মানসিক রোগীর ৯২ শতাংশই চিকিৎসাবঞ্চিত
স্মৃতি মণ্ডল
প্রকাশিত : ১২:২২ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২১ রবিবার
শারীরিক সমস্যাকে গুরুত্ব দিলেও মানসিক স্বাস্থ্য বরাবরই অবহেলিত। অথচ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানসিক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এদের ৯২ শতাংশই আবার চিকিৎসাবঞ্চিত। বহুমুখী মানসিক চাপের এই সময়ে রোগটিকে অধিক গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
ঝামেলার শুরু বিয়ের পর। যৌতুকের দাবিতে চলে মানসিক নির্যাতন। সেই থেকে অসুস্থ মেয়েটি। প্রথম দিকে গুরুত্ব না পাওয়ায় সমস্যাটি রোগে রূপ পেয়েছে।
ভুক্তভোগীর বাবা জানান, মাথার চুল কেটে দিয়েছে, অনেক মারধর করে। রাত ১১টার দিকে আমার গেটে ফেলে রেখে যায়।
কুষ্টিয়া থেকে বাবা এসেছেন মেয়েকে নিয়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রীটি বেশ কিছুদিন ধরে হাসপাতালে। শুরুতে তার অস্বাভাবিক আচরণকেও গুরুত্ব দিতে চায়নি পরিবার।
শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, পরীক্ষা দিতে দিতে হঠাৎ তার মধ্যে এই সমস্যাটা দেখা দেয়।
নিজেকে সুস্থ দাবি করে ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানায় এক ছাত্রী।
অসুস্থ মেয়েটি জানান, ‘যদি এখনই আমাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছিয়ে না দাও তাহলে আমি গলায় আর্ট করবো, বডি আর্টের মাধ্যমে প্রতিবাদ করবো।’
পরীক্ষায় আরও ভালো ফল অর্জন করতে না পারার বেদনা ছিল। সঙ্গে যোগ হয়েছিল নানামুখী হতাশা। বিষন্নতায় ভোগা এমন অসংখ্য রোগীদের প্রতিনিয়ত ভিড় বাড়ছে মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে।
২০১৮ সালের জরিপ বলছে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। শিশু-কিশোরদের ১৩ শতাংশের রয়েছে এই রোগ। সাম্প্রতিক বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে দেখা দিয়েছে মানসিক সমস্যা।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, যাদের প্রতি বঞ্চনা-বৈষাম্য আছে, যারা অসমতার মুখোমুখি হয়েছেন তারাই কিন্তু বেশি করে মানসিক স্বাস্থ্য বিপন্নতার মুখে। যেমন নারী, শিশু, ডিজাবল পারসন রয়েছেন তারা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ- তাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের বিপন্নতর আশঙ্কা সবার চেয়ে বেশি।
চিকিৎসকেরা বলছেন, শারীরিক সমস্যার মত মানসিক সমস্যাকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, যারাই মানসিক সমস্যায় ভুগছে তাদের প্রায় ৯০ থেকে ৯২ শতাংশই চিকিৎসা গ্রহণের আওতার বাইরে। মেডিক্যাল মডেলে চিকিৎসা করালে মানসিক সমস্যা দূর হবে না, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন আমাদেরকে নিতে হবে।
হিসেবে বলছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে ৭৫ থেকে ৯৫ শতাংশ মানসিক রোগী যথার্থ সেবা হতে বঞ্চিত। আবার মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে নেই পর্যাপ্ত বাজেট।
সুখী ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নও সমান গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা সম্পর্কে কথা না বলার প্রবণতা দূর করার পাশাপাশি সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার তাগিত বিশেষজ্ঞদের।
ভিডিও-
এএইচ/