কোম্পানীগঞ্জ আ.লীগ সভাপতির বাস ভবনে বোমা হামলা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৫৪ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২১ রবিবার | আপডেট: ০৯:৫৭ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২১ রবিবার
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের বাসায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নে ৫নং ওয়ার্ডে খিজির হায়াত মঞ্জিলে এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে হামলাকারিরা বাসার বাইরে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খিজির হায়াত খান (৭৫) ও তার স্ত্রী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনজুমান আরা পারভিন (৬০) অভিযোগ করে বলেন, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে এসে আমাদের বাসার সামনে দাঁড়ায়। পরে মুখোশ পরা কয়েকজন ভেতরে প্রবেশ করে বাসা লক্ষ্য করে কয়েকটি বোমের বিষ্ফোরণ ঘটায়। আওয়াজ শুনে চতুর্দিক থেকে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। বোমা হামলার কিছু দৃশ্য তাদের বাস ভবনের সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় এবং হামলাকারীরা মেয়র কাদের মির্জার অনুসারী বলে তারা দাবি করেন তাঁরা।
এদিকে ওই রাতে পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে বসুরহাট পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন চৌধুরী শিমুলের (৪৩) ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। একই বাড়ির মনজিল চৌধুরী (২৫) নামের যুবক তার ওপর হামলা করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। মনজিল নোয়াখালী জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা বাস মালিক সমিতির নেতা আকরাম উদ্দিন চৌধুরী সবুজের ছেলে। আহত শিমুলকে শনিবার রাতে কোম্পানীগঞ্জ হাসপাতাল থেকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনার জের ধরে রাত পৌনে ১০টায় মেয়র কাদের মির্জার অনুসারীরা বসুরহাট বাস স্ট্যান্ডে সবুজ চৌধুরীর মালিকানাধীন বসুরহাট ড্রীম লাইন বাস সার্ভিস কাউন্টারে অগ্নি সংযোগ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা তাৎক্ষণিক আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আহত সাবেক কাউন্সিলর শিমুলের ছোট ভাই সোহেলের নেতৃত্বে ২০-৩০ জন পৌরসভা ৬নং ওয়ার্ড এলাকায় একটি মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেল অভিযোগ করে বলেন, তার পিতা মরহুম কামাল পাশা চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠিত কামাল পাশা চৌধুরী নুরানী মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়ে মাদ্রাসাটি বন্ধ করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জার অনুসারীরা মাদ্রাসাটি বন্ধ করে দিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
মেয়র কাদের মির্জার অনুসারীদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মেয়রের ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন আনোয়ার, আওয়ামী লীগ সভাপতি খিজির হায়াতের বাস ভবনে ককটেল হামলা, ড্রীম লাইন কাউন্টারে অগ্নি সংযোগ, সাবেক কাউন্সিলর শিমুলের ওপর হামলা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তবে এসব ঘটনায় কেউ এখনও কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা সদর ও পৌরসভা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, কোম্পানীগঞ্জে গত কয়েক মাস যাবত আওয়ামী লীগের বিবদমান দু’গ্রুপ মেয়র কাদের মির্জা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীদের মধ্যে প্রতিনিয়ত সংঘাত সংঘর্ষ লেগেই আছে। এসব ঘটনায় একজন সংবাদকর্মী ও একজন শ্রমিক নিহত হয়েছে। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ এবং বেশ কয়েকজন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। পক্ষে-বিপক্ষে প্রায় অর্ধশতাধীক মামলায় অনেকে এখনও কারাগারে আটক আছে। নানা আতঙ্কে উভয় পক্ষের শত শত নেতাকর্মী আত্নগোপন ও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। দু’পক্ষের রেশারেশীকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলার অবনতিতে বসুরহাট বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
কেআই//