ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের পদমর্যাদা নির্ধারণসহ ১১ দফা দাবি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৩৫ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২১ বুধবার

উপমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে কর্মপরিধি নির্ধারণসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছিল বাংলাদেশ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফোরাম। কিন্তু কোনো দাবিই পূরণ হয়নি তাদের। তাই পদমর্যাদা ছাড়াই অনেকটা ক্ষোভ ও অসন্তোষ নিয়ে আগামী বছরের জানুয়ারিতে ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে চলেছেন নির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরা। 

দাবিগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে অনুমতি পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফোরামের সদস্য সচিব মহিউদ্দিন মহারাজ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১ জেলায় ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যানরা প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁও কার্যালয়ে ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি শপথ নেন। শপথ অনুষ্ঠানে মানুষের সেবা ও উন্নয়নে জেলা পরিষদের হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা পরিষদগুলোর প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি। তাই ২০২২ সালের ২২ জানুয়ারি মেয়াদ শেষ হবে জেলা পরিষদের।

পদমর্যাদা ও কর্মপরিধির বিষয়টি জেলা পরিষদ আইনে পরিষ্কার উল্লেখ না থাকায় নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই চেয়ারম্যানদের একরকম ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই, নিধিরাম সরদার’-এর মতো দায়িত্ব পালন করতে হয়। 

একাধিক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, চেয়ারম্যানদের মধ্যে অনেকেই সাবেক সংসদ সদস্য এমনকি সাবেক মন্ত্রীও রয়েছেন। তাই তাদের পদমর্যাদা না থাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও নানা ইস্যুতে মতবিরোধ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই বাংলাদেশ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফোরামের নেতারা এলজিআরডি মন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে কর্মপরিধি নির্ধারণ করে দেওয়াসহ ১১ দফা দাবি জানান।

তারা বলেন- একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও পাঁচ নারী সদস্য (সংরক্ষিত আসন) রয়েছে এ পরিষদে। কিন্তু কার কী কাজ সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নেই চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যদের। কোন কোন কাজ তদারকি করতে পারবেন বা করা উচিত তাও পরিষ্কার বলা নেই আইনে। এ বিষয়টি সুরাহা না করলে জেলা পরিষদ গঠনের উদ্দেশ্য বাস্তব রূপ পাবে না।

জেলা পরিষদকে উপজেলা ও পৌরসভার উন্নয়ন কার্যক্রমের তদারকির দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা দেওয়া, জেলা পর্যায়ের সব দফতরকে জেলা পরিষদের আওতায় এনে সুসমন্বয়ের মাধ্যমে দফতরগুলোর কার্যক্রম গতিশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা, এডিপির সাধারণ বরাদ্দের কত শতাংশ সংসদ সদস্যরা পাবেন, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান, জেলার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অধিকতর বিকাশের লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের ওপর ন্যস্ত করা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অভিপ্রায় অনুযায়ী একান্ত সচিব বা সহকারী একান্ত সচিবের পদ ও চেয়ারম্যানের নিরাপত্তার জন্য গানম্যানের পদ সৃষ্টি এবং জেলা পরিষদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যথাযথভাবে বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ সৃষ্টি করার দাবিও ছিল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফোরামের।

কিন্তু মেয়াদ প্রায় শেষ হতে চললেও কোনো দাবিই পূরণ হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফোরামের সদস্য সচিব ও পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তারা পদমর্যাদা নির্ধারণসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরার পর মন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করলেও এখনও পর্যন্ত কোনো দাবিই পূরণ করা হয়নি।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কয়েক বার চিঠি দেওয়া হলেও করোনার কারণে অনুমতি পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ বলেন, ২০০৮-এর ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরা যুগ্ম সচিবের পদমর্যাদাক্রমের তালিকায় রয়েছেন, যা শুধু অনুষ্ঠানে আসনের ক্ষেত্রে। তবে গাড়ির সুবিধা ছাড়া তারা পদমর্যাদা অনুযায়ী অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আইনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের কার্যপরিধি কী হবে, তা পরিষ্কার করা হয়নি। তাদের পদমর্যাদা কী, তারা কী ভূমিকা পালন করবেন, তা নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে। এটা দূর করলে জেলা পরিষদ গতিশীল হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আইনের বাইরে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের কোনো পদমর্যাদা দেওয়ার সুযোগ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী যদি চান তা হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কাউকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীসহ অন্য কোনো পদমর্যাদা দিতে পারে।

কর্মপরিধি নির্ধারণসহ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের অন্যান্য দাবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইনে যে কর্মপরিধি রয়েছে এর বাইরে কিছু করার সুযোগ মন্ত্রণালয়ের নেই।

এসি