কী কারণে ভেঙে পড়ল বিপিন রাওয়াতের কপ্টার?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:১৭ পিএম, ৮ ডিসেম্বর ২০২১ বুধবার
ওয়েলিংটনে ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজে যাওয়ার পথে হেলিকপ্টার ভেঙে নিহত হন ভারতের প্রতিরক্ষা প্রধান বিপিন রাওয়াত এবং তার স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াত।
বুধবার সন্ধ্যে পর্যন্ত বিমানবাহিনীর টুইটারে দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিংহ ছাড়া ওই হেলিকপ্টারের ১৩ জন যাত্রীরই মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত শুরু করেছে বিমানবাহিনী।
এই দুর্ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে, দেশের প্রতিরক্ষা প্রধানের হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ল কী করে? উত্তর খুঁজতে আনন্দবাজার যোগাযোগ করে বিমানবাহিনীর সাবেক গ্রুপ ক্যাপ্টেন রমেশকুমার দাসের সঙ্গে। রাওয়াতের হেলিকপ্টার ওয়েলিংটন যাওয়ার পথে নীলগিরি পাহাড়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ১৯৯৭-১৯৯৮ সালে ওয়েলিংটনের ওই স্টাফ কলেজেই প্রশিক্ষণ নিয়ে ছিলেন রমেশ। তাই ওই এলাকা এবং নীলগিরি পাহাড়ের সঙ্গে তার আলাপ অনেক পুরনো বলে জানান তিনি।
ওয়েলিংটনের ডিফেন্স স্টাফ কলেজে নিয়মিত বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্তারা বক্তৃতা করতে আসেন, বলে জানান রমেশ। সিডিএস বিপিন রাওয়াতও ওই কলেজেই বক্তৃতা করার জন্য সুলুর থেকে রওনা দিয়েছিলেন। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট নাগাদ নীলগিরি পাহাড়ে, কুন্নুরের জঙ্গলে ভেঙে পড়ে তার হেলিকপ্টার।
খারাপ আবহাওয়াকে অনেকেই এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করছেন। তবে একাধিক কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন রমেশ। তিনি বলেন, “গত কয়েকদিন ধরেই তামিলনাড়ুর আবহাওয়া খারাপ। নীলগিরি পাহাড়ে আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তন হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মেঘলা বা কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে যায়। হেলিকপ্টার টেক-অফ করার পর হয়তো আবহাওয়া খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাই খারাপ আবহাওয়ার বিষয়টি একে বারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দুর্ঘটনার কারণ খোঁজার সময় এটাও নিশ্চয় তদন্ত করে দেখা হবে।”
যদিও দেশের প্রতিরক্ষা প্রধানের মতো ভিআইপি-দের আকাশ পথে যাতায়াতের সময় আবহাওয়ার পূর্বাভাসের দিকেও বিশেষ নজর দেওয়াই নিয়ম।
সুলুর এয়ারবেস থেকে ওয়েলিংটন যেতে আকাশপথে ২০ মিনিটের সময় লাগে বলে জানান রমেশ। নীলগিরির পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে এই পথ। তার মতে আবহাওয়ার সঙ্গে এলোমেলো হাওয়ার ফলে সেই সময় হেলিকপ্টারটি কোনও বিপদে পড়েছিল কী না সেটিও দেখা উচিত।
তিনি বলেন, “হেলিকপ্টারে একাধিক 'মুভিং পার্টস’ থাকে। হেলিকপ্টারের মাথার উপর যেমন ব্লেড ঘোরে, তেমনই থাকে ‘টেল রোটার’ অর্থাৎ হেলিকপ্টারের পিছনে বা লেজের দিকে পাখা ঘুরতে থাকে। পাহাড়ে বিভিন্ন মুখী হাওয়া চলে। কখনও উপর দিক থেকে নীচের দিকে তো কখনও নীচ থেকে উপরে হাওয়ার অভিমুখ হয়। অনেক সময় এর হঠাৎ তারতম্য ঘটলেও অসুবিধায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে।”
একই সঙ্গে রমেশ এটাও জানান যে, এই সব বিষয়গুলিই পাইলটরা মাথায় রাখেন। কী ধরনের সমস্যার মুখে তারা পড়তে পারেন তা সম্পর্কেও ধারণা থাকে তাঁদের।
রুশ এমআই-১৭ দেশের অন্যতম উন্নত এয়ারক্রাফট। রমেশ বলেন যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হেলিকপ্টারে ওঠার আগে সেই হেলিকপ্টারের একাধিক পরীক্ষা করা হয়। ‘সার্ভিস এবিলিটি’ অর্থাৎ পরীক্ষার সঙ্গে যন্ত্রাংশ খুঁটিয়ে দেখা হয়। তিনি বলেন, ‘‘কোনও এয়ারবেসের স্কোয়াড্রনে যত এয়ারক্রাফট থাকে তার মধ্যে সব থেকে ভালটাই ব্যবহার করা হয়।” অভিজ্ঞ পাইলটই সেই হেলিকপ্টারের চালকের আসনে থাকেন।
সস্ত্রীক বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ দেশের তিন প্রতিরক্ষা বাহিনীও। ইতিমধ্যে বিমানবাহিনীর কর্তারা দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে তদন্ত শুরু করেছেন। রমেশের মতে- একাধিক কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তদন্তের পরই আসল কারণ জানা যাবে। সূত্র: আনন্দবাজার
এসি