ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

কোভিডের উচ্চ ঝুঁকির জিন দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের দেহে বেশি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:১৮ পিএম, ৫ নভেম্বর ২০২১ শুক্রবার | আপডেট: ০৯:২৩ পিএম, ৫ নভেম্বর ২০২১ শুক্রবার

ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় একটি জিনের সন্ধান পেয়েছেন যে জিনটি কোভিড সংক্রমণের কারণে ফুসফুস বিকল হওয়া এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশের শরীরে এই উচ্চ ঝুঁকির জিন থাকে। সেই তুলনায় ইউরোপীয়দের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশের শরীরে এই জিন আছে।

গবেষকরা বলছেন, এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমানোর উপায় হচ্ছে টিকা নেয়া।

ব্রিটেনে কোন কোন জনগোষ্ঠীর মধ্যে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষের কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কেন বেশি তার ব্যাখ্যা খুঁজতে চালানো গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে দ্য নেচার জেনেটিক্স নামে একটি বিজ্ঞান সাময়িকী, যে গবেষণায় এই ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে।

এর আগে জিনের ওপর চালানো গবেষণার ধারাবাহিকতামূলক পরীক্ষায়, সেইসাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং নতুন অণু সংক্রান্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এই নির্দিষ্ট জিনটির সন্ধান পেয়েছেন। কোভিডের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য দায়ী এই জিনটির নাম- এলজেডিএফএল১।

তারা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ এই জিনটি প্রায় দুই শতাংশ আফ্রিকান-ক্যারিবীয় অঞ্চলের মানুষের শরীরে রয়েছে, এবং ১.৮% পূর্ব এশীয় বংশোদ্ভুতদের শরীরে রয়েছে।

গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক জেমস ডেভিস বলছেন, এই ঝুঁকিপূর্ণ জিনটি সব ধরনের জনগোষ্ঠীর শরীরে সমান অনুপাতে না থাকার বিষয়টি বিজ্ঞানীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে তিনি এটাও বলেছেন যে একজন মানুষের ঝুঁকি কম বেশি হওয়ার পেছনে অন্যান্য কারণও থাকে - বিশেষ করে বয়সের বিষয়টি। 

"কোন কোন জনগোষ্ঠীর জন্য কোভিডের ঝুঁকি বেশি থাকার পেছনে আর্থ-সামাজিক যে কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে সেগুলোরও অবদান থাকা সম্ভব," তিনি বলছেন।

জেমস ডেভিস বলছেন, "আমরা তো চাইলে বংশগতভাবে পাওয়া শরীরের জিন বদলে ফেলতে পারব না। কিন্তু এই গবেষণার ফলাফল এটা প্রমাণ করছে যে এই জিন যেহেতু একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য বাড়তি ঝুঁকির কারণ, তাই এই জনগোষ্ঠীর জন্য টিকা নেয়াটা বিশেষভাবে ফলদায়ক হতে পারে।"

গবেষকরা বলছেন, এই জিন যাদের শরীরের আছে করোনাভাইরাস হলে তাদের ফুসফুস বেশিরকম আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে।

তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ফুসফুসকে বাইরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে যে কোষের আস্তরণ থাকে, যা কোভিড সংক্রমণ হলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কাজ করে, ঝুঁকিপূর্ণ এই জিন সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া নষ্ট করে দেয়।

ফুসফুসের আবরণের এই কোষগুলো যখন করোনাভাইরাসের মুখোমুখি হয়, তখন তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলের মধ্যে অন্যতম হল, কোষগুলো তখন চেহারা ও কার্যপদ্ধতি বদলে বিশেষ ধরনের কোষে রূপান্তরিত হয়ে যায় এবং ভাইরাসকে ঠেকাতে উদ্যোগী হয়।

করোনাভাইরাস কোন কোষের সাথে আটকে থাকার জন্য যে প্রোটিনের ওপর নির্ভর করে তার নাম এসিই-২। ফুসফুসের আবরণের কোষগুলো তাদের আচরণ বদলে ফেলে এই প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, ফলে এই প্রোটিনের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।

কিন্তু যাদের শরীরে ঝুঁকিপূর্ণ এলজেডিএফএল১ জিন আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া একেবারেই কাজ করে না। ফলে কোভিডের জীবাণু ঢুকলে, তাদের ফুসফুসের কোন সুরক্ষা শরীর দিতে পারে না।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ঝুঁকিপূর্ণ ধরনের জিনটি ফুসফুসকে বিকল করে দিয়ে মৃত্যুর আশংকা বাড়িয়ে তোলে। তবে শরীরের অন্য রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এই জিন ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না।

ফলে টিকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ালে এই জিন সেটা নষ্ট করতে সক্ষম নয়। কাজেই টিকা কার্যকর থাকে বলে তারা বলছেন। 

এই বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই আবিষ্কারের ফলে সুনির্দিষ্টভাবে ফুসফুস বাঁচানোর জন্য বিশেষ ওষুধ উদ্ভাবনের পথ খুলে যাবে। বর্তমানে করোনার চিকিৎসায় যে ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে তা শরীরের পূর্ণ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করতে কাজ করে। সূত্র: বিবিসি

এসি