শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান রাষ্ট্রপতির
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৪৬ পিএম, ১ ডিসেম্বর ২০২১ বুধবার | আপডেট: ০৪:২১ পিএম, ১ ডিসেম্বর ২০২১ বুধবার
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়াতে এগিয়ে আসতে হবে।’
রাষ্ট্র প্রধান বুধবার দুপুরে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালী যুক্ত হন।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ‘রূপকল্প-২০৪১’ অভিযাত্রাকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রয়োজন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তি তৈরি করা।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আশা প্রকাশ করেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ যাত্রাপথে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে।
বিশ্বব্যাপী তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের সফলতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা যাতে তথ্য প্রযুক্তিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় বিশ্বব্যাপী সফলতার সাথে এগিয়ে যেতে পারে, সেভাবে তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে।”
তিনি বলেন, “কালের পরিক্রমায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে এর অবকাঠামো ও শিক্ষা কার্যক্রমের পরিধি। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে প্রতিযোগিতারও আন্তর্জাতিকীকরণ হয়েছে।”
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন তাই একজন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে হবে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও পাঠ্যক্রম নির্ধারণ ও পাঠ দানের ক্ষেত্রে বিশ্বমানের কথা বিবেচনায় রাখার নির্দেশনা দেন।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এগিয়ে চলছে। কয়েক বছর পরই পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের ঢেউ বইতে শুরু করবে। তাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুুতি নিতে হবে, রাষ্ট্রপতি অনুধাবন করেন।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, “এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করতে হবে।”
শিক্ষার্থীদের জন্য মাতা-পিতা, অভিভাবক, দেশ ও জনগণের যথেষ্ট বিনিয়োগ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদেরকে পবিবার, দেশ ও জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।”
তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে বর্তমান শতাব্দীতে উন্নয়নশীল বিশ্বে উচ্চশিক্ষার গতি-প্রকৃতি, বিশ্বায়ন ও তথ্য-প্রযুক্তির প্রসারে সৃষ্ট ডিজিটাল বিভক্তি, উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের ব্যবধান মোকাবেলা এবং পুঁজি ও শ্রমনির্ভর অর্থনীতি থেকে জ্ঞান নির্ভর-অর্থনীতিতে উত্তরনে এ গুলোকে শিক্ষার প্রধান বিবেচ্য ভাবার ও তাগিদ জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজ্ঞানের সঙ্গে ব্যক্তিক ও সামষ্টিক চেতনার সমন্বয় ঘটানোই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হওয়া উচিত।”
হামিদ উল্লেখ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালি জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, গবেষণা-উদ্ভাবন, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, প্রগতিশীল ভাবনা, জাতি-গঠন ও দেশাত্মবোধের চেতনার এক তেজোদীপ্ত আলোকবর্তিকা; বাঙালির আশা-আকাঙ্খার এক অনন্য বাতিঘর।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, “১৯১৭ সালে গঠিত ‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন’ এর সুপারিশের ভিত্তিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯২০’ আইনের ভিত্তিতেই ১৯২১ সালের ১ জুলাই আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। সে দিন ১২টি বিভাগ ও ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক পথচলা শুরু হয়েছিল, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ ৮৪টি বিভাগ ও অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চার সূতিকাগার উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অসাম্প্রদায়িক ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের গৌরবময় বিদ্যাপীঠ। সূচনা লগ্ন থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে মুক্তবুদ্ধির চর্চা শুরু হয়।”
তিনি বলেন, “মাত্র দুইজন নারী শিক্ষার্থী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে ছাত্রীর সংখ্যা ৪০ শতাংশের বেশি। এটা দেশের নারীর ক্ষমতায়নের একটি বিশাল সাফল্য।”
একুশে ফেব্রুয়ারীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, “বিশ্বের সকল জাতিসত্তার ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণে একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিকভাবে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়া নিঃসন্দেহে একটি খুশির খবর।”
রাষ্ট্রপতি ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হওয়ার লক্ষ্যে এখন থেকেই সর্বাত্মকভাবে কাজ শুরু করার আদেশ দেন।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যাঁদের অসীম সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশ ও স্বাধীন জাতিসত্তা।
রাষ্ট্রপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারী যাঁরা মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন তাঁদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জানান।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি, শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনি এমপি, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ ও বক্তব্য রাখেন।
সূত্র : বাসস
এসএ/