যুবলীগের আশ্রয় কর্মসূচির ৪র্থ ধাপের উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:১২ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০২১ শনিবার
যুবলীগের আশ্রয় কর্মসূচির ৪র্থ ধাপের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংগঠনটির চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ৪ ডিসেম্বর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শহিদ শেখ ফজলুল হক মণির ৮৩তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান।
এদিন সকাল ৯ টায় বনানী কবরস্থানে শহিদ শেখ ফজলুল হক মণিসহ ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহিদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন, মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও খাদ্য বিতরণ করে যুবলীগ। সকাল ১১ টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে “শেখ ফজলুল হক মণি; সৃষ্টিশীল তারুণ্যের প্রতীক” শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, এমপি। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুুরী। সভাপতিত্ব করেন-যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সঞ্চালনা করেন-সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, আমার প্রিয় যুবলীগের ভাই ও বোনেরা আপনাদের নেতা, শেখ ফজলুল হক মণি আমার বাবা। বাবাকে আমরা খুব কম পেয়েছি। আমি মাত্র ৫ বছর ছিলাম যখন আমার বাবা, শেখ ফজলুল হক মণিকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে হত্যা করা হয়েছিল। বাবা আমাদের সাথে খুবই বন্ধুসুলভ ছিলেন। আমাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেতেন। স্বপ্নের মত ছিল দিনগুলি। বাবার যেই বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয়, সেটা হল বাবার কর্ম ও বাবার মমত্ববোধ। তিনি আত্মকেন্দ্রিক রাজনীবিদ ছিলেন না, নেতা-কর্মীদের প্রতি ছিল তাঁর অপরিসীম মমত্ববোধ ও দরদ। একজন কর্মী মারা যাওয়ায় আমি বাবাকে শিশুর মত কাঁদতে দেখেছি। বাবার কর্ম আজো বেঁচে আছে, বাবার লক্ষ্য রাজনৈতিক অনুসারীদের মাঝে। বাবার প্রতি তাঁদের যেই ভালবাসা আর সম্মানবোধ সেটা আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে।
তিনি আরও বলেন, শেখ মণি’র রাজনৈতিক পরিচয় আপনাদের জানা। শেখ মণি যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করে যুবসমাজকে সংগঠিত করে বঙ্গবন্ধুর দেশ গড়ার কাজে নিয়জিত করে একটা সুখী, সমৃদ্ধ, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠন করার স্বপ্ন দেখে ছিলেন। স্বল্প উন্নত রাষ্ট্র থেকে আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে আমরা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের কাতারে। আমাদের চিহ্নিত করতে হবে আগামীর সংগ্রাম কি, প্রতিকূলতা কি। চিহ্নিত করতে হবে সেই সংগ্রামের ধরণ কি; প্রতিকূলতার বৈশিষ্ট কি।
যুবলীগ চেয়ারম্যান, বঙ্গবন্ধুকন্যা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দীর্ঘ সংগ্রামী পথ পাড়ি দিয়েছেন। বাংলাদেশ আজ জাতীসংঘের অনুমোদনে স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিন-রাত পরিশ্রমের কারণে। তাই আমাদের সংগ্রামটা এখন ভিন্ন রকম। আমাদের আগামীর সংগ্রাম হবে একটা ন্যায়-পরায়ণ, মানবিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, মেধাভিত্তিক, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যে আমাদের কি কি করণীয়? প্রথমে ধরি ন্যায়-পরায়ণ সমাজ গঠনে কি করণীয় এবং কি উপকারিতা? ন্যায়-পরায়ণ সমাজ ব্যবস্থা গঠনে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে হবে। সাফল্য অর্জন করতে হবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। কাকে ডিঙ্গাইয়া কোথায় উঠবো এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। যোগ্যতা আর দক্ষতা থাকলে কাউকে ডিঙ্গানোর প্রয়োজন হবে না। যোগ্যতাই সাফল্যের দরজায় পৌঁছে দিবে। কাউকে ঘুষ, বা তদবির করা দরকার পরবে না। কোন বড় ভাইয়েরও দরকার হবে না। কোথাও ধর্নাও দিতে হবে না। যে কোন উন্নত-সভ্য সমাজ সৃষ্টিতে ন্যায়-পরায়ণ সমাজ ব্যবস্থা পূর্বশর্তে। এটাই সুশাসন কায়েম করার অন্যতম পন্থা।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আপনাদের কৃতিত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ মানবিক যুবলীগে রূপান্তরিত হয়েছে। এখন আপনাদেরই হাত ধরে আগামীর যুবলীগ এদেশে মানবিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করবে। যেই সমাজে আপনাদের মানবিকতাই প্রধান চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করবে এবং এই মানবিকতাই সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হবে। মানবিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম হলে অন্যায়, অবিচার থাকবে না এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। বিজ্ঞান ও মেধা ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জন্য সর্বপ্রথমে দরকার যুক্তিনির্ভর পরিবেশ ও মন-মানসিকতা। চিন্তা-ভাবনায় বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হতে হবে। গবেষণামূলক মতবাদে আমাদের বিশ্বাস আনতে হবে, শুধুমাত্র শিখানো বুলি দিয়ে তোতা পাখির মত বক্তব্য-বিবৃতি দিলে চলবে না। যেটা বলব সেটাতে বিশ্বাস করতে হবে। যেমন ধরেন, আমি বিশ্বাস করি “শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশ সবচেয়ে নিরাপদ, কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। এদেশের প্রতি তাঁর সর্বাধিক দায়বদ্ধতা রয়েছে এবং আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার সরকারের কোন বিকল্প নাই।” এই মতামতে আমি বিশ্বাস করি কারণ আমি এই মতামত যুক্তি ও বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা দিয়ে প্রমাণ করতে পারব। যুক্তিনির্ভর পরিবেশ সৃষ্টি হলে সাধারণ মানুষের উপর সমাজের প্রভাবশালী উচ্চশ্রেণীর কর্তাদের কর্তিত্ব কমে যাবে। কুসংস্কার থেকে মানুষ মুক্তি পাবে। সাম্প্রদায়িক শক্তি আর মাথা-চাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। আমাদের এই সম্প্রীতির বাংলাদেশে আর ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করতে পারবে না, ধর্মীয় দাঙ্গা সৃষ্টি করতে পারবে না। মানুষকে তখন আজগুবি কথায় কেউ বিশ্বাস করাতে পারবে না, যেমন ধরেন “সাঈ দিকে চাঁদে দেখা যায়” অথবা “জিয়াউর রহমানের ডাকে মানুষ নাকি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিল”। এই সকল অযৌক্তিক শিখানো বুলি দিয়ে সাধারণ মানুষকে আর বিভ্রান্ত করা যাবে না। বিজ্ঞান ও মেধা ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা সৃষ্টি হলে মানুষকে আর ধোঁকা দেয়া সম্ভব না। এভাবেই প্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। প্রগতি মানে উন্নয়ন, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা। মেধা ও মননের উৎকর্ষ সাধণ। সৃজনশীলতা বৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ সাধণ। আমার কাছে চৎড়মৎবংং মানে সভ্যতার বিকাশ ধাপে ধাপে আবর্তিত হয়ে সভ্যতার বিভিন্ন মাইলফলক অতিক্রম করা। প্রগতি মানে সমঅধিকার ও গণতন্ত্রের বিকাশ। প্রগতি মানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত্তি শক্ত করা।
তার মতে, প্রগতিশীল সমাজ ব্যবস্থা ধর্মান্ধতার কোন স্থান নাই। ধর্মনিরপেক্ষতা শুধু একটা হাল-ফ্যাশন দ্বারস্ত রাজনৈতিক বক্তব্য না, ধর্মনিরপেক্ষতা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। যার যার বিশ্বাস তার তার। বিশ্বাস কখনো চাপিয়ে দেওয়া যায় না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশের একটা তথাকথিত বিরোধী দল বিএনপি-জামাত চায় না আমরা এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে একটা ন্যায়-পরায়ণ, মানবিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, মেধাভিত্তিক, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করি। তারা আজ অপপ্রচারের আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন রকমের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, কিভাবে ক্ষমতায় আসা যায়। কিভাবে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা রোধ করা যায়? তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে একটা পশ্চাদপদ, মৌলবাদী, ব্যর্থ রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করা। বিদেশি কোন প্রভুর ধমবহফধ তারা বাস্তবায়ন করছিল তাও আমরা জানি ও বুঝি। বঙ্গবন্ধুকন্যা, শেখ হাসিনা গত ১২ বছরে দেশের চেহারা পাল্টে দিয়ে, এই দেশে দৃষ্টান্তমূলক এবং যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধন করাতে তাদের সেই উদ্দেশ্য ভেস্তে গেছে, তাদেরও চাকরি চলে যাওয়ার উপক্রম। বিরোধী দল হিসাবেও তারা আন্দোলন সংগ্রাম করতে পারে নাই, চরম ব্যর্থতার পরিচয় বছরের পর বছর দিয়ে যাচ্ছে। তাই তাদের এখন একমাত্র রাজনৈতিক সম্বল একজন বয়স্ক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি নেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করা। যাইহোক, সেটা তাদের অভিরুচি। তবে রাজপথে শেখ মণি’র যুবলীগ, এই প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিপক্ষদেরকে মোকাবেলা করতে, জনগণের উপর তাদের জুলুম অত্যাচারের জবাব দিতে সর্বদা প্রস্তুত।
রাজনীতি মানে অধিকার বঞ্চিতদের অধিকার আদায় করা। তাই আপনারা দেখেছেন যুবলীগ গত দুই বছর করোনা প্রাক্কালে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। প্রায় ৭৫ লাখ মানুষের কাছে প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে, শীতবস্ত্র বিতরণ করে যাচ্ছে, টেলিমেডিসিন এর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা ও বিনা মূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদান করা হচ্ছে এবং এবছর আমরা প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের গৃহদান কর্মসূচির আদলে আশ্রায়ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি। আগামী ৮ই ডিসেম্বর ইনশাআল্লাহ এই কর্মসূচির ৪র্থ ধাপের উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
পরিশেষে তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত করতে, একটা আধুনিক, উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ আমাদের লক্ষ্য। যেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য সঙ্কুচিত ও নিয়ন্ত্রিত থাকবে। সবার সমান অধিকার থাকবে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ কমে যাবে। বাঙালি শিল্প, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বিকাশ ঘটবে। একটা প্রকৃতপক্ষে প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ, মর্যাদাশীল, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে সৃষ্টি করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যে বাংলাদেশ শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান চর্চায় সারা বিশ্বে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। তাই আমার স্বপ্ন যুবলীগ প্রকৃতপক্ষে সুশৃঙ্খল একটা প্রগতিশীল জনদরদি সংগঠনে রূপান্তরিত হবে। যুবলীগ শোষণমুক্ত ও সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। যুবলীগের প্রসার দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহিঃবিশ্বেও বিস্তার লাভ করুক এই আমার কামনা এবং সকল সংকটে ও সংগ্রামে যুবলীগে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে, বিজ্ঞানভিত্তিক সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে নেতৃত্ব দেবে। আমাদের লক্ষ্য দক্ষ ও মানবিক যুবশক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের সম্মান সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া।
এসি