ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

‘রোহিঙ্গা সংক্রান্ত জাতিসংঘ প্রস্তাব রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করে’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:১০ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আজ বলেছেন, প্রথমবারের মতো ঐকমত্যের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত জাতিসংঘের প্রস্তাব গ্রহণ রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করে, কারণ দীর্ঘমেয়াদী সংকট সমাধানে এতে রাশিয়া ও চীনসহ সকল দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এ এক আলোচনায় অংশ গ্রহনের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এতে (জাতিসংঘের প্রস্তাব) ওই নির্দিষ্ট দেশের (মিয়ানমার) ওপর চাপ রয়েছে।

জাতিসংঘ বুধবার নিউইয়র্কে ঐকমত্যের মাধ্যমে ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকারের পরিস্থিতি’ বিষয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করে।
এটা আমাদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, আমরা খুব খুশি উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, এটি দেখিয়েছে যে সব দেশ রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। তিনি বলেন, চীন, রাশিয়ার মতো... যেসব দেশ এর আগে (বিষয়টি নিয়ে) বাধা সৃষ্টি করেছিল... এবার তারা বাধা সৃষ্টি করেনি, যার অর্থ সবাই সংকটের সমাধান চায়।   

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যে বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে এবং চীন ইতোমধ্যে কিছু হস্তক্ষেপ করেছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব বাধ্যতামূলক না হওয়ায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি)  রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে অগ্রগতি দেখার আশা প্রকাশ করেন ড. মোমেন।

জুন মাসে বাংলাদেশ মিয়ানমার সম্পর্কিত জাতিসংঘের প্রস্তাব থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কারণ রোহিঙ্গা সমস্যা অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
আমরা (সেই সময়) বলেছিলাম যদি আপনারা রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে কথা না বলেন, তবে, প্রস্তাবনা অর্থহীন হবে, ড. মোমেন সেই প্রস্তাব সম্পর্কে বলেছিলেন যা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা তুলে ধরেছিল কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া সম্পর্কে কোনও উল্লেখ ছিল না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জোর পূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগণকে উন্নত ভবিষ্যতের জন্য তাদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে  যেতে হবে।
বুধবার প্রস্তাব গ্রহণের সময় জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা বলেন, তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান অর্জনে এই প্রস্তাব এখন বাস্তব পদক্ষেপের প্রেরণা হিসেবে কাজ করা করবে।  
অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-র সদস্য রাষ্ট্রগুলো  যৌথভাবে এই প্রস্তাবটি পেশ করে।
মোট ১০৭টি দেশ এই রেজুলেশনে সহ-পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে, যা ২০১৭ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ।

এই প্রস্তাব ইইউ এবং ওআইসি-এর সদস্য দেশগুলো ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জাপান এবং কোরিয়াসহ আন্ত-আঞ্চলিক দেশগুলোর সহ-পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। 

প্রস্তাবের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল মিয়ানমারের ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রেক্ষাপটসহ রোহিঙ্গা মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি। 

এতে রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো মোকাবেলা করতে, বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির অধীনে তার দায়বদ্ধতা পূরণ করা এবং মিয়ানমারে মহাসচিবের বিশেষ দূত এবং জাতিসংঘের সকল মানবাধিকার ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সংস্থাকে সহযোগিতা করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই প্রস্তাবটি চলমান ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতা প্রক্রিয়া বজায় রাখার উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। এতে মিয়ানমারে মহাসচিবের নতুন বিশেষ দূত নিয়োগকে স্বাগত জানানো হয়েছে এবং মিয়ানমারে তার একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। 

এতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অনুকূল পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টায় মিয়ানমার এবং ইউএনএইচসিআর এবং ইউএনডিপির মধ্যে স্বাক্ষরিত এমওইউ পুনঃনবায়ন এবং কার্যকর বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। 

রাবাব ফাতিমা বলেন, ‘সর্বসম্মতিক্রমে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, এতে এই সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দৃঢ় সংকল্প প্রদর্শন করে।’ 

প্রস্তাবে সদস্য দেশগুলো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং তাদের মানবিক সহায়তা প্রদান এবং কোভিড-১৯ টিকাদান অভিযানে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেছে।

প্রস্তাবে জনাকীর্ণ আশ্রয় শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে স্থানান্তরের জন্য ভাসানচরে অবকাঠামো নির্মানে বিনিয়োগের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এ বিষয়ে ইউএনএইচসিআর-এর সাথে বাংলাদেশের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারককে স্বাগত জানানো হয়। 

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় ১১ লাখের বেশি মিয়ানমারের  জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় এবং সামরিক অভিযানের নৃশংসতার শিকার হয়ে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে, জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নির্মূল অভিযানের নৃশংসতার দৃষ্টান্ত হিসাবে অভিহিত করেছে। অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা এটিকে “গণহত্যা” হিসেবে অভিহিত করেছে।

যদিও গত চার বছরে মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি, রোহিঙ্গাদের মধ্যে রাখাইন রাজ্যে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে আস্থার অভাবে দুই দফায় প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

আরকে//