ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

শিকলে বাঁধা রুমার জীবন

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০২:৪৩ পিএম, ৬ নভেম্বর ২০২১ শনিবার

মানসিক রোগী হয়ে শিকলে বন্দি রুমা

মানসিক রোগী হয়ে শিকলে বন্দি রুমা

স্বামীর সংসারে হেসে খেলে বেড়ানো তরুণীটি এক মাস ধরে শিকলে বেঁধে রেখেছেন অসহায় বাবা-মা। দারিদ্র্যতার কারণে সুষ্ঠু চিকিৎসা করাতে না পারায় অসুস্থ জীবনযাপন করছে তরুণীটি। মেয়ের চিকিৎসার চিন্তা পরিবারের কাছে বিলাসিতার সমান।

যশোরের শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়নের শুড়া গ্রামে বিনা চিকিৎসায় রুমানা আক্তার রুমা (২০) এখন মানসিক রোগী হয়ে শিকলে বন্দি। অভাব-অনটনে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তার পরিবার ও স্বজনরা। 

এক ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে রুমাকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বাবা মনতাজ আলীসহ পরিবারের লোকজন। চাঁদা তুলে ডাক্তার দেখানো হলেও চিকিৎসকরা বলেছেন মানসিক ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। 

উপজেলার লক্ষনপুর ইউনিয়নের শুড়া গ্রামের দিনমজুর মনতাজ আলীর মেয়ে অসহায় এ রুমা।

রুমার বাবা মনতাজ আলী জানান, ২০২০ সালের মার্চের দিকে মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়। স্বামীর সংসার ভালোভাবেই করছিলো। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর সংসার করার পর একমাস আগে হঠাৎ মেয়ের মাথায় সমস্যা দেখা দিলে তার স্বামী ও শশুর বাড়ির লোকজন এসে মেয়েকে রেখে যায়। বলে যায়, মেয়ে পাগল হয়ে গেছে। চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হলে আবার আমরা নিয়ে যাবো। এরপর তারা আর কোন খোঁজখবরও নেয়নি। 

পাঁচ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। তার একার আয় দিয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণ চলে না। সংসারে অভাব-অনাটন লেগেই আছে। অর্থের অভাবে মেয়ের চিকিৎসা করতে পারছেন না তিনি। তাদের কোনো জায়গা জমিও নেই। পরের জমিতে কোনোভাবে মাটির একটা ঘর করে বসবাস করেন। তিনি নিজেও প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাঝে মধ্যে শরীর ভালো থাকলে দিনমজুরি করে চাল-ডাল কেনেন। 

তিনি আরও জানান, তার মেয়ের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে আবেদন-নিবেদন করছেন। তাতে যে সহযোগিতা পেয়েছেন তা দিয়ে মেয়ের চিকিৎসা করাতে তিনি ব্যর্থ হয়ে পড়েছেন। ইচ্ছা থাকার পরও টাকার অভাবে মেয়েকে ভালা কোনো ডাক্তার দেখাতে পারছেন না বলে জানান তিনি।

রুমা মা সোনাভান বিবি বলেন, আমরা একটি মাটির ঘরে পরিবারের ৫ জন বসবাস করি। আমি সারাদিন লোকের বাড়ি কাজ করে কোন রকম সংসার চালাই। স্বামী দিন মজুরের কাজ করে। প্রায় সময় অসুস্থ্য থাকে। কাজ করতেও পারে না। তিনবেলা ঠিকমত খাওয়াই হয় না, তারপর মেয়ের চিকিৎসা কি দিয়ে করবো। 

মেয়ের যন্ত্রণায় আমার শান্তি নেই। গালিগালাজ করে, ইট মেরে ঘরের টালি ভেঙ্গে ফেলছে। অতিষ্ঠ করে ফেলেছে আমাদের। আমি এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। মেয়েটার ভালো করে চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো সুস্থ হতো। কিন্তু টাকা-পয়সার জন্য ভালো চিকিৎসা করাতে পারছি না।

মামা অলিয়ার রহমান জানান, বাজার থেকে কিছু টাকা উঠিয়ে যশোর ২৫০ শষ্যা জেনারেল হাসপাতালে মাথার ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। তারা বলেছেন, মানসিক ডাক্তার দেখাতে খুলনা বা পাবনাতে নিতে। যে টাকা উঠানো হয়েছে ওই টাকা দিয়ে তো কিছুই হয়নি। এ এলাকাটি গরিব, তাই মানুষও টাকা দিতে পারছে না। আমরা চাই সরকারিভাবে মেয়েটির চিকিৎসা করানো হোক। সঠিক চিকিৎসা পেলে ভালো হতে পারে রুমা। ফিরে আসতে পারে স্বাভাবিক জীবনে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: মোমিনুর রমান জানান, মনতাজ আলীর পরিবার অসহায়। আমি বিষয়টি দেখবো এবং তার চিকিৎসার জন্য সাধ্যমত সহযোগিতা করবো।

ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারা খাতুন বলেন, সংবাদটি জানতে পারলাম। আমি খোঁজ নিয়ে তাকে এবং তার পরিবারকে সহযোগিতা করবো। 

সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য বিত্তশালী ও সরকারি সহায়তার দাবি পরিবারের। মেয়ের চিকিৎসার জন্য সকলের কাছে সহযোগিতার কামনা করছেন। বিষয়টি সম্পর্কে ০১৮৬০৯৯৫২৪১ নম্বরে ফোন করে জেনে নিতে পারবেন। ফোন নম্বরটি মেয়ের মামা অলিয়ার রহমানের।

এএইচ/