একজন গৃহহীনও থাকলে যুবলীগ আশ্রয়ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে: শেখ পরশ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:১০ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশ আওয়মী যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ও সকাল সাড়ে ৯টায় বনানী কবরস্থানে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মণিসহ ১৫ আগস্টে সকল শহীদের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়।
এছাড়া সকাল ১১টায় শিল্পকলা একাডেমির ৬নং গ্যালারীতে আলোচনা সভা, ৩য় ধাপে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি’র চিত্রকর্ম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিভিন্ন জেলায় গৃহহীন পরিবারের মাঝে ২২টি ঘর হস্তান্তর করে যুবলীগ। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ঘর দাতা ও গ্রহীতাদের নামের তালিকা ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য, সাবেক শিল্প মন্ত্রী, আওয়ামী যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান জননেতা আমির হোসেন আমু, এমপি। প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী, আওয়ামী যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এমপি। সভাপতিত্ব করেন-যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সঞ্চালনা করেন-যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা।
উদ্বোধকের বক্তব্যে জননেতা আমির হোসেন আমু বলেন, যুবলীগ সম্পর্কে কথা বলতে গেলে আগে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে বলতে হবে। মণি ভাইয়ের সাথে আমার আমৃত্যু সম্পর্ক ছিল এটা সবারই জানা। তিনি ১৯৬০ সালে বিএম কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ-তে ভর্তি হন। তখন আইয়ুব খানের মার্শাল ‘ল’-এর কারণে রাজনৈতিক সংগঠন নিষিদ্ধ ছিল। তখন তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের। সেই সময়ে ঝুঁকি নিয়ে তিনি ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করেছিলেন। আমার সুযোগ হয়েছিল তার সাথে খুলনা, যশোর ও ফরিদপুরে যাওয়ার। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা বাস্তবায়নে শেখ মণি’র নেতৃত্বে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে একত্রিত করে দাবিকে আরও বেগবান করেছিলেন। এই ছয় দফা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন জীবন দিয়েছেন। যার কারণে ছয় দফা দাবি ও যৌক্তিকতা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে তাকেও হত্যা করেছিল খুনিরা। কারণ তারা শেখ মণিকে জানতো, তার নেতৃত্ব গুণকে জানতো। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে এদেশের সমস্ত আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করার সক্ষমতা তার ছিল। আর একারণেই তাকেই সর্বপ্রথম খুনিরা হত্যা করে।
যুবলীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বলতে চাই-শেখ মণি ভাইয়ের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে আমাদের এই প্রগতিশীল যুব সংগঠন অত্যন্ত সমাদৃত হয়েছিল এবং শেখ মণি’র একটি বিরাট ভাবমূর্তি বিশ্ব দরবারে বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের যুবসমাজের কাছে ভাবমূর্তি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলো। আজকে যুবলীগ বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বিশেষ করে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পর তাঁর নেতৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করা, তাকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া, তাঁর সমস্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যুবলীগ ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করেছে যার প্রমাণ গতকাল শহীদ নূর হোসেন দিবস পালিত হল সেই নূর হোসেন ছিলেন যুবলীগের সদস্য, ফাত্তাহ ছিল যুবলীগের সদস্য, রাজশাহীর চারঘাটের মইনুল ছিল যুবলীগের সদস্য। এ রকম বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো-ছিটানো যুবলীগ কর্মী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যুবলীগকে আরও সুসংগঠিত করে শেখ মণি’র সুযোগ্য সন্তান শেখ পরশের নেতৃত্বে যুবলীগ এগিয়ে যাবে। মানবিক যুবলীগ হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে করোনাকালীন সময়ে বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়া, অসহায় কৃষকের ধান কেটে দেওয়া, গৃহহীনদের ঘর তৈরি করাসহ নানা মানবিক কাজে যুবলীগ আজ প্রশংসিত, আজকে আমি যুবলীগ কর্তৃক ৩য় ধাপে গৃহহীনদের ঘর দান এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি’র কর্মচিত্র প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ সেলিম এমপি বলেন, ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। যুবলীগ গঠন করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু মণি ভাইকে বলেছিলেন “মণি এই বাংলাদেশে আমার ডাকে যে সমস্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা যুবক জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল তারাই পারবে আমার যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পূণর্গঠন করতে এবং তাদের নিয়ে তুমি একটি যুব সংগঠন করো। বঙ্গবন্ধু মণি ভাইকে বলেছিলেন-যুবলীগ হবে আমার দেশে গড়ার প্রধান কারিগর। তারাই পারবে আমার সোনার বাংলা গড়তে। আর সোনার বাংলা গড়তে হলে আমার সোনার ছেলে দরকার। যুবলীগকে বঙ্গবন্ধু সোনার ছেলে হিসেবে সম্বর্ধনা করেছেন। কারণ যুবলীগ যখন গঠন হয় তাদেরকে ছাত্রলীগ থেকে নেওয়া হয়। এই ছাত্রলীগ শুধু বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশকে স্বাধীন করে নাই। স্বাধীনতার পূর্বে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচিগুলো ছাত্রলীগের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে পৌছে দিতেন। এই ছাত্রলীগ দিয়েই মণি ভাই যুবলীগ গঠন করেছিলেন এবং ৩ বছরের মধ্যে তাঁর নেতৃত্ব আর গুণাবলী দিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে একটি শক্তিশালী যুব সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন।
তিনি যুবলীগের উদ্দেশ্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু যেমন তাঁর ৫৫ বছর বয়সে ১৩ বছর জেল খেটেছেন তেমনি মণি ভাই তাঁর ৩৫ বছর বয়সে ৫ বছর জেল খেটেছেন। তাই আজ যুবলীগের নেতা-কর্মীদের শেখ মণি ভাই সম্পর্কে জানতে, তাঁর আদর্শকে বুঝতে হবে। সুতরাং আদর্শকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে নিজেকে ত্যাগী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে ত্যাগ হচ্ছে সবচেয়ে বড় আদর্শ। যাদের ত্যাগ আছে তাদের কোন মৃত্যু নাই। তারা সারাজীবন জেগে থাকে। মানুষের জন্য যাদের ভালবাসা তাদের মৃত্যু নাই। বঙ্গবন্ধুরও কোন মৃত্যু নাই। জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু আরো বেশি শক্তিশালী। ঠিক তেমনি জীবিত মণি ভাইয়ের চেয়ে মৃত মণি ভাই যুবসমাজের কাছে অনেক বেশি শক্তিশালী।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের তালিকা ঘোষণার পরে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার গৃহহীনদের গৃহদানের অনুসরণে এই কর্মসূচি। যুবলীগের আগে কোন রাজনৈতিক সংগঠন এই রকম যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়নি। আমি একটু খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছি কোথাও দেখি নাই কোন সংগঠন এইভাবে গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর তৈরি করে দিছে। সংগঠনের তরফ থেকে এই প্রথম বাংলাদেশে যুবলীগ এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। অনেকে মনে করছেন এটা জাতীয় উন্নয়নে এমন কি এসডিজি উন্নয়নেও প্রভাব ফেলবে। এটা মানুষের জীবন মান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী একাধিক কারণে ভীষণভাবে তাৎপর্যপূর্ণঃ একদিকে আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, অন্যদিকে স্বাধীনতার মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষ পূর্তি। “স্বাধীনতা” ও “বঙ্গবন্ধু” শব্দ দুইটি একে অপরের পরিপূরক আমাদের কাছে। বঙ্গবন্ধু ছাড়া স্বাধীণতা শুধু সম্পূর্ণ নয়, অসম্ভব।
তিনি আরও বলেন, আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা, আমাদের প্রাণপ্রিয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা ও দূরদর্শীকতার কারণে আমরা ১৩ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করছি। তাঁর নেতৃত্বে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি। তিনি আরও বলেন-এই নতুন বাস্তবতায় আমাদের দায়িত্ব ও ভূমিকা অনেক গুণ বেড়ে গেছে। ঐতিহাসিকভাবে যুবলীগ সবসময় বিভিন্ন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। যার উদাহারণ, ১৯৮৭ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূরে হোসেন। আমি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধাভরে আরও স্মরণ করি ১৫ আগস্টের পর প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ বগুড়ার খসরু ও চট্টগ্রামের মৌলভি সৈয়দ আহমেদসহ যুবলীগের অগণিত নেতা-কর্মীদের। যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সর্বোচ্চ আত্মহুতি দিয়েছেন। বর্তমান প্রজন্মের যুবলীগকেও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের অবকাঠামোমূলক ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসাবে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রয়োজনে দলের মধ্যেও যে কোন দুর্নীতির বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করবে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। যুবলীগ বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এবং বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সর্বদা আপসহীন। পরিতাপের বিষয় ১৩ বছরেও আমাদের দুর্দিনের অগণিত নেতা-কর্মী এখনো অবহেলিত এবং নির্যাতিত হচ্ছে। কিছু অসাধু তথাকথিত নেতৃবৃন্দ ব্যক্তি স্বার্থে দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা দিয়ে আমাদের পরিক্ষিত, দুঃসময়ের নেতা-কর্মী এখনো অবহেলিত এবং নির্যাতিত হচ্ছে। কিছু অসাধু তথাকথিত নেতৃবৃন্দ ব্যক্তি স্বার্থে দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা দিয়ে আমাদের পরিক্ষিত, দুঃসময়ের নেতা-কর্মীদের বঞ্চিত করছে। এটা সংগঠনের জন্য অপরিসীম ক্ষতিকর। এর মাধ্যমে বিএনপি-জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীরা পুনর্বাসিত হচ্ছে ও দলের ভিতরে ঢুকে আমাদের চরম ক্ষতিসাধণ করছে। আমি মনে করি, এটা স্বাধীনতা বিরোধী চক্র, জামাত-শিবির ও বিএনপির সুপরিকল্পিত নকশা আমাদের সংগঠনকে দুর্বল করে আমাদের মধ্যে ফাটল ধরানোর। এদের বিরুদ্ধেও বর্তমান যুবলীগের নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে প্রতিরোধ করতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে কথা দিচ্ছি, যে তৃণমূল থেকে আমাদের বঞ্চিত ও যোগ্য নেতৃবৃন্দদেরকে মূল্যায়ন করে এই চক্রান্ত আমরা প্রতিরোধ করবো।
১৯৭৪ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি জাতীয় কংগ্রেসে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আত্ম সুদ্ধ যুবশক্তির উন্মেষ চাই।” যুব সমাজের উপর বঙ্গবন্ধুর ছিল অগাধ বিশ্বাস। আমি মনে করি আমাদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে ভূমিকা পালন করে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হচ্ছে দেশপ্রেম ভিত্তিক রাজনীতি, সততার রাজনীতি ও শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণ। আর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন হচ্ছে, অর্থনৈতিক মুক্তি তথা, আত্মনির্ভরশীল ও মর্যাদাশীল একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আমি বিশ্বাস করি ন্যায়পরায়ণ এবং সমঅধিকারের ভিত্তিতে সমাজ ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে যুবলীগ ভূমিকা রাখবে। বঙ্গবন্ধুর “আত্মসুদ্ধ” যুবশক্তি হতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের নিজেদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। দক্ষতা বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, দক্ষতার কোন বিকল্প নাই। সাফল্যের সহজতর পথ খুঁজলে চলবে না। সাফল্য অর্জন করতে হবে যোগ্যতা দ্বারা। আইনের শাসনে বিশ্বাস রাখতে হবে এবং ন্যায় পরায়ণ হতে হবে।
যুবলীগের নেতা-কর্মীদের বলতে চাই, আমাদের সামনে আমাদের নেত্রী জ্বলন্ত উদাহরণ, যিনি ৪ যুগ ধরে সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীর অন্যতম সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে আজ সর্বজন স্বীকৃত। তিনি সাফল্যের উল্টো পথ কোনদিন খোঁজেন নাই। খুঁজলে তার পিতার হত্যাকাণ্ড তিনি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল দ্রুত বিচার আইনে বিচার করতে পারতেন। তিনি তা করেন নাই। আপস করলে বিদেশী প্রভুদের সাথে আপস করে ২০০১ সালেও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে পারতেন। তিনি তা করেন নাই। আমরা গর্ব বোধ করি যে আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে রাজনীতি করি। তিনি এ দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে চলেছেন। যুগান্তকারী উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছেন, যেটা বিশ্বের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মেধাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে তাঁর পরিকল্পনা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে দক্ষ যুবশক্তি হয়ে যুবলীগ ভূমিকা রাখবে। তাই আমি দক্ষতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করতে সকল যুবলীগের ভাই-বোনদের তাগিদ দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমি প্রথমেই দুই বছর আগে দায়িত্ব নিয়ে একটা বার্তা দিয়ে ছিলাম যে কাউক অত্যাচার-নির্যাতন করা যাবে না, কারণ আমাদের নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যিনি সারাটা জীবন অত্যাচার আর শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধেই আজীবন সংগ্রাম করেছে। তাই তাঁর বাংলাদেশে, তাঁর মানুষ নির্যাতিত হবে এটা মেনে নেয়া যায় না। এটা বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ মেনে নিতে পারে না। তাই আমরা এই উগ্রবাদী মৌলবাদী শক্তিকে প্রতিহত করবো এবং যখনই এরা মাথা চারা দিয়ে উঠবে তখনই তাদেরকে ঘায়েল করতে হবে। তবে আমি বলব এই অপশক্তি যাতে মাথা চারা দিয়ে না উঠে সে দায়িত্ব শুধু সরকারের একার না। এটা যে কোন সভ্য সমাজের সকল নাগরিকের দায়িত্ব, সকল পেশাজীবী সমাজের দায়িত্ব, এবং আমাদের সবার দায়িত্ব।
পরিশেষে, আমার বাবা শেখ ফজলুল হক মণি সম্বন্ধে বলব, আমরা পারিবারিকভাবে তাঁকে নিয়ে অত্যন্ত গর্ববোধ করি। গর্ববোধ করি প্রথমত একারণে যে তিনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন অন্যতম সংগঠক, মুজিব বাহিনীর প্রধান। তিনি ৬ দফাসহ ৬০ এর দশকের সকল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, জেল খেটেছেন। দ্বিতীয়ত এবং সর্বোপরি, তিনি বীরের বেসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে চলে গেছেন। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন আর বঙ্গবন্ধুকে আমরা হারাতাম তাহলে তাঁর জন্য অত্যন্ত কষ্টের। তিনি তাঁর ৩৫ বছরের জীবনে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সৈনিক হিসাবে মাথা উঁচু করে হেঁটেছেন। এখনো আমরা তাঁকে বীরের বেসেই কল্পজগতে বিচরণ করতে দেখি। এখানেই আমাদের সান্ত্বনা। এখানেই আমাদের শক্তি।
তিনি আরও বলেন, বহু বছর আমরা কোন বিচার পাই নাই, বরং বেড়ে উঠার সময় আমরা এটা জেনে বড় হয়েছি যে, কোনদিন বিচার করা যাবে না, কারণ আইন করে বিচার বন্ধ করা হয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপট আমাদেরকে আরও বেশি ধৈর্য ধরতে শিখিয়েছে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে শিখিয়েছে। আমরা আমাদের কর্ম দ্বারা ১৫ই আগস্টে আমাদের উপর যেই অন্যায় ও অত্যাচার হয়েছে সেটার জবাব দিয়েছি। সুতরাং সভ্য আচরণ আর গঠনমূলক কর্ম দ্বারাই অন্যায় ও অবিচারের জবাব দিতে আমরা শিখেছি। বঙ্গবন্ধু ও শেখ মণিকে হারানোর যেই শোক সেই শোক থেকে শক্তি, শক্তি থেকে জাগরণ সৃষ্টি করে বর্তমান প্রজন্ম এই সমাজকে মুক্তিযুদ্ধে চেতনা দ্বারা লালিত একটা বিজ্ঞানভিত্তিক প্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
এসময় কেন্দ্রীয়, মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসি