মানবিক তাড়নায় একাত্তরের যুদ্ধে জড়ান বিদেশি বন্ধুরা (ভিডিও)
মুহাম্মদ নূরন নবী
প্রকাশিত : ১২:০০ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ সোমবার | আপডেট: ১২:১১ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ সোমবার
তাঁরা ছিলেন অবাঙালি। মানবিক তাড়নায় একাত্তরের যুদ্ধে জড়িয়েছিলেন। কেউ দিয়েছেন আশ্রয়। কেউ কুড়িয়েছেন অর্থসাহায্য। কেউ খাদ্য পাঠিয়ে বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছেন।
বন্ধু যখন হয় মনের শক্তি, তখন প্রাণ বাঁচাতে শত প্রাণের এগিয়ে আসা অনন্য এক মমত্ববোধ।
বাঙালির দারুণ দুঃসময়ের পরীক্ষিত এক বন্ধুর নাম ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী গান্ধী। মুক্তিকামী বাঙালির ত্রাতা হয়ে যিনি সাহসের পাশাপাশি এদেশের মানুষকে দিয়েছিলেন বেঁচে থাকার অস্ত্র, প্রশিক্ষণসহ বহুমাত্রিক সহায়তা।
দিনের পর দিন চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের। বহির্বিশ্বের কাছে নতুন বাংলাদেশের পরিচয় করাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছে ইন্দিরা গান্ধীর সরকার।
মানবাধিকার কর্মী অ্যারমা দত্ত বলেন, শ্রীমতি ইন্ধিরা গান্ধী সেই সময় বাংলাদেশের দায়িত্বটা হাতে তুলে না নিতেন
ভারতের সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব। ঢাকা জয়ের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছেন মাত্র ১৫ দিনে। পাকিস্তানীদের বাধ্য করেছিলেন অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণে।
যার যা কিছু আছে দূর্গ গড়ে তোলার মতো-গান গেয়েও শক্তি আর সাহস দেয় কনসার্ট ফর বাংলাদেশ।
নিউইয়র্কের মেডিসন স্কয়ারে গান গেয়েছিলেন বিটলসের হর্জ হ্যারিসন। অন্যতম সঙ্গী ছিলেন সেতারসম্রাট রবিশঙ্কর, সরোদরাজ আলী আকবর খাঁ, তবলার কিংবদন্তি শিল্পি আল্লারাখা খাঁ। সে গানের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাকিস্তানীবাহিনীর গণহত্যার কথা জানতে পারে বিশ্ববাসী।
কনসার্টে আয় হওয়া ২ কোটি ৪৩ হাজার ৪শ’ সাড়ে ১৮ মার্কিন ডলার আয়োজকরা পাঠান শরনার্থীদের সহায়তায়।
শুধু যে গানেই থেমে থেকেছেন তা কিন্তু নয়। বিদেশি বন্ধুদের কবিতায় উঠে এসেছে নিজদেশে ঘরহীন বাঙালির নির্মম নির্যাতন প্রসঙ্গ। আমেরিকান কবি অ্যালেন হিনসবার্গের সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড কাঁদায় মানুষকে, জেগে ওঠে বিশ্বমানবতা।
হাতে কিছুই ছিল না। তাই বলে থেমে থাকেনি আটাশ বছরের তরুণ জ্যাক ওয়ে। শরণার্থী ক্যাম্পে ওষুধ পাঠাতে ফ্রান্সের আলভি বিমানবন্দরে খেলনা বন্দুক দিয়েই বিমান হাইজ্যাক করে বসেছিল এই তরুণ।
বীরপ্রতীক লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, আমরা রাশিয়া, জাপান এবং আমেরিকাতেও, ইংল্যান্ডে, জার্মানিতে, ফ্রান্সে- এরকম অনেক দেশের বন্ধুদের আমন্ত্রণ করেছি। তারা আমাদেরকে অনেক সাহায্য করেছে।
সান ডে টাইমসের এ্যান্থনী মাসকারেনহাস। যাঁর গণহত্যার প্রতিবেদন ইতিহাস বদলে দিয়েছিল। ইন্দিরা গান্ধী বিবিসি সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছিলেন এন্থনীর লেখা।
গণমাধ্যমকে দাবানোর চেষ্টা করেও জান্তা সরকার ঢেকে রাখতে পারেনি কুখ্যাত গণহত্যা ‘অপারেশ সার্চ লাইট’ এর খবর। ৩০ মার্চ দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় সায়মন ড্রিং তুলে ধরেছিলন গণহত্যার। বিশ্ব জানতে পারে পাকবাহিনী কর্তৃক বাঙালি নিধনের খবর। তারও আগে ২৫শে মার্চ অনুসন্ধানী সাংবাদিক সিডনী এইচ সাহেন্ডারবার্গ ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এ তুলে ধরেন বাঙালি হত্যার আদ্যোপান্ত।
জুডিশিয়ারী কমিটিতে সরব থেকে নিক্সন প্রশাসনকে চাপে রেখেছিলেন যুক্তরাষ্টের সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি। শরনার্থী ক্যাম্পগুলো নিজ চোখে দেখেছিলেন তিনি। সম্মুখ সারিতে থেকে যুদ্ধ করেছেন ডাচ-অস্ট্রেলিয়ান বীরপ্রতীক ওডারল্যান্ড। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাজ করেছেন ফাদার রিগান।
ত্রাণ কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন অক্সফামের কর্মকর্তা-জুলিয়ান ফ্রান্সিস। ব্রিটিশ এই মানবাধিকার কর্মীর হাত ধরেই বিশ্ব কাঁপানো টেস্টমনি সিক্সটিন দেখেছিল আলোর মুখ।
বীরপ্রতীক লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, দুটো ভাগ আছে একটা হলো ফ্রেঞ্চ অব বাংলাদেশ, আরেকটি হলো অনারারি ইন্ডিয়ান সোলসার্স। ফ্রেঞ্চ অব বাংলাদেশের মধ্যে আমরা অনেক ভারতীয় নাগরিকদের সম্মান প্রদর্শন করেছি। ভারতের জনগণকে একটা সম্মাননা প্রদান করেছি।
সাড়ে ছয়শ’ জনের তালিকা থেকে ৯টি ধাপে ৩শ’ ৩৭ জন বিদেশী বন্ধুকে সম্মাননা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সবার নাম হয় তো উঠে আসেনি, কিন্তু নাম না জানা অকৃত্রিম বন্ধুদের প্রতি বাঙালির শ্রদ্ধা থাকবে অবিচল, ভালোবাসার প্রবহমানতা রইবে উচ্ছ্বল এবং আজীবন।
এএইচ/