যৌক্তিক কারণে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে: অর্থমন্ত্রী
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:৩৭ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০২১ বুধবার
যৌক্তিক কারণেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব আমাদের এখানেও পড়েছে। যৌক্তিক কারণেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে।’
বুধবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে অর্থমন্ত্রী জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে এ কথা বলেন।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন— করোনায় মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ট্রাক, বাস, লঞ্চের ভাড়া বেড়েছে। জনগণের ওপর এই চাপ দেওয়াটা কতটা যৌক্তিক?
এসব প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পুরোটাই যৌক্তিক। সরকার কোত্থেকে টাকা পাবে? রেভিনিউ অর্জন না করলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলবে কীভাবে? রেভিনিউ আদায় করেই সরকারকে কাজ করতে হচ্ছে। তারপরও সরকার যতটুকু সম্ভব এটা সামঞ্জস্য করে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘ভালো দিক দেখবেন না, তেলের দাম কি আমরা বাড়িয়েছি? আমাদের সরকার বাড়িয়েছে? কোনো জাহাজে যদি করোনা আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায় তাহলে সেই জাহাজ কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে জাহাজ চলতে পারে না, মাসের পর মাস সাগরে আটকে থাকে; সেই চার্জ শিপিং কোম্পানিকে করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে যায় আর সেগুলো আমরা যারা ক্রেতা তাদের ওপর এসে পড়ে। এখানে সরককারের কিছু করার থাকে না।’
ডিজেলের দাম বাড়ানোর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ওপর চাপ পড়বে, এর কোনো বিকল্প ছিল কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্বীকার করি এতে সাধারণ মানুষের কিছুটা সমস্যা হবে। যখন দাম কমে আমরা দাম কমাই, যখন বাড়ে বাড়াই। এখন কি পরিমাণ দাম বেড়েছে সেটা জানেন? আগামী মিটিংয়ে আমরা আপনাদের জানাবো গত দুই বছর কী পরিমাণ বেড়েছে। আমরা কতটা বাড়িয়েছি। আপনারা তাহলে বুঝতে পারবেন সরকার কতটা বহন করতে পারে। যারা ভোক্তা, তাদেরকেও কিছুটা তাদের বহন করতে হবে।’
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ৪৩ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে, কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম কমেনি এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার টাকা নিয়ে কী করে? এই যে সেফটিনেট প্রকল্পগুলো আছে, এগুলো তো সরকার টাকা প্রিন্ট করে চালাচ্ছে না। সরকারকে টাকা আয় করে চালাতে হয়। এগুলো তো শেয়ার করতে হয়। তারপরও সরকার যতটুকু পারে শেয়ারিং করে। সামান্য যেটা না হলে নয় সেটা ভোক্তার ওপর দেই।’
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির হিসাবে ১০ শতাংশ ভাড়া বাড়ার কথা থাকলেও ২৭ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়ে সিপিডির বক্তব্য প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আমাকে দেখতে হবে। আমি দেখে জবাব দেব। আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করব। তাদের খরচ কত, চার্জ কত করেছে সেটি আলোচনা করে জানাব।’
বাসভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আগে আমাকে জানতে হবে মূল্য বৃদ্ধির কারণ। আমি যদি দেখি কোনো ভিত্তি ছাড়া দাম বাড়ানো হয়েছে, সেটা বিবেচনা করার অবশ্যই সুযোগ রয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম যখন আন্তর্জাতিক বাজারে কম ছিল সেই সুবিধা কি আমরা সবাই পাইনি? সবাই সুবিধা পেয়েছি। এখন দাম বেড়েছে, কী পরিমাণ বেড়েছে নেটে গেলে পাবেন। আমরা তেল উৎপাদন করি না, আমরা ভোক্তা। আমরা রিসিভিং করি, আমাদের এখানে হাত দেওয়াও সম্ভব নয়। তারপরও আমরা চেষ্টা করবো যে পরিমাণ বাড়বে সে পরিমাণ যেনো আমাদের ভোক্তারা সহ্য করতে পারেন সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখা হবে। আমি একজন নাগরিক ও অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি বলছি।’
তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী হিসেবেও আমার দায়িত্ব আছে। আমাকে রাজস্ব জোগান দিতে হয়। রাজস্ব জোগান দিতে না পারলে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে না। আমরা পিছিয়ে যাব, আমরা পিছিয়ে যেতে চাই না। আমরা শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে কাজটি করব। আমরা শেয়ার করব, যতক্ষণ সম্ভব সরকার বহন করবে। সরকার বহন না করতে পারলে আপনারা জানতে পারবেন। আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে জেনে আপনাদের জানাব।’
আরকে//