সাবধান! দৈনন্দিন এই ৫ অভ্যাসই আপনার হাড়ের সর্বনাশ করছে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:২৯ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২১ সোমবার
বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন, কেবল বয়স হলেই হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা বা আর্থ্রাইটিস দেখা দেয়। সেইসঙ্গে সকলকেই জীবনের একটা পর্যায়ে এসে এই সমস্যায় ভুগতে হবে বলেও মনে করেন অনেকে। কিন্তু আমাদের আশেপাশে এমন অনেক বয়স্ক ব্যক্তিকেও দেখা যায় যারা হাড়ের সমস্যা বা জয়েন্টের ব্যথায় ভোগেন না। এর থেকেই বোঝা যায় যে, শুধু বয়সের কারণেই হাড় বা জয়েন্টের সমস্যা হয় না।
আমাদের দৈনন্দিন এমন অনেক বদভ্যাস আছে, যা হাড় দুর্বল করে তোলে এবং জয়েন্টের সমস্যা তৈরি করে। এই অভ্যাসগুলি পরিবর্তনের মাধ্যমে হাড়ের সমস্যা প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা সম্ভব।
১) ধূমপান: ধূমপান শরীরের টিস্যুগুলিতে ফ্রি রেডিক্যাল উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এটি কেবলমাত্র ফুসফুসের জন্যই খারাপ নয়, পাশাপাশি হাড়ের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
যারা নিয়মিত ধূমপান বা তামাক ব্যবহার করেন, তাদের হাড়ের ঘনত্ব তুলনামূলক কম থাকে। কারণ, ফ্রি রেডিক্যাল হাড় সৃষ্টিকারক কোষগুলিকে ধ্বংস করে দেয়।
এছাড়া, ধূমপানের ফলে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং ক্যালসিটোনিন হরমোনের উৎপাদন কমে। কর্টিসল হাড়ের স্টক কমাতে পরিচিত এবং অন্যদিকে ক্যালসিটোনিন এটি বজায় রাখে। এছাড়া, হাড়ে ফ্র্যাকচার হলে ধূমপান রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নিরাময় প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। সুতরাং হাড় ভালো রাখতে চাইলে ধূমপান ছাড়তে হবে।
২) একভাবে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা: আপনি কী জানেন, একভাবে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা দ্রুত হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ায়। পেশী সংকোচন হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে। তাই হাড়ের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে শরীরচর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত হাঁটা কিংবা ওয়েটলিফটিং করা বা অন্যান্য এক্সারসাইজ হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
৩) অত্যধিক মদ্যপান করা: ধূমপানের মতোই অত্যধিক মদ্যপানও শরীরে কর্টিসলের উৎপাদনকে বৃদ্ধি করে, যা বোন স্টক নষ্ট করে দেয়। তাছাড়া, অ্যালকোহলের সেবন শরীরে টেস্টোস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রাও কমিয়ে দেয়। এই হরমোনগুলি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪) অত্যধিক লবণাক্ত খাবার গ্রহণ: গবেষণায় দেখা গেছে যে, অত্যাধিক লবণ বা লবণযুক্ত খাবার খাওয়া হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস করতে সক্ষম। অত্যধিক মাত্রায় সোডিয়াম গ্রহণের ফলে, শরীর প্রস্রাবের মাধ্যমে বেশি মাত্রায় ক্যালসিয়াম নিঃসরণ করে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ক্ষতিকর।
গবেষণা অনুসারে, একজন নারী যদি নিয়মিত মাত্র এক গ্রাম অতিরিক্ত সোডিয়াম বেশি গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি প্রতি বছর তার হাড়ের ঘনত্বের ১ শতাংশ হারিয়ে ফেলতে পারেন।
তাই বিশেষজ্ঞরা দৈনিক ২৩০০ মিলিগ্রামের কম সোডিয়াম গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যদিও বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক ১৫০০ মিলিগ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়।
৫) সারাদিন ঘরের ভেতরে থাকা: হাড় শক্তিশালী করার জন্য ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড় কিন্তু পাতলা এবং ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। ভিটামিন ডি এর উৎস হল সূর্যালোক। সূর্যালোক শরীরের সংস্পর্শে এলে ভিটামিন ডি প্রস্তুত করে।
তাই সারাদিন ঘরের ভিতরে না থেকে কিছু সময়ের জন্যও যদি বাইরে সূর্যালোকের নীচে বেরোনো যায়, তাহলে তা হাড়ের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারি। আপনি যদি বাইরে পর্যাপ্ত সময় ব্যয় না করেন, তবে আপনার শরীরে এই পুষ্টির অভাব হতে পারে।
তবে একান্তই যদি বাইরে বেরোনোর সুযোগ না পান, তাহলে খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন - স্যালমন, ডিমের কুসুম, অন্যান্য খাদ্য রাখার চেষ্টা করুন।
সূত্র: বোল্ডস্কাই
এসবি