মণ্ডপে যে কোরআন রেখেছে সে মাদকসেবী: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৮:৫৪ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০২১ সোমবার
আন্তঃধর্মীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক বলেছেন, কুমিল্লার পুঁজামণ্ডপে যে কোরআন রেখেছে সে একাই আসামি হবে না। কারণ, সে একজন মাদকসেবী। তার কোনো স্বার্থ নাই ওইটা এখানে রাখার। হয়তো তাকে কেউ টাকা দিয়ে ওই কাজ করিয়েছে। হেরোইঞ্চির কাজই তো তাই। কারা তাকে ব্যবহার করেছে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতামূলক আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুততম সময়ে আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার করতে চাই। এটি সম্ভব হলে স্বাভাবিকভাবেই সারাদেশে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সুযোগ হবে না।’
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন এই সেমিনারের আয়োজন করে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকারের সভাপতিত্বে সেমিনারে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতা, রাজনীতিক ও সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমি নিজেও বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব বিচারকাজ হোক। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সব সময় লক্ষ্য রাখছেন, দেখভাল করছেন। সেই সাথে আমাদের প্রতিও নজর রাখছেন, আমরা কী করছি না করছি। আমরা আশাবাদী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন চলে এলে দ্রুততম সময়ে বিচার শেষ হবে।’
কুমিল্লার ঘটনার পেছনে যোগসূত্র হিসেবে প্রতিমন্ত্রী বেশ কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় যারা প্রকৃতপক্ষেই বিরুদ্ধে কাজ করেছে, যারা আজও বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারে না, তাদের কাজ এটা হতে পারে। আরেকটা পক্ষ হতে পারে, বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে অথবা বিভিন্ন সময় গ্রেনেড হামলা করে অনেক লোককে হত্যা করেছে, অথবা ২০১৩-১৪ সালে মানুষকে গানপাউডার দিয়ে মানুষকে মেরে ফেলেছে।
তিনি বলেন, ‘মনে করিয়ে দিতে চাই, একই দিনে একই সময়ে দেশের ৬৩টি জেলায় একসঙ্গে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তারা কারা? তাদের চিনতে ভুল করব না। আমরা তাদের সুযোগ দেব না। তারা যাতে ভবিষ্যতে এই সুযোগ না পায়, সেজন্য আপনাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুন্সী আবু সাঈফের সঞ্চালনায় সভায় পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন প্রতিমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ইসলামি বক্তা আবদুল মোমিন সিরাজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মো. ফজলুর রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলি মুনছুর বাবু, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহা. শামশুজ্জোহা, জেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি জুনায়েদ আল হাবিবি, একাডেমি মসজিদের খতিব বশির উদ্দিন, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মার্টিন হীরক চৌধুরী, জেলা পুরোহিত-ব্রাহ্মণ ঐক্য পরিষদের সভাপতি দেবেন্দ্রনাথ দোবে বাবুলাল ও সাধারণ সম্পাদক নিশিত চক্রবর্তী।
ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এই জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় অন্ধকার কারাগারে কাটিয়েছেন। নিজের জীবন উৎসর্গ করে বাঙালি জাতির স্বাধিকার-স্বাধীনতা এনেছেন। এই বাংলার মানুষকে যেন সোনার বাংলার সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, আজীবন সে চেষ্টাই করে গেছেন। আমাদেরও সেই চেষ্টাই করে যেতে হবে।
সেমিনারে অন্য বক্তারা বলেন, যেকোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এড়িয়ে চলতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, সবাই এই দেশের নাগরিক। এই ভূখণ্ডে সবার অধিকার সমান।
এএইচ/