্রয়ারে। কক্ষটি শফিকুলের। অফিসের সবকিছুই চলে তার নির্দেশে। তার হাতে টাকা দেয়া ছাড়া দলিল হয়না। কিন্তু সাব রেজিস্ট্রি অফিসে নগদ টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই।

নকল নবিশ হাসিবুর রহমান জানান, বর্তমানে শফিক আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। সে শত শত কোটি টাকার মালিক। 

শফিকুলের ব্যক্তিগত সহকারী ঘাড় বাকা সোহেলের ড্রয়ারেও টাকা। এতো টাকা কিভাবে এলো? উত্তর জানা নেই। 

শফিকুলের বিরুদ্ধে তার সহকর্মীদেরও অভিযোগের শেষ নেই।

ভুক্তভোগীরা জানান, তার বিরুদ্ধে কথা বললেই সে গুণ্ডাবাহিনী লেলিয়ে দেয়। দেড়শ’ টাকার দায়মুক্তির সার্টিফিকেট সে আমাদের কাছে তিন হাজার টাকা দাবি করে। অপরগতা প্রকাশ করলে সে আমাকে অফিস থেকে বের দেয়।

দলিল লেখক আলমগীর সরকার জানান, বিশ-পঁচিশজনকে এভাবে সাসপেন্ড করেন। পরবর্তীতে পঞ্চাশ হাজার, এক লাখ যার থেকে যেমন পারে এরকম টাকা নিয়ে নিয়ে সাসপেনশন তুলে নেয়।

নরসিংদী শহরে ৫ তলা একটি ভবন রয়েছে তার। এ শহরেই আরও অন্তত তিনটি বাড়ি আছে শফিকুলের। গ্রামে ডুপ্লেক্স বাড়িটিও তৈরি করেছেন কোটি টাকা খরচ করে। এছাড়া গাড়িতে সরকারি লোগো ব্যবহার করে ক্ষমতার দাপট দেখান এই নকল নবিশ।

হাসিবুর রহমান বলেন, নরসিংদীর সবচেয়ে দামি জায়গার মধ্যে তার বাড়ি আছে কমপক্ষে পাঁচ-ছয়টা। এর আনুমানিক বাজারমূল্য হবে ৫০ কোটির উপরে। সে ক্রয়ের পরে ৫০ লাখ টাকা খরচ করে যে সাজসজ্জা করেছে তা দেখলে যে কোন মানুষ অবাক হয়ে যাবে, বললেন আলমগীর সরকার।

নিবন্ধন মহা-পরিদর্শক জানান, তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শহিদুল ইসলাম ঝিনুক বলেন, সে কিন্তু আমাদের কোন সরকারি কর্মচারি নয়। রেজিস্ট্রেশন অফিসে তার থাকা কথা নয়। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা। অবৈধ সম্পদ যারা গড়েছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

শফিকুল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি সাব রেজিস্ট্রি আফিসের অন্য কর্মচারিদেরও। 

ভিডিও-

এএইচ/