চুয়াডাঙ্গায় ২ টাকার কয়েন নিতে চান না কেউ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:২৪ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ সোমবার
চুয়াডাঙ্গায় দুই টাকার ধাতব মুদ্রা বা কয়েন একেবারেই অচল। এমনকি ভিক্ষুককে দিতে চাইলেও দুই টাকার কয়েন নিতে চান না। রাষ্ট্রীয়ভাবে এই কয়েন অচল না হলেও জেলার সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকও তা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে রীতিমতো দুর্ভোগে পড়েছেন এই জেলার মানুষ।
এ দিকে হাটবাজারে দোকানিরাও কেনাবেচায় দুই টাকার কয়েন নিতে অনীহা দেখানোয় বিপাকে সাধারণ মানুষ। রিকশা, ভ্যান বা মুদি দোকানদারেরাও কেনাকাটায় দুই টাকার কয়েন নিতে অনাগ্রহী। হাটবাজারসহ ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুই টাকার কয়েন দেখলেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে লেগে যায় তর্ক। কোনও পক্ষই এসব ধাতব মুদ্রা নিতে রাজি হয় না। জেলার দুই টাকার অচল মুদ্রা সম্পর্কে মানুষের সঙ্গে কথা হলে এমনই সব তথ্য জানা যায়।
লেনদেন বা কেনাকাটায় কাগজের নোটের পাশাপাশি বাজারে প্রচলিত যেকোনও মূল্যমানের কয়েন যে-কেউ নিতে বাধ্য। কিন্তু চুয়াডাঙ্গায় দুই টাকার কয়েন লেনদেন না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের কাছে পড়ে আছে হাজার হাজার টাকার কয়েন।
চুয়াডাঙ্গার বড় বাজার নিচের বাজারের সজীব ও সান্নাসহ একাধিক মুদি ব্যবসায়ী জানান, দুই টাকার কয়েন নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছেন তাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কয়েন নিতে বাধ্য হওয়া সম্পর্কে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, অসংখ্য পণ্য রয়েছে যেগুলো বিক্রি করতে হলে খুচরা টাকার প্রয়োজন; কিন্তু জেলা শহরে দুই টাকার কয়েন কেউ নিতে চান না। তবে কেন কয়েন নিতে সবার এত অনীহা এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি কেউ। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজর নেই বলেই আজ এই অবস্থা।
চা-দোকানি সোলায়মান ও মন্টু মিয়া জানান, এক কাপ র-চা পাঁচ টাকা ও দুধ চা ছয় টাকায় বিক্রি হয়। তাই চা পান শেষে সিংহভাগ ক্রেতা মূল্য হিসেবে কয়েন দেন। এ সময় দুই টাকার কয়েন অনেকে দিলেও তা নেওয়া হয় না। কারণ এই কয়েন চুয়াডাঙ্গায় চলে না। এ ছাড়া পাইকারি ব্যবসায়ীরাও দুই টাকার কয়েন নিতে চান না। সব ধরনের পণ্যের মহাজনরা কয়েন দেখলে অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। অনেক সময় মহাজনকে কর্মচারীরা দুই টাকার কয়েন দিলে তা ফেলে দেন।
চুয়াডাঙ্গা ফেরিঘাট রোড়ের পাইকারি ব্যবসায়ী চাননু মিয়া বলেন, ‘কয়েক বছর যাবৎ দুই টাকার কয়েন চুয়াডাঙ্গায় অচল হয়ে গেছে। এখন কেউ নিতে চান না। অসংখ্য ব্যবসায়ীর কাছে বিপুল পরিমাণ কয়েন জমে আছে। কিন্তু দুই টাকার কয়েনগুলো কোনও ব্যাংকও নিতে চাচ্ছে না।’
এ ব্যাপারে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মানিক আকবর বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলায় দুই টাকার কয়েন চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কয়েন যে নিতে চাবে না তাকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দিতে হবে। কারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বাড়িতে প্রচুর পরিমাণ কয়েন পড়ে আছে অলস টাকা হিসেবে। এতে অর্থনীতির গতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে।’
জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের চুয়াডাঙ্গা শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক বশির আহমেদ জানান, চুয়াডাঙ্গায় দুই টাকার কয়েন কেন চলে না, এর কারণ তার জানা নেই। কেউ এই কয়েন নিতে না চাইলে অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। ব্যাংক কিংবা সাধারণ মানুষ যেই হোক, দুই টাকার কয়েন যারা নেবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো আমরা।’
কেআই//