ঢাকা, শনিবার   ১২ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২৬ ১৪৩১

টিফিনের টাকায় মানবসেবা, ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টান্ত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:১৬ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২১ সোমবার

শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের একটি উদ্যোগ

শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের একটি উদ্যোগ

উদ্যোগটা ছিল সাত-আটজন শিক্ষার্থীর; উদ্দেশ্য- মানুষের সেবা। কিন্তু তার জন্য যে অর্থের দরকার, স্কুলপড়ুয়া হওয়ায় তার সঙ্গতি করার ক্ষমতা তাদের ছিল না। কিন্তু টাকার জন্য ভালো একটি উদ্যোগ তো আর থমকে যেতে পারে না। যেমন ভাবা, তেমনই কাজ। টাকারও ব্যবস্থা হয়ে গেল, সহজেই; আর তা হলো নিজেদের টিফিনের টাকা। 

২০১৬ সালে পাবনার বেড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বেড়া বিপিন বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির সেই শিক্ষার্থীদের টিফিনের টাকায় এখনও চলছে মানুষের সেবা। এভাবেই যাত্রা শুরু শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের। লম্বা এই সময়ে তাদের মানব কল্যাণমুখী কাজ দেখে উপজেলার আরও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে তাদের সঙ্গে। ফলে বেড়েছে কাজের কলেবরও। 

ছয় বছরে সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ১০০ জনেরও বেশি। তারা দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়তার পাশাপাশি সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়েও কাজ করছেন।

সংগঠন সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত তারা ৫০০ শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তাসহ নানা সহায়তা দিয়েছেন। পাশাপাশি দুঃস্থদের খাদ্য সামগ্রী, চিকিৎসাসেবা ও শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। করোনাভাইরাস মহামারীতে দুঃস্থদের বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি কয়েকজন অসহায় অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছে সংগঠনটি। 

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বেড়া পৌর এলাকার কয়েকটি ওষুধের দোকানে রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থেরাপি ও নেবুলাইজার যন্ত্রও কিনে দেওয়া হয়েছে। এসব দোকানে প্রকৃত দুঃস্থ রোগীরা বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করছেন, রক্তচাপ মাপাতে পারছেন। এছাড়া বিনামূল্যে থেরাপি ও নেবুলাইজেশনও করাতে পারছেন। অসহায় কারও ওষুধের প্রয়োজন হলে সংগঠনের পক্ষ থেকে অনেক সময় তা কিনেও দেওয়া হচ্ছে। নদী পাড়ের শত শত মানুষের পারাপারে কষ্ট দূর করতে তারা ইতোমধ্যেই তৈরি করে দিয়েছেন তিনটি বাঁশের সাঁকোও। 

এসব কার্যক্রমে অর্থের যোগান সম্পর্কে সংগঠনটির সভাপতি মেহেরাব হোসেন জিমি একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, “আমরা সংগঠনে যারা কাজ করি, সবাই শিক্ষার্থী। আমরা আমাদের সাধ্যমতো টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে সংগঠনটি দাঁড় করিয়েছি। এছাড়াও আমাদের কার্যক্রম দেখে অনেক ধনাঢ্য হৃদয়বান ব্যক্তি আমাদের তহবিলে টাকা দেন। আর এভাবে মজবুত হচ্ছে আমাদের আর্থিক তহবিল।”

সংগঠনটির নারী বিষয়ক সম্পাদক মাকসুদা মানিক মেঘলা বলেন, “আমরা মেয়েদের স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করে যাচ্ছি। গত বছর বন্যা কবলিত শাহজাহাদপুর উপজেলার চরবন্যা গ্রামে ‘নারী সুস্থ থাকলে বাঁচবে শিশু’ স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা বন্যার্ত প্রায় শতাধিক অসহায় নারীদের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করেছি। এসময় সংগঠনের নারী সদস্যরা ন্যাপকিন ব্যবহারের উপকারিতাসহ স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক নানা রকম পরামর্শও দিয়েছি।”

সংগঠনটি সম্পর্কে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সবুর আলী জানান, সংগঠনে যারা কাজ করেন তারা সবাই শিক্ষার্থী। তারা টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে উপজেলায় নানা রকম সামাজিক কাজ করেন।

তিনি বলেন, “তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমি গিয়েছি, যেন তারা উৎসাহ পায়। ব্যক্তিগতভাবেও তাদের নানা কর্মকাণ্ডে আমি আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে এই বয়সে যে মানব কল্যাণমূলক কাজ তারা করছে, তা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।”

-সাজেদুর আবেদীন শান্ত, ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী।

এনএস//