ঢাকা, রবিবার   ১৩ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২৭ ১৪৩১

মোংলায় মেঘা প্রকল্প ঘিরে তৎপর চোরাই সিন্ডিকেট 

মোংলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:২৭ এএম, ১২ নভেম্বর ২০২১ শুক্রবার

মোংলা শিল্পাঞ্চলসহ সরকারি বিভিন্ন মেঘা প্রকল্প ঘিরে শক্তিশালী চোরাই সিন্ডিকেট তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ ও মালামাল চুরি করে নিচ্ছে। দু’দফায় কোস্টগার্ডের অভিযানে চুরি যাওয়া প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল উদ্ধার হলেও চুরি হয়েছে আরও কয়েক দফা। এতে অর্থিক ক্ষতি সহ উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। 

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এক সময়ের মৃত প্রায় মোংলা সমুদ্র বন্দর বর্তমান সকারের আমলে প্রাণচাঞ্চাল্যতা ফিরে পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে পণ্য আমদানী-রপ্তানী সহ বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন। কিন্তু বন্দরের গতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয়ে উঠেছে বিভিন্ন চোরাকারবারী গ্রুপ। এ চোর চক্র বাণিজ্যিক জাহাজের পাশাপাশি বন্দর এলাকায় অবস্থিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান, রামপাল কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে হানা দিচ্ছে। নিরাপত্তা কর্মী সহ বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে লুট করে নিচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত ক্যাবল, যন্ত্রাংশ, এসএস পাইপ, কাস্টিক, তামা, লোহা, জেনারেটর সহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে না আসতেই চোর চক্রের সদস্যরা নেমে পড়ে চুরি ও লুটের কাজে। 

সাম্প্রতিক সময়ে এ চক্রের সদস্যরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। 

জানা গেছে, চোর চক্রটি লুট করা মালামাল চিলা, জয়মনি ও কানাইনগর সহ মোংলা পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় মজুত করে। পরে তা ট্রাক যোগে খুলনা, যশোর, ঢাকা ও চট্রগ্রামে পাঠায়। 

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কোস্টগার্ডের দু’দফা অভিযানে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা মূল্যের চোরাই মালামাল সহ দুটি ট্রলার আটক হয়। 

এ বিষয়ে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের কর্মকর্তা লে. কমান্ডার হাসানুজ্জামান (বিএন) জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে প্রথম দফায় কানাইনগর পশুর নদী এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৩৫০ কেজি ওজনের ২৩টি (২০ ফিট) এসএস পাইপ নৌকাসহ রবিউল শেখ (২৫) নামের ১ জন চোরাকারবারীকে আটক করা হয়। একই এলাকায় দ্বিতীয় দফায় পরিত্যক্ত অবস্থায় চোরাইকৃত ৩৫০ কেজি ওজনের ০৯টি (২০ ফিট) এসএস পাইপ ও ৬০ কেজি ওজনের ৩৯টি (১৮ ফিট) এসএস পাইপ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মালামলের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬৮ লাখ টাকা। পরবর্তীতে জব্দকৃত মালামাল সহ আটক চোর চক্রের সদস্যকে মোংলা থানায় সোপর্দ করা হয়। 

এ খবর পেয়ে রামপাল কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদুৎ কেন্দ্রে কর্মরত ভারত হেভি ইলেকট্রিকলস লিঃ প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সহ ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল থানায় উপস্থিত হয়। তারা সকল মালামাল দেখে নিশ্চিত করেন যে- পাচার হওয়া মালামাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে চুরি করা হয়েছে।

এ বিষয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের কাজের জন্য উক্ত মালামাল ভারত থেকে আনা হয়েছিল। বিভিন্ন সময় আরও লাখ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল লোপাট হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

এ ঘটনায় রামপাল থানায় একাধিক অভিযোগ ও মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে প্রকল্পের নিরাপত্তা বেষ্ঠনীর মধ্যে কিভাবে চোরা চক্রটি আনা গোনা করে সেই প্রশ্নে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

চোরা গ্রুপের তৎপরতা প্রসঙ্গে মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, কোস্টগার্ড অভিযানে উদ্ধার মালামাল ও এক চোরাকারবারী আটক হওয়ার ঘটনায় মোংলা থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ মামলার সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত করছে। একই সঙ্গে আটককৃত ব্যক্তিকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। 

এতে সিন্ডিকেট চক্রকে দ্রুত শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি। 
এসএ/