ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চলবে বেনাপোল এক্সপ্রেস
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:২৮ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০২১ রবিবার | আপডেট: ১১:৩৩ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০২১ রবিবার
সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চালু হচ্ছে ঢাকা-বেনাপোল রুটের ট্রেন ‘বেনাপোল এক্সপ্রেসের। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ ট্রেনটি বেনাপোল থেকে ঢাকার পথে ছুটে চলবে বলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহা-পরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে বেনাপোল এক্সপ্রেসের কয়েক মাসের অচলাবস্থার অবসান ঘটতে চলেছে।
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা হয়ে মাগুরা রেলপথ ও ট্রেন চলাচলের কর্মকাণ্ড পরিদর্শনে শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) যশোরে আসেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার।
এদিন সকাল সাড়ে ৭টায় বিমানের একটি ফ্লাইটে তিনি যশোর বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। এ সময় রেলওয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম জোনের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর তিনি বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে যশোর নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সাথে অনির্ধারিত মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
এসময় নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ মহাপরিচালকের কাছে বেনাপোল এক্সপ্রেস চলাচলের দাবি তুলে ধরেন। তারা জানান, গত ছয় মাস কোন কারণ ছাড়াই বেনাপোল এক্সপ্রেস চলাচল বন্ধ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এটির চলাচল বন্ধ করে দেবার পর বর্তমানে দেশে অন্যান্য ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হলেও বন্ধ রয়েছে বেনাপোল এক্সপ্রেস। তাদেরকে যশোর ও বেনাপোল স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলেছে, যাত্রী স্বল্পতা ও ট্রেনের বগির যন্ত্রাংশের সমস্যার কারণে এটির চলাচল সাময়িক বন্ধ রয়েছে। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি বর্তমানে ঢাকা-পঞ্চগড়, ঢাকা-খুলনা রুটে চলাচল করছে। যাত্রী স্বল্পতা ও বগির যন্ত্রাংশের সমস্যার কথা বলা হলেও সেটা সঠিক নয়। বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার পাসপোর্টযাত্রীসহ স্থানীয় শত শত যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা ভারত যাতায়াত করছে।
নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে এসব শোনার পর মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার উপস্থিত রেলওয়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এই ট্রেনটি বন্ধের বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা শোনেন। এরপর তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সাথে ফোনে কথা বলে এই ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন। এক পর্যায়ে যশোর নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের দাবির প্রেক্ষিতে মহাপরিচালক ঘোষণা দেন আগামী ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফের ঢাকার পথে চলাচল শুরু করবে। এজন্য তিনি ঢাকায় গিয়ে সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন বলে উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে আশ^াস্ত করেন।
২০১৯ সালের ১৭ জুলাই গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বেনাপোল-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ট্রেনটির চলাচল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে ঢাকার সাথে বেনাপোলের রেল যোগাযোগ চালু হওয়ায় বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানির কাজে নিয়োজিত ব্যবসায়ীদের যাতায়াত সহজ হয়। বিগত দিনে এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা ৫/৬ হাজার পাসপোর্টযাত্রী ভারতে যাতায়াত করতেন। সড়ক পথের বেহাল দশা ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যানজটের কারণে তারা দুর্ভোগের শিকার হতেন। বেনাপোল-ঢাকা রুটে ট্রেনটি চালু হওয়ার পর সাড়ে সাত ঘণ্টায় বেনাপোলে থেকে ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছিল। সপ্তাহে একদিন বিরতি দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করতো বেনাপোল এক্সপ্রেস। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসে প্রথম রোগী মৃত্যুর পর সরকার ২৬ মার্চ থেকে দেশে যাত্রীবাহী বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়। এরপর একই বছরের নভেম্বর মাস নাগাদ করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে চালু হয় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি। প্রায় পাঁচ মাস চালু থাকার পর চলতি বছরের মার্চ মাস নাগাদ করোনা পরিস্থিতির ফের অবনতি হলে এপ্রিল মাস থেকে চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এ ট্রেনটির।
এদিকে, গত এপ্রিল মাসের পর থেকে টানা ছয় মাস বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের চাকা বন্ধ থাকলেও করোনা পরিস্থিতি বর্তমানে অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় যাত্রীবাহী বাস, লঞ্চ, ট্রেন ও বিমান চলাচল করছে। কিন্তু যাত্রী সঙ্কট ও যন্ত্রাংশের ক্রটি দেখিয়ে এখনো বন্ধ রয়েছে বেনাপোল এক্সপ্রেসের চলাচল। শুক্রবার যশোর নাগরিক অধিকার আন্দোলন নেতৃবৃন্দের দাবির প্রেক্ষিতে অবশেষে ডিসেম্বরে চালু হতে যাচ্ছে ট্রেনটি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, যশোরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে বেনাপোল এক্সপ্রেস ফের চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকায় গিয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে আগামী ডিসেস্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ ট্রেনটি চলাচল শুরু করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
যশোর বিমান বন্দরে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, ইঞ্জিনিয়ার (পশ্চিম) নুরুল ইসলাম সিরাজী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ট্যাক) আসাদুল হক ও বিভাগীয় প্রকৌশলী বীরবল মন্ডল, নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোর এর কোর কমিটির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মতিয়ার রহমান, মোবাশ্বের হোসেন বাবু, আহসানুল্লাহ ময়না, ডাঃ এস.এম. আব্দুল্লাহ, আবু মুসা মধু, তসলিমা লিপা, কামরুল ইসলাম, শেখ মাসুদুজ্জামান মিঠু।
কেআই//