ভেনেজুয়েলায় সুপ্রিম কোর্টে হামলা : অভ্যুত্থানের সূচনা
প্রকাশিত : ০১:১৪ পিএম, ২৮ জুন ২০১৭ বুধবার | আপডেট: ০৭:০৪ পিএম, ১ জুলাই ২০১৭ শনিবার
পুলিশের একটি হেলিকপ্টার থেকে ভেনেজুয়েলার সুপ্রিম কোর্টে গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে, যাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। তবে গ্রেনেড দু’টো বিস্ফোরিত হয়নি বলে জানা গেছে।
পুলিশ হেলিকপ্টার থেকে সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা অস্কার পেরেজ আদালতে দু’টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। প্রেসিডেন্ট মাদুরো একে সন্ত্রাসী হামলা বলতে চাইছেন। তবে হামলার কিছু সময় আগে এক ভিডিও বার্তায় সেনাবাহিনী-পুলিশ ও জনতার নামে সরকার উৎখাতের ডাক দিয়েছিলেন পেরেজ। আর যে হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালানো হয়েছে, সেটি সরকারের আনুগত্য মানতে অস্বীকৃতি জানানোর ব্যানার বহন করছিল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে এসব কথা জানা গেছে।
ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটে থাকা ভেনেজুয়েলার ৫৪ বছর বয়সী সোশালিস্ট নেতা নিকোলাস মাদুরোর পদত্যাগ দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ হচ্ছে রাজধানী কারাকাসে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী গত ১ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৭০ জন সেখানে রাজনৈতিক সহিসংতায় নিহত হয়েছেন।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের হামলার পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি হেলিকপ্টার নিয়ে কারাকাসে সর্বোচ্চ আদালতে হামলা চালিয়েছেন। আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের খবরে তাকে অস্কার পেরেজ নামের গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা ভিডিওতে হেলিকপ্টারটিকে শহরের ওপর দিয়ে চক্কর কাটতে দেখা যায়। এর পরপরই বড় ধরনের বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। তবে সেখানে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে মাদুরো ক্ষমতাকে পোক্ত করে রেখেছেন। সেই সুপ্রিম কোর্টে হামলার প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেছেন, এক গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা হেলিকপ্টার থেকে দুটি গ্রেনেড হামলা চালায় এবং পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তবে হামলাটির মধ্য দিয়ে স্পষ্টত সরকার উৎখাতের বিদ্রোহের সূচনা হয়েছে।
অস্কার পেরেজ নামের কর্মকর্তা হামলার কিছু সময় আগে ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেই ভিডিও বার্তায় সরকার উৎখাতের ডাক দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘ভেনিজুয়েলাবাসী, ভাই আমার। আমি রাষ্ট্রের পক্ষ হয়ে তোমাদের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সাধারণ মানুষের জোট। আমরা এই জুলুমবাজ সরকারের থেকে রেহাই চাই। আমাদের দুটি পথ রয়েছে, আগামীকালের জন্য বসে থাকো অথবা এই দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার থেকে আজই নিজেদের মুক্ত করা।’
তবে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে ভিডিও বার্তায় দাবি করেন পেরেজ। তিনি বলেন, সত্য ও যিশু খ্রিস্টের প্রতি শুধু তিনি অনুগত। তার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল থেকে জানা যায়, তিনি একজন ক্রাইম ইউনিট গোয়েন্দা, একজন বিমান চালক ও কে-৯ ইন্সট্রাক্টর।
যে হেলিকপ্টার দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হামলা চালানো হয়েছে, সেটিতে ‘লিবার্টি. আর্টিকেল ৩৫০’ লেখা ছিলো। ভেনেজুয়েলার সংবিধানের এই ধারা অনুযায়ী কোনো সরকার গণতন্ত্রের অবজ্ঞা ও মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ করলে জনগণ সেই সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থার ডাক দেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে।
এদিকে, টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে মাদুরো বলেন, গ্রেনেডগুলো বিস্ফোরিত হয়নি এবং তারা এই হামলার পেছনে দায়ীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, আমি চাই বিরোধী জোট এমইউডি এই হামলার নিন্দা জানাক এবং সাহায্যার্থে এগিয়ে আসুক। এই হামলায় অনেকে হতাহত হতে পারতেন।’
সূত্র : গার্ডিয়ান, বিবিসি।