ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ইন্দোনেশিয়ায় অগ্ন্যুৎপাত

ছাইয়ের নিচে তলিয়ে গেছে ১১টি গ্রাম, নিহত ১৪

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:৪৫ পিএম, ৫ ডিসেম্বর ২০২১ রবিবার | আপডেট: ০৭:৪৭ পিএম, ৫ ডিসেম্বর ২০২১ রবিবার

ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে মাউন্ট সেমেরু আগ্নেয়গিরি থেকে শনিবার শুরু হওয়া অগ্ন্যুৎপাতে এখনও পর্যন্ত অন্তত ১৪ জনের প্রাণহানি এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছে বলে দেশটির আপদকালীন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। 

এদিকে, মাউন্ট সেমেরুর অগ্ন্যুৎপাত থেকে সৃষ্ট বিশাল ছাইয়ের স্তুপের নিচে পুরো তলিয়ে গেছে ১১টি গ্রাম। আগ্নেয়গিরির ছাই বাড়িঘরের ছাদ পর্যন্ত ঢেকে দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, ঘন ধোঁয়ার মেঘ সূর্যকে সম্পূর্ণ ঢেকে দেয়ায় দিনের বেলাতেও আকাশ রাতের মত ঘন অন্ধকার হয়ে আছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, অন্তত ৫৭ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছেন অনেকেই। দেশটির বিপর্যয় মোকাবেলা সংস্থা বিএনপিবি বলছে, অগ্নিদগ্ধদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

অগ্ন্যুৎপাতে লুমাজাং প্রদেশের অন্তত ১১টি গ্রাম ছাইয়ের নিচে সম্পূর্ণ চাপা পড়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালানো গ্রামবাসীদের অনেকেই মসজিদ এবং অস্থায়ী কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। বিএনপিবির কর্মকর্তারা বলছেন, এলাকা থেকে এ যাবত ৯ শতাধিক মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

তবে দম বন্ধ করা ধোঁয়া আর বিদ্যুৎ সংযোগ পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও অগ্ন্যুৎপাতের পর ঝড়বৃষ্টিতে আগ্নেয়গিরির লাভা ও ধ্বংসাবশেষ মিশে কাদায় পরিণত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

তরিকুল হক নামে স্থানীয় একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ওই এলাকার সঙ্গে নিকটবর্তী মালাং শহরের সড়ক ও সেতু যোগাযোগও অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। "খুব দ্রুত পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে," বলেন তিনি।

ছাইয়ে চাপা পড়া ভবনগুলোতে আটকে পড়া ১০ জনকে ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে বলে বিএনপিবি জানাচ্ছে।

জরুরিকালীন কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় মিডিয়াগুলো আকাশ ঢেকে ফেলা বিশাল ছাইয়ের মেঘ থেকে প্রাণ বাঁচাতে এলাকার মানুষদের ছুটে পালানোর ভিডিও শেয়ার করেছে সামাজিক মাধ্যমে। নিচে দেয়া এরকম দুটি পোস্ট স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কের চিত্র তুলে ধরেছে।

এই অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয় শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর প্রায় আড়াইটা নাগাদ। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে তিন মাইল (পাঁচ কিলোমিটার) পর্যন্ত এলাকায় কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না।

মূলত, মাউন্ট সেমেরু আগ্নেয়গিরি থেকে নিয়মিতভাবেই অগ্ন্যুৎপাত হয় এবং প্রায়শই এই আগ্নেয়গিরি থেকে ৪ হাজার ৩০০ মিটার উচ্চতায় ছাই নির্গত হয়। সেই হিসাবে শনিবারের অগ্ন্যুৎপাত অনেক শক্তিশালী বলে বলছেন অস্ট্রেলিয়ান সংস্থার অগ্ন্যুৎপাত বিশেষজ্ঞ মি. বিগস্। তিনি বলেন, এই ছাইয়ের মেঘ ধীরে ধীরে বাতাসে মিশে চলে যাবে। 

ইন্দোনেশিয়ার ১৩০টি জীবন্ত আগ্নেয়গিরির একটি হল মাউন্ট সেমেরু। এটার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হজার ৬৭৬ মিটার। ২০২০ সালের ডিসেম্বরেও এই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে বাসিন্দাদের আশ্রয় শিবিরে যেতে হয়েছিল।

প্রশান্ত মহাসাগরে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান "রিং অফ ফায়ার" নামক প্লেটের ওপর। ভূগর্ভস্থ এই সংযোগস্থলে প্রায়ই অগ্ন্যুতপাত ও ভূকম্পন সৃষ্টিকারী প্রাকৃতিক কার্যকলাপ তৈরি হয়। সূত্র- বিবিসি।

এনএস//