তালেবানকে নিয়ে উভয় সংকটে ইরান
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৪৬ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০২১ বুধবার
শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরান ও আফগানিস্তানের সুন্নি নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন তালেবানের মধ্যে একসময় চরম বৈরিতার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে গোষ্ঠিগত ধর্মীয় বিরোধকে একপাশে সরিয়ে রেখে তারা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে। তাদের এই পরিবর্তিত সম্পর্কের মূল কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
উভয়পক্ষেরই অভিন্ন শত্রু যুক্তরাষ্ট্র। যে কারণে গেল ২০ বছর ধরেই আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে সরব ছিল ইরান ও তালেবান।কিন্তু বাস্তবেই আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় এলে কী ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা ছিল না ইরানের।
দুই দশক ধরেই তালেবানকে সমর্থন দিয়ে এসেছে ইরান। এমনকি মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আফগান সীমান্তে সামরিক সহায়তাও দিয়ে এসেছে দেশটি। এ জন্য প্রথমে গোপনে এবং ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে তালেবানের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগও শুরু করে তারা।
কথা ছিল আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য বিদায় হলে দেশটি পুনর্গঠনে সাহায্য করবে ইরান। এর ধারাবাহিকতায়ই তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও পণ্য ট্রানজিটের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা হয়।
তবে এখন অনেক কিছুই স্পষ্ট হচ্ছে ইরানের কাছে। সুন্নি মতাদর্শের তালেবানের নতুন করে উত্থানের পর বিপাকে পড়েছেন আফগানিস্তানের শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। অথচ এই শিয়া জনগোষ্ঠীকেই নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ছিল তালেবানের।
এদিকে আফগানিস্তানে শিয়াদের ওপর হামলার কারণে ইরান সীমান্তে চাপ বেড়েছে এই সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের। এটি ইরানের জন্য একটি চাপের বিষয়।
সেই সঙ্গে আফগানিস্তানে উগ্র সুন্নি মতাদর্শের আইএসের উত্থানের আশঙ্কাও করছে ইরান।মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এই উগ্র গোষ্ঠীর উত্থান হলে সঙ্কটে পড়বে শিয়া অধ্যূষিত রাষ্ট্র ইরান। দেশটির শঙ্কার জায়গাটি হলো- আফগানিস্তানকে ঘাঁটি করে ইরানে হামলা চালাতেও পিছপা হবে না আইএস।
এ অবস্থায় ইরানের নেতারা একটি ‘কূটনৈতিক জালে’ আটকে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ আফগানিস্তান এখন একই সঙ্গে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার এবং ‘সম্ভাব্য শত্রু’।
ইরানের সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ হোসেইন ইমাদি বলেন, “ইরান এখন বুঝতে পারছে যে শত্রুর শত্রু কখনও বন্ধু হয় না। আর এ ক্ষেত্রে তালেবানরা আমেরিকান সৈন্যদের থেকেও এখন বড় সমস্যা।”
এ অবস্থায় তালেবানের সঙ্গে খুব সাবধানে এবং বাস্তবসম্মতভাবে কাজ করতে হবে বলেও জানান তিনি।
আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে তালেবান দেশটিতে শিয়া সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত এই সম্প্রদায়ের ওপর আইএসের কোনও হামলাই প্রতিরোধ করেনি তারা।
সূত্র: রয়টার্স
এসবি/