কারাগারে থেকেও চেয়ারম্যান নির্বাচিত
নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১০:৫১ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০২১ শুক্রবার
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আমান উল্যাহপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন মো. বাহরুল আলম সুমন। তিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ও ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি। গত ২৭ অক্টোবর নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের দিন উপজেলা পরিষদে যাওয়ার পথে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।
পরবর্তীতে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী তাকে চৌমুহনীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করে। ফলে নির্বাচনে প্রচারনা না চালিয়েই কারাগারে চলে যান তিনি।
এদিকে, নির্বাচনের ২/৩ দিন আগে সুমনের চাচাতো ভাইয়ের ফেসবুক আইডিতে একটি ছবি পোস্ট করা হয়। ছবিটির মূল ফোকাস ছিল সুমনের ছোট্ট ছেলে ওমর। যাতে দেখা যায়, ওমর একটি পোস্টার নিয়ে সড়কের পাশে দাড়িঁয়ে রয়েছে। যাতে লেখা ছিলো, ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম, আমার বাবার মুক্তি চাই, ঘোড়া মার্কায় ভোট চাই’। এই পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ভোটারদের সহানুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
জানা গেছে, উপজেলার ১নং আমানউল্যাপুর ইউনিয়নে বিএনপি নেতা মো. বাহরুল আলম সুমন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। গত বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি ২১৫ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। ওইদিন রাতেই বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রাহাত তানভীর চৌধুরী বেসরকারিভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
আমানউল্যাপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এর মধ্যে মো. বাহরুল আলম সুমন ৩ হাজার ১০৬ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল হুদা মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ৮৯১ ভোট, আর নৌকার প্রার্থী আরিফুর রহমান মাহমুদ পেয়েছেন ১ হাজার ৭০৫ ভোট।
সূত্র জানায়, গত ১৫ অক্টোবর চৌমুহনীতে সাম্প্রদায়িক হামলার মামলায় গত ২৭ অক্টোরব চৌমুহনী থেকে র্যাব-১১ এর সদস্যরা সুমনকে গ্রেপ্তার করে। পরে ২৯নং মামলার ৮২নং আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে বিচারিক আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে পরিবার ও দলীয় লোকজন তাঁর পক্ষে এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যান, তবে তা তেমন লক্ষণীয় ছিলো না। এরপর আদালতে একাধিকবার জামিনের আবেদন করলেও জামিন মেলেনি চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমনের।
আদালতে সুমনের মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. আব্দুর রহমান জানান, মিথ্যা মামলায় আমানউল্যাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি বাহ্রুল আলম সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি কামরুল আলম সুমনকে গ্রেপ্তার না করে নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে নিরাপরাধ বাহরুল আলম সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে দুই বার ও সর্বশেষ নির্বাচনের আগেরদিন ১০ নভেম্বর সুমনের জামিন চেয়ে জজ কোর্টে আবেদন করা হয়। কিন্তু ওইদিনও বিজ্ঞ বিচারক সুমনের জামিন না মঞ্জুর করেন।
তিনি আরও জানান, আগামী রোববার সুমনের জামিন চেয়ে আদালতে পুনঃরায় আবেদন করা হবে। ওইদিন তাঁর জামিন মঞ্জুর না হলে আমরা হাইকোর্টে তাঁর জামিনের জন্য আবেদন করবো। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে জামিন পাওয়ার অধিকার সুমনের আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, এর আগে বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ৬৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন এবং ইউপি সদস্য (মেম্বার) পদে ৪৯০ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ৬ জন, বিদ্রোহী প্রার্থী ৪ জন ও বিএনপি সমর্থিত ৩ জন প্রার্থী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও গোপালপুর ইউনিয়নে জেএসডি সমর্থিত এক প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
এনএস//