ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

সমাজকে বদলে দিতে চান প্রতিবন্ধকতা জয়ী হৃদয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:১১ পিএম, ৭ ডিসেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার

অভিনয়ে সহশিল্পীর সঙ্গে হৃদয়

অভিনয়ে সহশিল্পীর সঙ্গে হৃদয়

সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যে কখনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তার অনন্য উদাহরণ মাদারীপুরের হৃদয়। তিনি একজন সফল ইউটিউবার ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার। ইউটিউবের জন্য নিজেই বিভিন্ন সচেতনতামূলক ভিডিও তৈরি করে এবং নিজেই তা এডিট করে মাসে আয় করছেন ত্রিশ হাজারের বেশি। নিজের পাশাপাশি বাবা মায়ের সংসারেও হাল ধরেছেন। তিনি আর এখন পরিবারের বোঝা নন। বরং নিজের প্রতিভা দিয়ে এখন সমাজকে বদলে দেওয়ার ইচ্ছা তার।

হৃদয়ের পুরো নাম সাইফুল ইসলাম। ২০০০ সালের ২ ফেব্রুয়ারী মাদারীপুরের কুনিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে জন্ম তাঁর। ২০১৮ সালে আমগ্রাম হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও মোস্তফাপুর কলেজ থেকে ২০২০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। বাবা মোস্তফা বেপারী একজন কৃষক ও মা লিপি বেগম গৃহিণী। দুই ভাইয়ের মধ্যে হৃদয় ছোট। বড় ভাই প্রবাসী। শারীরিক আকৃতি ছোট হওয়ার কারণে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে হৃদয়কে।

এ বিষয়ে হৃদয় বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে খর্বাকৃতির বলে আমাকে নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি, ঠাট্টা ও উপহাস করত। প্রথম প্রথম আমার অনেক কষ্ট হতো, মন খারাপ হতো। কিন্তু এখন আর হয় না। কারণ আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। পরিবারের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। আমি এখন আমার পরিবারের আর বোঝা নই।’

ছোটবেলা থেকেই ঘরকুনো স্বভাবের ছিল হৃদয়। যে কারণে তাকে নিয়ে অনেকেই ট্রল করতো। কিন্তু হৃদয়ের এই ঘরকুনো স্বভাবটাই যেন আশীর্বাদ হয়ে আসে তার জন্য। ঘরের মধ্যে থেকেই তিনি একা একা ইউটিউব দেখে ভিডিও এডিটিং ও গ্রাফিক্স ডিজাইন রপ্ত করেন। পাশাপাশি নিজেই প্রতিবাদমূলক কিছু ভিডিও তৈরি করে নিজের পেজ ‘হৃদয় নিউজ’-এ আপলোড দেন।

এসবের পাশাপাশি হৃদয় বর্তমানে অভিনয়ও করেন। তার অভিনীত স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিগুলো হল- মোল্লা বাড়ির চার বউ, চাকরানি মেয়ে থেকে রাজরানী, শিক্ষিত বেকার, বৃদ্ধাশ্রম ইত্যাদি।

অভিনয়ের জগতে কিভাবে আসলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে হৃদয় বলেন, ‘আমি গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। আমার বান্ধবী জুঁই-এর কথায় আমি প্রথম ইউটিউবে কাজ শুরু করি। তারপর একদিন আমার ফেসবুকের পরিচিত এক ভাই রানা আমার ভিডিওগুলো দেখেন। ভিডিওগুলো দেখে তিনি আমাকে গ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তারপর থেকে আমি মিউজিক বাংলা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে রুবেল হাওলাদার ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করি।’

হৃদয়ের প্রিয় অভিনেতা হুমায়ূন সাধু। তাঁর ইচ্ছা সাধুর মতো একজন অভিনেতা হওয়ার এবং নিজের একটা প্রোডাকশন হাউজ দেয়ার। হৃদয় চান, তার মতো মানুষরা যেন সমাজের বোঝা না হয়ে নিজেই যেন কিছু একটা করেন। নিজের পায়ে দাঁড়ান। 

হৃদয়ের বাবা মোস্তফা বেপারী বলেন, ‘আমার দুইটাই ছেলে। বড় ছেলে প্রবাসী। ছোট ছেলে হৃদয় প্রতিবন্ধী হওয়ায় অনেকেই অনেক কথা বলতো। শুনে আমাদের মন খারাপ হতো। তাকে নিয়ে নানান চিন্তা করতাম। তবে বর্তমানে আমার ছেলে আর কারো বোঝা নয়। ৮-১০টা স্বাভাবিক ছেলের চেয়ে আমার ছেলে এই বয়সে অনেক আয় করে। তা দিয়ে নিজে চলে, আমাদেরকেও কিছু দেয়। আমি আমার ছেলের সর্বোচ্চ সাফল্য কামনা করছি। আপনারা সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।’

আসলে, এই হৃদয়ের মতো মানুষগুলোই আমাদের সমাজের প্রতিবিম্ব, তাদের মাধ্যমেই গড়ে উঠবে বেকার মুক্ত বাংলাদেশ।

লেখক- সাজেদুর আবেদীন শান্ত, ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

এনএস//