মাকে হত্যার পর ধানক্ষেতে লুকিয়ে রাখে ছেলে ও পুত্রবধূ
নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৭:০৯ পিএম, ৫ নভেম্বর ২০২১ শুক্রবার
পাষণ্ড ছেলে ও তার স্ত্রী
গরু বিক্রির টাকা হাতিয়ে নিতে নিজের জন্মদাত্রী মাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে মাদকাসক্ত ছেলে ও তার স্ত্রী। শুধু তাই নয়, হত্যার পর লাশ ধান ক্ষেতের মধ্যে লুকিয়ে রেখে তারা পালিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার দেউলিয়া গ্রামে ঘটে এমনই নির্মম ঘটনা।
নিহতের নাম ছবি বেগম (৪৫)। তিনি ওই গ্রামের বাবলু দেওয়ানের স্ত্রী। পুলিশ ওইদিন দুপুরে দেউলিয়া গ্রামের রাস্তা থেকে ২০০ মিটার দূরে যমুনা নদীর তীরে হাফেজ আলীর ধানক্ষেত থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে।
একইদিন সন্ধ্যায় পাশের গ্রামের একটি বাজার থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত নিহতের একমাত্র ছেলে সবুজ হোসেন দেওয়ান (২১) ও তার স্ত্রী মোছাঃ রোকসানা বেগমকে (১৮) আটক করে পুলিশ।
এদিকে, ঘটনায় নিহতের ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে ওইদিন রাতেই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ আটক স্বামী-স্ত্রীকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার সকালে জেল হাজতে পাঠায়।
এলাকাবাসী জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে গরুর ঘাস কাটার জন্য ছবি বেগম বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দেউলিয়া গ্রামের কৃষক হাফেজ আলী নিজ জমির ধান দেখতে গেলে ধানক্ষেতে ছবির লাশ দেখতে পান। লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার করলে গ্রামবাসীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে বদলগাছী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
এদিকে এই ঘটনা জানার পর মহাদেবপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ.টি.এম. মাইনুল ইসলাম, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিকুল ইসলাম ও তদন্ত (ওসি) রায়হান হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সবুজ হোসেন খারাপ সঙ্গের পাল্লায় পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। অনেক বাধা নিষেধ সত্ত্বেও সবুজ ওই পথ থেকে আর ফিরে আসতে পারেনি। উল্টো ক্রমেই সে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। টাকার জন্য সবুজ নানাভাবে পিতা-মাতার উপর অত্যাচার করে আসছিল। কয়েকদিন আগে বাড়ির একটি গরু ৫৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে তাঁর বাবা-মা। টাকাটা ছবি বেগমের কাছেই ছিল। ওই টাকা হাতিয়ে নিতে অনেক হুমকি-ধমকি ও ফন্দি-ফিকির করে সবুজ।
এদিকে বাড়িতে টাকা রাখলে সেই টাকা হাতিয়ে নেয়ার আশঙ্কায় ছবি বেগম আঁচলে ও কোমরে নিজের কাছেই টাকা রাখতেন। ছবি বেগম ওইদিন দুপুরে বাড়ির পাশে মাঠে ঘাস কাটতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। পরে গ্রামের একজনের পাকা ধানক্ষেত থেকে ছবি বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মৃত ছবি বেগমের স্বামী দেওয়ান বাবুল বলেন, নেশার জগত থেকে সবুজকে ফেরাতে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। বর্তমানে এমন অবস্থা হয়েছে যে, ছেলে আমাদের কোনো কথাই শুনতো না। উল্টো সবুজ আমাদের উপর চড়াও হয়ে আমাদের নানাভাবে অত্যাচার করতো।
ঘটনার দিনের কথা বলতে গিয়ে বাবুল দেওয়ান বলেন, সেদিন আমি বাড়িতেই ছিলাম। মাঠ থেকে ফিরতে দেরী হওয়ায় পরে মাঠে গিয়ে দেখি তার লাশ। এই সবুজ ও তার বউ মিলেই তাদের মাকে হত্যা করে লাশ ধান ক্ষেতের মধ্যে লুকিয়ে রাখে।
বদলঘাছী থানার ওসি (তদন্ত) রায়হান হোসেন জানান, এই ঘটনার পর থেকে সবুজ ও তার স্ত্রী পলাতক ছিল। ওইদিন সন্ধ্যায় তাদের পাশের বাজার থেকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ছবি বেগমকে শ্বাসরোধে হত্যার পর টাকা হাতিয়ে নিয়ে তার লাশ ধান ক্ষেতের মধ্যে লুকিয়ে রেখে সেখান থেকে সরে পড়ে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।
বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিকুল ইসলাম বলেন, লাশ উদ্ধারের দুই ঘণ্টার মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। টাকার জন্য ছেলে সবুজ হোসেন ও তার স্ত্রী রোকসানা মিলে পরিকল্পিতভাবে ছবি বেগমকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে হাফেজ আলীর ধান ক্ষেতে লাশটি লুকিয়ে রেখেছিল বলে স্বীকার করেছে। এই ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এনএস//