সুদানে আন্দোলন জোরদার, সাহায্য বন্ধ করল বিশ্ব ব্যাংক
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:১৫ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০২১ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৯:২৬ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০২১ বৃহস্পতিবার
সুদানে সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে সাহায্য স্থগিত করেছে বিশ্ব ব্যাংক। এদিকে দেশটির সাধারণ জনগণের সমর্থনে অভ্যুত্থানবিরোধীদের আন্দোলন আরও জোরদার হয়েছে।
বিবিসি জানায়, গত মার্চে সুদান বিশ্ব ব্যাংক থেকে ২শ’ কোটি ডলার অনুদান পায়। ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ করতে পারায় প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশটি এই অনুদান পেয়েছিল।
তবে দীর্ঘদিনের সংকট কাটিয়ে দেশটি যখন কিছুটা অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে ঠিক তখনই আবার সামরিক অভ্যুত্থান, যা দেশটিকে আবারও সঙ্কটে ঠেলে দিয়েছে। যে কারণে বিশ্ব ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে বলেছেন,“সুদানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। দেশটির আর্থ-সামাজিক পুনরুজ্জীবন ও উন্নয়নের ওপর এই পরিস্থিতির যে প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে আমি শঙ্কায় আছি।”
এদিকে সামরিক বাহিনীর ‘অসাংবিধানিকভাবে’ ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে আফ্রিকান ইউনিয়নও (এইউ) সুদানের সদস্যপদ স্থগিত করেছে। অন্যদিকে,দেশটিকে ৭০ কোটি ডলারের সাহায্য বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সুদানের বিরুদ্ধে এ ধরণের পদক্ষেপ দেশটিতে বেসামরিক সরকার ফিরিয়ে আনতে জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের ওপর এক ধরণের চাপ সৃষ্টি করেছে।
সুদানের জেনারেল বুরহান মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে অভ্যুত্থানের কারণ জানিয়ে বলেছেন, দেশে গৃহযুদ্ধ ঠেকাতেই সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়েছে। তবে ২০২৩ সালে দেশটিতে গণতন্ত্রিক নির্বাচন হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
যদিও তার এই আশ্বাসে ভরসা পাচ্ছেন না কেউ ই। যে কারণে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সুদানে বুধবার তৃতীয়দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচী চলেছে।
সুদানের দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে ২০১৯ সালে সরিয়ে দেওয়ার পর সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক গোষ্ঠীগুলোর নড়বড়ে এক ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তির মধ্য দিয়ে গত দুই বছর ধরে পরিচালিত হয়ে আসছিল পূর্ব আফ্রিকার দেশটি।
সেপ্টেম্বরে বশিরের অনুগত সেনাদের ব্যর্থ এক অভ্যুত্থান চেষ্টার পর থেকে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বেসামরিক নিয়ন্ত্রিত জোট ফোর্সেস অব ফিডম অ্যান্ড চেইঞ্জের (এফএফসি) সংস্কার এবং মন্ত্রিসভায় রদবদলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
অন্যদিকে, বেসামরিক নেতারা এ দাবিগুলোকে দেখে আসছিলেন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের ‘ক্ষমতা দখলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা’ হিসেবে।
শুক্রবার এক বক্তৃতায় দেশটির বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদক চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে একটি রোডম্যাপ দিয়েছিলেন এবং সমাধানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে তা দেশের ভবিষ্যৎকে ভয়াবহ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে বলে হুঁশিয়ার করেছিলেন।
এর মধ্যেই এফএফসি জোটে থাকা সামরিক বাহিনীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত একটি অংশ গত শনিবার বিক্ষোভের ডাক দেয়। তাতে সাড়া দিয়ে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সামনে জড়ো হন।
এ সময় ‘ভুখা সরকারের’ অপসারণের দাবিতে স্লোগান দিয়ে, সশস্ত্র বাহিনী ও সুদানের যৌথ সামরিক-বেসামরিক সার্বভৌম পরিষদের প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ অল-বুরহানকে ‘অভ্যুত্থানের মাধ্যমে’ ক্ষমতা নেওয়ার আহ্বান জানায় তারা।
এর পরেই সোমবারের অভ্যুত্থানে সুদানের বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করা হয় এবং রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সমালোচনা শুরু হয়।
সূত্র: বিবিসি
এসবি/