ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

বেনাপোলে ট্রাক ভাড়া দ্বিগুণ, পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৪৪ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার

ট্রাক সংকট এবং ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির কারণে দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভারত থেকে সম্প্রতি পণ্য আমদানি বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে গিয়ে আমদানিকারক, পরিবহন এজেন্ট ও সিএন্ডএফ এজেন্টদেরকে দারুণভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

তেলের মূল্য বৃদ্ধি, ফেরি ঘাটে দিনের পর দিন ট্রাক আটকে থাকা, মাওয়া ফেরি ঘাট বন্ধ থাকা ও ঢাকা থেকে ফেরার পথে কোন পণ্য না পাওয়ার ফলে পরিবহন মালিকরা হঠাৎ করে ট্রাকের ভাড়া দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। অনেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সাথে বাৎসরিক মালামাল পরিবহনের চুক্তির ফলে অনেক সিএন্ডএফ এজেন্ট ও ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। লাভ তো দূরে থাক শত শত টাকা লোকসান দিয়ে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে আমদানিকারকের প্রতিষ্ঠানে।

আমদানি-রফতানির সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ভারত থেকে সম্প্রতি রফতানিমূখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল, তুলাসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা অন্যান্য আমদানি পণ্যের চেয়ে এসব হালকা পণ্য পরিবহণের প্রতি বেশি আগ্রহ হয়ে উঠেছে। কারণ হিসাবে সূত্রগুলো বলছে, এসব পণ্য পরিবহন করলে তুলনামূলকভাবে তারা ভাড়া বেশি পায়। তা ছাড়া পচনশীল পণ্য হিসেবে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো যায় এতে চালকদের ফেরিঘাটে অহেতুক সময় ক্ষেপণ করতে হচ্ছে না। অপরদিকে তাদের সময় বেঁচে যাওয়ায় আনুসঙ্গিক খরচও কম হচ্ছে। এ কারণে তারা এসব পণ্যের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছে।

পণ্য পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত বেনাপোল বন্দরের একাধিক সূত্র জানায়, বেনাপোল থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহনের জন্য যতো ছোট ট্রাকই হোক না কেন ২৫ হাজার থেকে শুরু করে ৩২ হাজারের নিচে কোন ভাড়া নেই। তাছাড়া পণ্য পরিবহনে নেই পর্যাপ্ত ট্রাক। ট্রাক সংকটে অনেকে আমদানি পণ্যের শুল্ক পরিশোধ করেও বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে পারছে না। সূত্র জানায়, তেলের মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে টায়ার, ট্রাকের যন্ত্রাংশের মূল্য এবং ফেরি ভাড়া বৃদ্ধির কারণেই নাকি ট্রাকের ভাড়া এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঢাকার নবাবপুরের তালুকদার ট্রেডার্স নামের আমদানিকারক ইকবাল আহমেদ জানান, তার কেমিকেল আসে ভারত থেকে। তার কয়েকটি পণ্য চালান ১৫ নভেম্বর বেনাপোল বন্দরে আসার পর সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বসে আছেন। অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়ার কারণে তিনি মাল বেনাপোল বন্দর থেকে ফ্যাক্টরিতে নিতে পারছেন না। একই কথা জানালেন, ঢাকার কেরানীগজ্ঞের রোজ ট্রেডিং নামের আমদানিকারক ফায়জুর রহমান। 

তিনি বলেন, অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়ায় আমদানিকৃত প্রিন্টিং কালি ফ্যাক্টরিতে নিলে লাভতো দুরে থাক আসলও টিকবে না। 
নারায়নগজ্ঞের ভোলতা রুপগজ্ঞের কোয়ালিটি ক্যান ইন্ডাস্ট্রিজ এর কমার্শিয়াল ম্যানেজার বিপ্লব সাহা বলেন, আমাদের আমদানিকৃত কয়েকটি পণ্য চালান বেনাপোল বন্দরে পড়ে আছে। অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়া ও ট্রাক সংকটের কারণে মালামাল সময়মত না আনতে পারায় ফ্যাক্টরি কাঁচামালের অভাবে বন্ধের উপক্রম।

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী জানান, বেনাপোল বন্দর থেকে সারা দেশে পণ্য পরিবহনের ভাড়া এক মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। তেলের মূল্য বৃদ্ধি, ফেরি ভাড়া ও টোল আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি ফেরি ঘাটে দীর্ঘ যানজট এবং ঢাকা থেকে আসার পথে তেমন পণ্য না পাওয়ায় এ অবস্থার সৃস্টি হয়েছে। এতে পণ্য পরিবহনের জন্য প্রতিনিয়তই দুস্প্রাপ্য হয়ে উঠছে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গড়ে প্রতিদিন বেনাপোল এই বন্দর থেকে দুই শতাধিক কাভার্ড ভ্যানসহ ৭শ’ পণ্যবাহী ট্রাক সারা দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। কিন্তু ট্রাক সংকট ও ভাড়া বৃদ্ধির কারণে স্বাভাবিক পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান সনি বলেন, আগে বেনাপোল থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনে প্রতি ট্রাকের ভাড়া ছিল সর্বনিম্ন ২২ হাজার ও সর্বোচ্চ ২৪ হাজার টাকা। একই ট্রাকের ভাড়া এখন বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। একইভাবে কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া ২৫ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। এত বেশি ভাড়া দেয়া সত্ত্বেও খালি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বেনাপোল বন্দর থেকে সারা দেশে পণ্য পরিবহন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে, যা পণ্যমূল্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। ভাড়া বেশি হওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কায় বেশির ভাগ আমদানিকারকই প্রয়োজন থাকা সত্বেও পণ্য সরবরাহ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, পরিবহন সংকটের জন্য ট্রাক ভাড়া এখন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করেন লাভের আশায় কিন্তু পরিবহন খরচ এত বেড়েছে যে এতে তাদের লোকসানে পড়তে হবে। কাঁচা পণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় কেউ কেউ বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে নিত্যপণ্য খালাস করে নিয়ে যাচ্ছেন। তেলের ও ফেরি ভাড়া বৃদ্ধি, ফেরি ঘাটে যানজট ও ট্রাক সংকটের জন্য ভাড়া অকল্পনীয়ভাবে বেড়ে গেছে। ঢাকায় ট্রাক যাওয়ার পর সেখানে থেকে কোন ভাড়া না হওয়ায় দু‘পাশের খরচ পুষিয়ে নিচ্ছে ট্রাক মালিকরা। 
কেআই//