ইউরোপে বাংলাদেশি পাচারের প্রধান রুট লিবিয়া-তিউনিশিয়া চ্যানেল
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:০৬ এএম, ২১ নভেম্বর ২০২১ রবিবার
বাংলাদেশিদের ইউরোপে পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া-তিউনিশিয়া চ্যানেল। লিবিয়ায় কর্মী পাঠানো বন্ধ থাকায় পাচারকারী সিন্ডিকেট ভ্রমণ ভিসায় বিদেশগামীদের ভারত, নেপাল, দুবাই, মিসর ও জর্দান ঘুরিয়ে লিবিয়ায় নেয়। সেখান থেকে নৌপথে তিউনিশিয়া হয়ে ইতালি ও মাল্টায় পাচার করা হয়।
এই রুটে মানবপাচারের সাথে ১৫ জেলার অন্তত ১৮টি সিন্ডিকেট জড়িত। লিবিয়ায় ফার্ম হাউসকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রে রয়েছে কিছু বাংলাদেশি ‘সর্দার’। ইতালি ও ফ্রান্সে বসে কয়েকজন এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। গত বছরের ২৭ মে লিবিয়ার মিজদায় ২৬ জনকে গুলি করে হত্যার ২৫টি মামলার তদন্তে এমনই তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ 'সিআইডি'।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মানবপাচারের মামলায় দেশের দালাল ও সহযোগীদের গ্রেফতার করলেও লিবিয়া, দুবাই ও ইতালিতে থাকা হোতাদের গ্রেফতার করা যায়নি। আন্তর্দেশীয় তদন্ত না হওয়ায় লিবিয়ার ফার্ম হাউসে সক্রিয় পাচারকারী পর্যন্ত পৌঁছায়নি তদন্ত কার্যক্রম।
ভুক্তভোগীদের বর্ণনা মতে, ফার্ম হাউস এবং ইউরোপে সক্রিয়দের ব্যাপারে কিছু তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ছয়জনকে শনাক্ত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হলেও চারজনই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। একজন ইতালিতে গ্রেফতার হলেও তাকে দেশে ফেরত আনা যাচ্ছে না।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যার অভিযোগে দেশে ২৯টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোর ২৫টি তদন্ত করে ২৩টির অভিযোগপত্র দিয়েছে সিআইডি। একটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে আরেকটি তদন্তাধীন। তদন্তে পাচারচক্রের ২৯৯ জনের নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে ১৭১ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি, থানা পুলিশ ও র্যাব। এদের ৪২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। বাকি ১২৮ জন এখনো ধরা পড়েনি।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিক বলেন, মানবপাচারের ঘটনায় সাধারণত দালাল ধরা পড়ে। তাদের মাধ্যমে পাচারকারীদের মূল ঘাঁটিতে পৌঁছাতে না পারলে পাচার বন্ধ হবে না।
মানবপাচারের মামলাগুলোর তদন্ত তদারক কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে টাকা ফেরত পেলে অনেকে আর মানব পাচারকারীদের নামে মামলা করে না। কিছু ব্যক্তি মামলা করলেও মানবপাচারকারীদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা দেয় না।
তিনি আরো বলেন, লিবিয়া থেকে তিউনিশিয়ার চ্যানেল হয়ে পাচার হচ্ছে বেশি। লিবিয়ার ফার্ম হাউসে এদের জিম্মি করে রাখা হয়। সেখানে কিছু বাংলাদেশীও আছে। লিবিয়ায় বেঁচে যাওয়া ৯ জনকে আমরা নিয়ে এসেছি। এদের বর্ণনায় ইউরোপে ও লিবিয়ায় সক্রিয় কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। দেশ থেকে যারা পাঠিয়েছে তাদের নামও এসেছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দালালরা আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। চক্রের মূল হোতারা দেশের বাইরে বসে অনলাইন ভিসা ও বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করে।
সূত্র : ভয়েজ অফ আমেরিকা
এমএম/