শান্তিচুক্তির দুই যুগ
মানিক শিকদার
প্রকাশিত : ১০:২১ এএম, ২ ডিসেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তি ফেরে পার্বত্য অঞ্চলে। শান্তিচুক্তির মাধ্যমে অবসান হয় ২ যুগ ধরে চলা যুদ্ধাবস্থার। আওয়ামী লীগ সরকারের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে সন্তুষ্ট পাহাড়ের অধিবাসী। তবে চুক্তির সব শর্ত পুরণ হয়নি বলেও রয়েছে অভিযোগ। এদিকে, চুক্তির সব শর্ত পূরণ হলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্তিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মধ্যেই হত্যা করে দেশবিরোধী চক্র। এর পরপরই সারাদেশের মতো পাহাড়েও নেমে আসে অন্ধকার। শুরু হয় অস্ত্রের ঝনঝনানি, রক্ত, লাশ আর অশান্তির যুদ্ধ।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসার পরই পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেন। ১৯৯৭ এর ২ ডিসেম্বর শান্তি চুক্তির ফলে অবসান হয় প্রায় ২ যুগের কালো অধ্যায়। এখন পাহাড় শান্ত। পর্যাক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে শান্তিচুক্তির শর্তাবলী।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার দরকার দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সেইভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।
তবে মাঝেমধ্যেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা উৎকন্ঠা বাড়ায় পাহাড়বাসীর। এসবের মূলে রয়েছে মাদক ও অবৈধ অস্ত্র।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘ দুই যুগের পরেও এই চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় আমরা হতাশ। পার্বত্য জনপদে অস্ত্রের ঝনঝনানি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থায়ী সেনাক্যাম্পগুলো পুনরায় স্থাপন করা দরকার।
দ্রুত বিধিমালা প্রণয়ন করে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করার পাশাপাশি প্রশাসন, স্থানীয় পুলিশ ও ভূমি ব্যবস্থাপনা হস্তান্তরসহ শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন দাবি জনসংহতি সমিতির।
জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) সহ-সভাপতি বিভূ রঞ্জন চাকমা বলেন, আমাদের দাবি আঞ্চলিক পরিষদ এবং পার্বত্য জেলা পরিষদের যেসমস্ত ধারাগুলো আছে সেগুলো চুক্তির আলোকে বাস্তবায়ন হোক।
এদিকে, চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি বলছে, ইতোমধ্যে শান্তিচুক্তির বেশিরভাগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, বিদ্যুৎ খাতে ইতিমধ্যে এখানে যে উন্নয়ন হয়েছে যদি চুক্তি না হতো শুধু মারামারির আমরা সীমাবদ্ধ থাকতাম তাহলে এটা হতো না। খাগড়ছড়িতে একটা সাব-স্টেশন হয়েছে সেটা অসম্ভব ছিল। চুক্তির পূর্বে কয়টা পাকাঘর ছিল এখন পাকাঘর হওয়া মানে নিশ্চিয়ই মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিটা এসেছে।
চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণরূপে এবং ১৫টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বাকি ৯টি ধারা বাস্তবায়নের কাজ।
এক সময় এই পাহাড় ছিল অশান্ত। এখন বইছে শান্তির সুবাতাস। এই শান্তি যেন অব্যাহত থাকে এইটা প্রত্যাশা করছেন খাগড়াছড়ি এলাকার সবাই।
এএইচ/