বহুমাত্রিক দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে ঢাকার নদী
অখিল পোদ্দার
প্রকাশিত : ১২:২৩ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০২১ শনিবার
সাড়ে ৪ হাজার টন বর্জ্য আর ৫৭ লাখ টন দূষিত পানির গন্তব্য রাজধানীর নদীগুলো। লোক দেখানোর জন্য কারখানায় আছে শোধনাগার। কিন্তু খরচ বাঁচাতে তা বন্ধ রাখে মালিকপক্ষ। বহুমাত্রিক দূষণ-দাপটে তাই অস্তিত্ব হারাচ্ছে ঢাকার নদ।
নালা বেয়ে উপচে পড়া গরম পানির গন্তব্য শীতলক্ষ্ম্যা। এমন কতো শত গ্যালন দূষিত পানি প্রতিনিয়তই মিশে যাচ্ছে আর সব নদীর বুকে। যারা মাছ ধরতেন তারা অসহায়। এতো গরম আর দূষিত পানিতে মাছ তো দূরে থাক জলজ উদ্ভিদও জন্মাচ্ছে না বহুদিন।
বিগত বছরগুলোতে যেসব প্রজাতীর মাছ এই নদীতে দেখা যেতো তা এখন পাওয়া যায় না। আর এরই জন্য দায়ী শীতলক্ষ্ম্যার পাড়ে গড়ে ওঠা অসংখ্য শিল্প কলকারখানার দূষণ।
দুর্গন্ধে পেশা ছেড়েছেন নৌকার মাঝি আর ঘাটের পাটনী। শেষ কবে গোসল করেছেন শীতলক্ষ্ম্যার পানিতে তাও মনে নেই অনেকের।
আছে ইঁটভাটার দূষণ। গলানো বর্জ্য ফেলছে মাঝারি আর ভারি শিল্প। অন্য কারখানার মোটাপাইপ মিশেছে নদীর তলদেশে। তাই বর্জ্য ভাগাড়ে পরিণত রাজধানী ঢাকার সবগুলো নদী।
বর্জ্য পুড়িয়ে বছরজুড়েই নদীতীরে দূষণ ছড়ায় ছোটখাট কারখানা। সেই আগুনে দগ্ধ হয় জাহাজ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। আরও আছে ডায়িং ফ্যাক্টরির অত্যাচার।
শিল্প পুলিশের প্রধান (অতিরিক্ত আইজিপি) শফিকুল ইসলাম বলেন, “ইন্ড্রাস্ট্রিগুলো যাতে নদীকে দূষিত না করে তারা যাতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বর্জ্যগুলো নিউট্রাল করে। ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পুলিশের পক্ষ থেকে যতটুকু প্রয়োজন আছে তা আমরা করছি এবং ভবিষ্যতে আরও করবো। একই সাথে আইনের কঠোর প্রয়োগেরও দরকার।”
দখল-দূষণে একাকার শীতলক্ষ্ম্যা নদে অনেক দিন ধরে কীটপতঙ্গ নেই। আসে না শাদা বক, শঙ্খচিল কিংবা পাখির ঝাঁক।
স্থানীয়রা জানান, পানি একেবারে দূষিত করে ফেলেছে। আশপাশে কত গাছপালা, কীটপতঙ্গ ছিল এখন কিছুই নেই। পোকা-মাকড়ই নেই শীতলক্ষ্ম্যায়, মাছ থাকবে কোথা থেকে। আগে নদীর পানি আমরা খেয়েছি, আর এখন গোসল করলে শরীর চুলকায়। মাছ কি করে থাকবে।
যেকোনো মূল্যে শীতলক্ষ্ম্যার নিটোল জল ফেরত চান নদীপারের মানুষ।
প্রতিদিনকার দখল আর দূষণে সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে বৃহত্তর ঢাকাবাসীর প্রাণের অহঙ্কার শীতলক্ষ্ম্যা নদী। নদীর দুই পাশে গড়ে ওঠা অসংখ্য শিল্প-কলকারখানার দূষিত বর্জে্য ময়লার খালে পরিণত হয়েছে এই নদীটি।
ভিডিও-
এএইচ/