পাকিস্তানের জয় উদযাপন করে হাজতে স্কুলশিক্ষিকা, গেল চাকরিও
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:১৮ পিএম, ৩ নভেম্বর ২০২১ বুধবার
কোটি কোটি ভারতবাসীর মতো নাফিসা আটারিও ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচটি দেখতে বসেছিলেন টেলিভিশনের সামনে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই চীর প্রতিদ্বন্দ্বী দলের খেলা দেখবেন বলে শুরু থেকেই তৈরি হয়েছিলেন তিনি। দু’ দিন পরে ওই শিক্ষিকার জায়গা হয়েছিল হাজতে।
রাজস্থানের উদয়পুরের নিরজা মোদী স্কুলের এই শিক্ষিকার অপরাধ, তার হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাস। যেখানে পাকিস্তানের জয়ের উল্লাস লেখা ছিল।
উদয়পুরের অম্বা মাতা থানার পুলিশ নাফিসাকে গ্রেফতার করে। থানার পুলিশ কর্মকর্তা নরপত সিংহ জানান, নাফিসাকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩ বি (জাতীয় সংহতি বিরোধী) ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। আদালতে তোলা হলে তার জেল হয়।
গত ২৪ অক্টোবর পাকিস্তানের কাছে বিরাট কোহলীর ভারত ১০ উইকেটে হারার পর নাফিসা তার হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসে লিখেছিলেন, ‘জিত গ্যায়ে…. উই ওয়ান’ (আমরা জিতে গিয়েছি)। সঙ্গে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের ছবি দেন।
এই হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাস তার কোনও এক ছাত্রের বাবার নজরে আসে। তিনি বাকিদের তা পাঠিয়ে দেন। এরপর এটি ভাইরাল হতে সময় লাগেনি।
নাফিসার জেল হয়। স্কুলের চাকরিটিও খোয়াতে হয়।
এই ‘অপরাধ’-এর জন্য ক্ষমা চেয়েছেন নাফিসা। রাজস্থানের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি বলেন, ‘‘সে দিন একজন আমার স্টেটাস দেখে হোয়াটসঅ্যাপেই জানতে চেয়েছিলেন, আমি পাকিস্তানকে সমর্থন করছি কি না। সঙ্গে কিছু হাসির ইমোজিও ছিল। মনে হয়েছিল হাল্কা মেজাজে মজা করে আমাকে এই প্রশ্ন করা হয়েছে। আমিও হাসতে হাসতেই বলেছিলাম ‘হ্যাঁ’।
নাফিসা বলেন, “তার মানে তো এই নয়, আমি পাকিস্তানকে সমর্থন করি। আমি ভারতীয়, ভারতকে ভালবাসি।’’
তার আইনজীবী রাজেশ সিংভি বলেছেন, ‘‘পুলিশ সম্পূর্ণ ভুল কাজ করেছে। কেউ ভুল করলে বা কেউ কারও সঙ্গে একমত না হলে সেটাকে কখনোই দেশদ্রোহিতা বলা যায় না। এটা আমাদের সংবিধান বিরোধী।’’
হিন্দু সংগঠন বজরং দলের সদস্য রাজেন্দ্র পারমার বলেছেন, ‘‘এসব লোকেদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। ভারতে থাকছ, রোজগার করছ, আর পাকিস্তানের জয় উদ্যাপন করছ! ওঁর শিক্ষা নেওয়া উচিত। উনি স্কুলে পড়ান। ছাত্রছাত্রীদের উনি কি শিক্ষা দেবেন?’’
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পরে আগরায় তিন কাশ্মীরি পড়ুয়াকে গ্রেফতার করে যোগীর পুলিশ। আরশাদ ইউসুফ, ইনায়েত আলতাফ শেখ এবং শওকত আহমেদ গনাই তিনজনেই রাজা বলবন্ত সিংহ কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র।
ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং বিজেপি সাংসদ গৌতম গম্ভীর টুইট করে বলেন, ‘পাকিস্তান জেতায় যারা বাজি ফাটাচ্ছেন, তারা ভারতীয় হতে পারেন না। আমরা ভারতীয় দলের পাশে আছি।’
নাফিসা, বা ইনায়েতদের গ্রেফতারের ঘটনাকে সমর্থন করে ভারতের কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্ত বলেন, ‘‘ওরা ভারতের হার উদযাপন করছিলেন। এই ধরনের ঘটনা যেকোনও সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে পারে, বড় ঘটনা ঘটতে পারে। তাই যেভাবেই হোক, এগুলো বন্ধ করতে হবে।’’
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে এই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। ২০১৪ সালে একই কারণে উত্তরপ্রদেশে ৬০ জন কাশ্মীরী ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। শুধু ভারতে নয়, একই ঘটনা ঘটে পাকিস্তানেও। ২০১৬ সালে কোহলি-ভক্ত এক পাকিস্তানীকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি পাকিস্তানে বসে ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়ে কোহলিকে সমর্থন করছিলেন। সূত্র: আনন্দবাজার
এএইচ/