ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ৬৫তম জন্মবার্ষিকী

মোংলা প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ০৮:২৫ এএম, ১৬ অক্টোবর ২০২১ শনিবার

‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’ গানের স্রষ্টা, তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র ৬৫তম জন্মবার্ষিকী ১৬ অক্টোবর। ১৯৫৬ সালের এদিনে পিতার কর্মস্থল বরিশালের আমানতগঞ্জ রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

রুদ্রর পিতা ডাঃ শেখ ওয়ালীউল্লাহ এবং মাতা শিরিয়া বেগম। তার মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার অন্তর্গত সাহেবের মেঠ গ্রামে। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া রুদ্রের শৈশবের অধিকাংশ সময় কেটেছে নানাবাড়ি মিঠেখালি গ্রামে (বাগেরহাট জেলার মংলা থানার অন্তর্গত)। এখানকার পাঠশালাতেই তার পড়াশুনা শুরু।

১৯৭২ সালে ঢাকায় এসে ওয়েস্ট এ্যান্ড হাইস্কুল ভর্তি হয়ে ১৯৭৪ সালে চার বিষয়ে লেটার মার্কসসহ এসএসসিতে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর ১৯৭৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। অতঃপর ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বিএ এবং ১৯৮৩ সালে এমএ পাস করেন তিনি।

আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের ময়দানে তিনি ছিলেন অন্যতম সদস্য। জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে প্রধান উদ্যোগীদের একজন ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই বিষ্ফোরক দিনগুলোতে রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন বিপ্লবের সহগামী এক মানুষ।

১৯৯১ সালের ২১ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান। অকালপ্রয়াত এই কবি নিজেকে মিলিয়ে নিয়েছিলেন আপামর নির্যাতিত মানুষের আত্মার সঙ্গে। সাম্যবাদ, মুক্তিযুদ্ধ, ঐতিহ্যচেতনা ও অসাম্প্রদায়িকবোধে উজ্জ্বল তার কবিতা। ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’- এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি উচ্চারণ করেছেন অবিনাশী স্বপ্ন- ‘দিন আসবেই- দিন সমতার’। যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান তাকে পরিণত করেছে ‘তারুণ্যের দীপ্র প্রতীক’-এ। একই সঙ্গে তার কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা।

মাত্র ৩৫ বছরের (১৯৫৬-১৯৯১) স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ সহ অর্ধ শতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। পরবর্তীকালে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন। 

এছাড়া ‘উপদ্রুত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থ দুটির জন্য ‘সংস্কৃতি সংসদ’ থেকে পরপর দু’বছর ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরষ্কার’ লাভ করেন। 

কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রুদ্র স্মৃতি সংসদ, আজ কবির গ্রামের বাড়ি মোংলার মিঠাখালিতে সকালে শোভাযাত্রা সহকারে সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল, দোয়া অনুষ্ঠানের আযোজন করেছে। বিকালে মিঠেখালী ফুটবল মাঠে প্রীতি ফুটবল অনুষ্ঠিত হবে। 

এছাড়া সন্ধ্যায় মোংলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে রুদ্র স্মৃতি সংসদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট মোংলা শাখা স্মরণ সভার আয়োজন করেছে। স্মরণসভা শেষে রুদ্রের কবিতা আবৃত্তি ও রুদ্রের গান পরিবেশিত করা হবে।

এএইচ/