ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে’র অষ্টম প্রয়াণ দিবস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:২০ এএম, ২৪ অক্টোবর ২০২১ রবিবার

মান্না দে

মান্না দে

‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ গানটি শুনলে যার মুখটি এখনও চোখের সামনে ভেসে উঠে তিনি মান্না দে। উপমহাদেশের কিংবদন্তি তুল্য এ শিল্পী বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, গুজরাটি, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন ভাষায় অজস্র গান উপহার দিয়ে অমরত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে রয়েছেন লাখো-কোটি শ্রোতার হৃদয়ে।

শিল্পী মান্না দে’র অষ্টম প্রয়াণ দিবস আজ। ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর ভক্তকূলকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন শ্রোতাপ্রিয় এ শিল্পী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। তার সুরের ক্যানভাসে শ্রোতাদের নিয়ে গেছেন অন্য এক ভালবাসার জগতে, যেখানে আজীবন বসবাস করতে চাইবে যে কেউ।

‘জানি তোমার প্রেমের যোগ্য আমিতো নই’, ‘তীর ভাঙা ঠেউ আর নীড় ভাঙা ঝড়’, ‘এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি’, ‘ এ জীবনে যত ব্যথা পেয়েছি’, ‘সেই তো আবার কাছে এলে’, ‘আবার হবে তো দেখা / এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো’, ‘ ‘ক ফোঁটা চোখের জল ফেলেছ যে তুমি ভালবাসবে’ ‘তুমি অনেক যত্ন করে আমায় দুঃখ দিতে চেয়েছ’, ‘ যদি কাগজে লেখো নাম’, ‘ আমি ফুল না হয়ে কাঁটা হয়েই বেশ ছিলাম’, ‘ কত দিন দেখিনি তোমায়’, ‘খুব জানতে ইচ্ছে করে’, ‘মুকুটটাতো পড়েই আছে, রাজাই শুধু নেই’ মান্না দের কণ্ঠে দরদ মিশিয়ে গাওয়া এ গান আজও শ্রোতাকে নিয়ে যায় চিরবসন্তের কল্পলোকের অন্য এক জগতে।

কফি হাউসের গানটির কথাই ধরা যাক; কফি হাউস সিরিজের বিখ্যাত এ গানটির সুরকার সুপর্নকান্তি। গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারকে দিয়ে জোর করেই আড্ডা নিয়ে একটি গান লিখিয়ে নিয়েছিলেন সুপর্ন। পুত্রসম সুরকারের আবদার ফেলতে পারেননি গৌরীপ্রসন্ন। সুর শুনে মনে ধরে গেল মান্না দে-র। তারপরেই রেকর্ড করার সিদ্ধান্ত। আর সেই গানটিই হলো ইতিহাস।

১৯১৯ সালের ১ মে প্রবোদ দে (মান্না দে) জন্মগ্রহণ করেন কলকাতায়। ছোটবেলায় তিনি বাড়িতেই পেয়েছিলেন কাকা সংগীতাচার্য অন্ধ শিল্পী কৃষ্ণচন্দ্র দেকে। হাতে খড়ি থেকে ধ্রুপদ শিক্ষা সব তার হাতেই। রেওয়াজের সময় তিনি আধুনিক গান না করে মন দিয়ে সরগম আর রাগ-রাগিণীর চর্চা করতেন। 

১৯৪৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তামান্না’ চলচ্চিত্রে গায়ক হিসেবে মান্না দে’র অভিষেক ঘটে। রবীন্দ্র সঙ্গীতসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার গান গেয়েছেন এই কিংবদন্তী। ৬০ বছরের সঙ্গীত জীবনে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী, ‘পদ্মবিভূষণ’এবং ‘দাদা সাহেব ফালকে’ খেতাবসহ অসংখ্য পুরস্কারে উঠেছে তার হাতে। 

২০০৪ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও ২০০৮ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও ডি-লিট সম্মাননা লাভ করেন মান্না দে।

কাকার বেঁধে দেওয়া রেওয়াজ রীতি আর নিজের নিয়মনিষ্ঠায় মান্না দে আজীবন শিল্পীদের কথিত উচ্ছৃঙ্খল বেপরোয়া ও খামখেয়ালির জীবনের স্বাদ নেননি।

১৯৫৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দক্ষিণাঞ্চলের কেরালার মেয়ে সুলোচনা কুমারনকে বিয়ে করেন মান্না। আদর করে তাকে সলু বলে ডাকতেন। বলতেন তার সব প্রেমের গানই সুলুকে ভেবে গাওয়া। তাদের সংসারে শুরোমা ও সুমিতা নামে দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। 

সুলোচনা প্রয়াত হন ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে। মুম্বাই ছেড়ে মান্নাও চলে যান মেয়ের কাছে ব্যাঙ্গালোরে। আর সেখান থেকেই তিনি পাড়ি জমান মহাসিন্ধুর ওপারে, তার সুলুর কাছে।

এএইচ/