ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

স্বামী-স্ত্রীর আয় বৈষম্যের চিত্র বিশ্বজুড়ে একই : সমীক্ষা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:৫৬ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২১ বুধবার | আপডেট: ০৩:৩৯ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২১ বুধবার

স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর আয় কি বেশি? দম্পতিদের আয় নিয়ে সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষার যে তথ্য, তার ভিত্তিতে সব নারীরই উত্তর হবে ‘না’। আর স্বামী-স্ত্রীর আয়ের এই বৈষম্যচিত্র বিশ্বজুড়ে প্রায় একই। 

পরিবারের মধ্যে আয়ের বৈষম্য নিয়ে প্রথমবারের বৈশ্বিক এই সমীক্ষায় ৪৫টি দেশের ১৯৭৩ থেকে ২০১৬- এই চার দশকের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।  

সমীক্ষাটি চালিয়েছেন ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক হেমা স্বামীনাথন এবং অধ্যাপক দীপক মালগান। 

স্বামী-স্ত্রীর আয় বৈষম্যের প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে তারা ২৮ লাখ ৫০ হাজার পরিবারের তথ্য নিয়েছেন। এসব পরিবারের দম্পতিদের বয়স সীমা ছিল ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। 

সমীক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অধ্যাপক স্বামীনাথন বলেন, “দারিদ্র্যের একটি একক হিসেবে দেখা যেতে পারে পরিবারকে। 

“সাধারণত ধরে নেওয়া হয় একটি পরিবারের মধ্যে আয় সমভাবে বন্টিত হয়। কিন্তু এই পরিবারই কখনো কখনো বৈষম্যের স্থান হয়ে উঠে। আমরা এই বিষয়টি উন্মুক্ত করতে চেয়েছি।”

পরিবারকে উড়োজাহাজের ‘ব্ল্যাক বক্সের’ সাথে তুলনা করা হয়েছে। 

এর কারণ ব্যাখ্যায় স্বামীনাথন বলেন, “আমরা এর ভেতরে দেখছি না। কিন্তু শুধু যদি ভেতরেই দেখি, তাহলে কিভাবে এই চিত্র বদলাবে?”

ভারতের শ্রমখাতে লিঙ্গ বৈষমের বিষয়টি সবারই জানা আছে। সেখানে খুব কম নারীর ভাগ্যেই কাজ জোটে আর যাদের কর্মসংস্থান আছে, তাদের পূর্ণকালীন কাজের নিশ্চয়তাও নেই।  

তবে অধ্যাপক স্বামীনাথন ও মালগান সমীক্ষাটি শুধু ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বৈশ্বিক একটি চিত্র তুলে আনার চেষ্টা করেছেন।   
 
“নরডিক দেশগুলোকে লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে আশার আলো হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সেখানকার চিত্র কী? সেখানে কি পরিবারের মধ্যে কাজ এবং আয় সমভাবে বন্টন হচ্ছে?” বলেন অধ্যাপক স্বামীনাথন। 

সার্বিক এবং পরিবারের বৈষম্যের ওপর ভিত্তি করে দেশগুলোর র‍্যাঙ্কিং করেছেন গবেষকরা।  

সমীক্ষায় বিভিন্ন দেশে ধনী এবং দরিদ্র পরিবারগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরেই বৈষম্য থাকার চিত্র পাওয়া গেছে।

অধ্যাপক মালগান বলেন, “সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, কর্মজীবী দম্পতিদের মধ্যে স্বামীর চেয়ে স্ত্রী বেশি আয় করেন, এমন চিত্র ধনী, দরিদ্র এমনকি উন্নত দেশগুলোতেও পাওয়া যায়নি, এমনকি সবচেয়ে কম বৈষম্যের অঞ্চল নরডিক দেশগুলোতেও। আমরা সব জায়গায় নারীর অংশগ্রহণ (আয়ে) ৫০ শতাংশের নিচে পেয়েছি।”

তবে এমন অবস্থার মধ্যেও কিছুটা আশার আলোও পাওয়া গেছে। সমীক্ষায় এসেছে, ১৯৭৩-২০১৬- এই চার দশকে পরিবারের মধ্যে আয়ের এই বৈষম্য ২০ শতাংশ কমেছে। 
 
অধ্যাপক স্বামীনাথন বলেন, “বিশ্বের অধিকাংশ স্থানেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এবং শ্রমখাতে নারীর অংশগ্রহণও বাড়ছে। অনেক জায়গায় নারীবান্ধব নীতির কারণে ব্যবধান কমে আসছে। কর্মসংস্থান এবং আয়ের সমতার জন্য আন্দোলন হচ্ছে। এই সবই ব্যবধান কমাচ্ছে।”

তবে এখনো যে বৈষম রয়েছে, তা অবশ্যই আরো কমিয়ে আনতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

“বিষয়টি (আয় বৈষম্য) নিয়ে সরকারগুলো এখনো নিশ্চুপ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিচ্ছে না পর্যাপ্ত নারী কর্মী, যাদেরকে ঘরের কাজের জন্য পারিশ্রমিক দেওয়া উচিত। এখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে- নারীদের কাজ কি স্বীকৃতি পাচ্ছে? পরিবারবান্ধন এবং শিশুবান্ধব নীতি কি তৈরি হয়েছে? আমাদের আরো ভালো পুরুষ দরকার, যারা অভেতনিক কাজ ভাগাভাগি করে নেবে।   

“সরকার ও সমাজের আরো অনেক কিছু করার আছে। এখনকার মতো চলতে পারে না,” বলেন এই গবেষক।

সূত্র: বিবিসি

এইচএস/ এসএ/