ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

পীরগঞ্জে অগ্নিসংযোগের অন্যতম হোতা সৈকত মণ্ডলসহ আটক ২

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:০৮ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০২১ শনিবার

রংপুরের পীরগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে হিন্দু সম্পদায়ের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার অন্যতম হোতা সৈকত মণ্ডলসহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। 

শনিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। 

এর আগে শুক্রবার রাতে টঙ্গী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে। র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৩ এর একটি দল। সৈকত মণ্ডল ও রবিউল ইসলাম আটক করা হয়েছে। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পীরগঞ্জের ঘটনায় নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে জানিয়েছে র‌্যাব।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃতরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অরাজকতা সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার লক্ষ্যে হামলা ও অগ্নিসংযোগসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে এবং মাইকিং করে লোকজনদের উত্তেজিত করেছিল।

সৈকত মণ্ডল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিকর তথ্য ও মিথ্যাচার প্রচারের মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণকে উত্তেজিত করে তোলে। সে হামলা ও অগ্নিসংযোগে অংশগ্রহণে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করে। তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। রবিউলকে মাইকিং করে লোকজন জড়ো করতে সৈকত নির্দেশনা দিয়েছিল। 
ঘটনার পর পর সে আত্মগোপনে চলে যায়। সৈকত মণ্ডল রংপুরের একটি কলেজের স্নাতকে অধ্যয়ন করছে। 

তিনি জানান, সৈকতের ফেসবুকে ফলোয়ার প্রায় তিন হাজার। সে ফলোয়ার আরও বাড়াতে এবং ব্যক্তিগত ইমেজকে প্রচার করতেই ‘এ মুহূর্তে গ্রাম পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া সংবাদ- হিন্দুদের আক্রমণে এক মুসলিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে’ এসব বলে উসকানিমূলক পোস্ট দিত।

সেই পোস্টের সূত্র ধরে হামলার ঠিক কাছাকাছি একটি মসজিদ থেকে সৈকতের নির্দেশে মাইকিং করে রবিউল ইসলাম। সে তৌহিদী জনতাসহ ধর্মপ্রাণ মানুষকে প্রতিরোধের ডাক দেয়। এরপর নিজে একটি উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে উত্তেজনাকর বক্তব্য দিয়ে হামলায় অংশ নেয়।

কমান্ডার মঈন বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টায় কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী এবং রংপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় স্বার্থন্বেষী মহলের অপতৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া চক্রান্তকারীরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অপচেষ্টা করছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের অভিযানে ৩০ জনকে গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, গত ১৭ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরে পীরগঞ্জের বড় করিমপুর গ্রামে দুর্বত্তরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই ঘটনায় রংপুরের পীরগঞ্জ থানায় ৩টি মামলা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, এর আগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে পরিতোষ ও উজ্জ্বল। ফেসবুকে উস্কানিমূলক মূল পোস্টটি দিয়েছিল পরিতোষ। পরিতোষ আর উজ্জ্বলের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক ছিল। পরিতোষ পোস্ট দিয়ে উজ্জ্বলকে বলে- ‘ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট দিলে তোর কেমন লাগে?’ এরপর পোস্টটি সে ডিলেট করলেও উজ্জ্বল তা কপি ও সেভ করে। এরপর সেটিই উজ্জ্বল নিজের ফেসবুক পেইজ থেকে প্রচার করে। পরিতোষ-উজ্জ্বলও সৈকতের ফলোয়ার ছিল। 

এরপর সেই পোস্টটি পিক করে সৈকত। সৈকতের মাধ্যমে সেটি জেনেই রবিউল মসজিদে মাইকিং করে ও হামলার নেতৃত্ব দেয় এবং নিজেও অংশ নেয়।

গ্রেফতার রবিউল রংপুরের পীরগঞ্জের হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার অন্যতম উস্কানিদাতা। সে স্থানীয় একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন। হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পূর্বে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মাইকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন উস্কানিমূলক ও মিথ্যাচার করে গ্রামবাসীকে উত্তেজিত করে তোলে। ঘটনাপর সেও আত্মগোপনে চলে যায়। 

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান র‌্যাব কমান্ডার মঈন।

এএইচ/