ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

দুর্দান্ত স্মৃতি নিয়ে ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:০২ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০২১ শনিবার

চলমান সপ্তম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শুরু হওয়া সুপার টুয়েলভের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড। ২০১৬ বিশ্বকাপ ফাইনালের স্মৃতিকে সঙ্গী করে সুপার টুয়েলভে গ্রুপ-১ থেকে লড়ছে দল দুটি। ২০১৬ সর্বশেষ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে নাটকীয়ভাবে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবারের বিশ্বকাপের শুরুতে সেই স্মৃতি নাড়া দিচ্ছে দু’দলকে।
 
দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হওয়া এই ম্যাচে টস জিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে ইংল্যান্ড। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ এলেই দুর্দান্ত এক স্মৃতি নাড়াচাড়া দিয়ে ওঠে। আর তা হলো ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল। দ্বিতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরতেই ঐ ফাইনাল খেলতে নেমেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড।

কোলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথমে ব্যাট করে জো রুটের ৫৪ রানের সুবাদে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৫৫ রান সংগ্রহ  ইংল্যান্ড। আর ১৫৬ রান তাড়া করতে নেমে সুবিধা করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজও। তবে তিন নম্বরে নামা মারলন স্যামুয়েলসের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ম্যাচে টিকে ছিলো ক্যারিবীয়রা। 

কিন্তু ম্যাচের শেষ দিকে এসে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে ১৯ রান দরকার পড়ে তাদের। উইকেটে ছিলেন স্যামুয়েলস ও কালোর্স ব্র্যাথওয়েট। শেষ ওভারে বল হাতে আক্রমণে আসেন ইংল্যান্ডের পেস অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। স্টোকসের প্রথম চার ডেলিভারিতেই চার ছক্কা হাঁকিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শিরোপার স্বাদ পাইয়ে দেন ব্র্যাথওয়েট। ৪ উইকেটে ফাইনাল জিতে দ্বিতীয়বারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।  

বিশ্বকাপের ঐ ম্যাচের পর টি-টোয়েন্টিতে চারবার দেখা হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের। সবগুলোই দ্বিপাক্ষীক সিরিজে। এরমধ্যে তিনবার জিতে ইংলিশরা, একবার জয় পায় ক্যারিবীয়রা। শেষ আসরের ফাইনালের কারণেই এগিয়ে থাকবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কখনও ইংল্যান্ডের কাছে হারেনি ক্যারিবীয়রা। পাঁচবারের দেখায় সবগুলোই জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 

কিন্তু সাম্প্রতিক পারফরমেন্সে এগিয়ে ইংল্যান্ড। এ বছরের শুরুতে দ্বিপাক্ষীক সিরিজে ভারতের কাছে হারলেও শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ দুই সিরিজে জয় আছে ইংল্যান্ডের।

তবে এ বছর চারটি দ্বিপাক্ষীক সিরিজ খেলে দু’টি জয় ও দু’টি হার ওয়েস্ট ইন্ডিজের। শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে ক্যারিবীয়রা। আর দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের কাছে সিরিজ হারে ক্যারিবীয়রা। সবগুলো সিরিজই দেশের মাটিতে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 

এবারের আসরের আগে আইসিসির  দু’টি প্রস্তুতি ম্যাচেও হেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে এবং আফগানিস্তানের কাছে ৫৬ রানে হারে ক্যারিবীয়রা। তাই বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রস্তুতিটা আশানুরুপ হয়নি। 

দুই ম্যাচে ক্যারিবিয় ব্যাটারদের মধ্যে বলার রান করেছেন রোস্টন চেজ। আফগানদের বিপক্ষে ৫৮ বলে অপরাজিত ৫৪ রান করেন তিনি। সেটিও আবার ওয়ানডে স্টাইলে। স্ট্রাইক রেট ৯৩ দশমিক ১০। দলের সেরা ব্যাটাররা দুই ম্যাচেই ব্যর্থ। 

লেন্ডন সিমন্স ১৮ ও ০, ক্রিস গেইল এক ম্যাচে ২০, শিমরোন হেটমায়ার ২৮ ও ২, নিকোলাস পুরান ১৩ ও ৩৫, অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড এক ম্যাচে ২৩ রান করেন। আইপিএলের শেষ দিকে ইনজুরির কারনে খেলতে না পারা আন্দ্রে রাসেলও শুধুমাত্র আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলেন। বল হাতে ১ উইকেট ও ব্যাট হাতে ১১ রান করেন তিনি। 

পেস বোলিং বিভাগে ওশানে থমাস, ওবেড ম্যাককয়, রাসেল ও অভিজ্ঞ রবি রামপালের সাথে স্পিন সামলাবেন আকিল হোসেইন। গোড়ালির ইনজুরির কারনে শেষ মুর্হূতে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েন বাঁ-হাতি স্পিনার ফ্যাবিয়ান অ্যালেন। তার পরিবর্তে ক্যারিবীদের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পান আরেক বাঁ-হাতি স্পিনার আকিল। 

বিশ্বকাপের শুরুটা জয় দিয়ে করতে চান ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক পোলার্ড। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বকাপ ধরে রাখতে চাই। তাই শুরুটা ভাল  হওয়া দরকার। প্রথম ম্যাচেই জয় পেতে চায় দল।’

দু’টি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে একটিতে জয় ও হার ছিলো ইংল্যান্ডের। ভারতের কাছে ৭ উইকেটে হারলেও, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩ রানে জয় ছিলো ইংলিশদের। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন-আপে আছেন জেসন রয়, জশ বাটলার, জনি বেয়ারস্টো, ডেভিড মালান ও অধিনায়ক ইয়োইন মরগান। তবে মরগানের ফর্ম ভাবাচ্ছে ইংল্যান্ডকে। নিজের ফর্ম নিয়ে উদ্বিগ্ন মরগান নিজেও। 

চলতি বছরে সর্বশেষ সাতটি টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের হয়ে মাত্র ৮২ রান করেছেন মরগান। সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলেও ব্যর্থ মরগানের ব্যাট। ১৬ ইনিংসে ১৩৩ রান করেছেন তিনি। গড় ১১ দশমিক ০৮। স্ট্রাইক রেট ৯৫ দশমিক ৬৮। তাই দল চাইলে, একাদশের বাইরে থাকতে রাজি ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী ইংল্যান্ডের অধিনায়ক মরগান। 

তবে বিশ্বকাপ মঞ্চে ভালো করতে হলে দলের সবাইকে জ্বলে উঠতে হবে বলে মনে করেন মরগান। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপের মঞ্চে ভালো করতে সকলেই মুখিয়ে থাকে। আর শিরোপা জিততে হলে, সব বিভাগেই ভালো করতে হবে আমাদের।’

প্রস্তুতি ম্যাচে বল হাতে সাফল্য পেয়েছেন মার্ক উড ও আদিল রশিদ। উড ৪টি ও রশিদ ৩ উইকেট নেন। তাদের সাথে বিশ্বকাপে জ্বলে উঠতে হবে ডেভিড উইলি, ক্রিস ওকস ও মঈন আলিকে। ২০১২ ও ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর ২০১০ সালে শিরোপার স্বাাদ পায় ইংল্যান্ড। 

এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে ১৮ বার মুখোমুখি হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড। ১১টিতে জয় ক্যারিবীয়দের। ৭টিতে জিতেছে ইংলিশরা। ২০১৯ সালে সর্বশেষ দ্বিপাক্ষীক সিরিজে মুখোমুখি হয়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে হওয়া ঐ সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতেছিলো ইংল্যান্ড। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ: 
এভিন লুইস, লেন্ডল সিমন্স, ক্রিস গেইল, নিকোলাস পুরান (কীপার), শিমরন হেটমায়ার, কাইরন পোলার্ড (অধিনায়ক), আন্দ্রে রাসেল, ডোয়াইন ব্রাভো, আকিল হোসেইন, রবি রামপল, ওবেড ম্যাককয়।

ইংল্যান্ড একাদশ: 
জেসন রয়, জস বাটলার (কীপার), দাউদ মালান, জনি বেয়ারস্টো, লিয়াম লিভিংস্টোন, ইয়ন মরগ্যান (অধিনায়ক), মঈন আলী, ক্রিস ওকস, ক্রিস জর্ডান, আদিল রশিদ, টিমাল মিলস।

এনএস//