পরাজয় নিশ্চিত জেনে ঝাঁপিয়ে পড়ে হিংস্র হায়েনারা (ভিডিও)
আকবর হোসেন সুমন
প্রকাশিত : ১১:৩১ এএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় তখন বাঙালির দোরগোড়ায়। হিংস্র পাকিস্তানিরা সে রাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল কিংবদন্তিতূল্য বুদ্ধিজীবীদের উপর।
বিজয়ের বাকি মাত্র দু’দিন। পাকিস্তানী হায়েনার দল যারপরনাই হিংস্র হয়ে ওঠে। পরাজয় নিশ্চিত জেনে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ শত শত বুদ্ধিজীবীর উপর।
পরাজয়ের গন্ধ পেয়েই নীলনকশা বাস্তবায়ন করে এদেশীয় দালাল-রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বাহিনী। থুবড়ে পড়া ভূখণ্ডকে মেধাশূণ্য করতেই নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। টর্চার সেলে অমানুষিক নির্যাতন শেষে একখণ্ড বাংলাদেশকে যেনো ফেলে রাখে বুড়িগঙ্গা পাড়ে রায়েরবাজার বদ্ধভূমিতে।
কাউকে বাড়ি থেকে, নয়তো কর্মস্থল থেকে ছাত্র পরিচয়ে ডেকে নেয় হায়েনার দল। শহীদুল্লা কায়সার, জহির রায়হান, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতাদের মতো নিখোঁজ হন আরও অনেকে। পাক হানাদারেরা হত্যা করে ৯৯১ শিক্ষাবিদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিৎসক, ৪২ আইনজীবী, ৫ প্রকৌশলী, ৯ সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকারকে। তালিকায় বাদ যায়নি অন্য পেশার বুদ্ধিজীবীও।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর নতুন প্রজন্মের কাছে পরিপূর্ণ উদ্ভাসিত হয়নি বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস।
শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হান বলেন, ‘লম্বা সময়ে এদেশের ক্ষমতায় ছিল এদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি। বিরোধী শক্তি বলতে আমরা বুঝি সেই সমস্ত শক্তি, যেসব রাজনৈতিক দলের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কোন দ্বার নেই। বরং তারা চান এমন একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, যেটার সাথে শেখ মুজিবুর রহমান অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আদর্শের কোন সম্মিলন থাকবে না। সেই রাজনৈতিক পার্টিগুলো এ দেশে লম্বা সময় সরকারের দায়িত্ব পালন করেছে। সেই কারণে এই প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা যায়নি।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতোই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নৃশংস গণহত্যার উদাহরণ।
অনল রায়হান আরও বলেন, ‘তালিকা করে একটি জাতির সমস্ত শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা যে কোন জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিরল ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধ বিপ্লব বা স্বাধীনতা আন্দোলন স্টাডি করতে গেলে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড অন্যতম প্রধান ঘটনা হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের লেখাপড়া বা জানবার জন্য।’
প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করে প্রকৃত ইতিহাস কারিকুলামভুক্ত করার তাগিদ শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তানদের।
অনল রায়হান বলেন, আমরা মনে করি যে, এখন একটা খুবই উল্লেখযোগ্য সময় যদি শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তনটা আনা যায়। প্রকৃত ইতিহাস সিলেবাসে আনা যায় সেটা মাদ্রাসায়, সেটি ইংলিশ মিডিয়াম বাংলা মিডিয়াম সব জায়গায়।
জাতির সূর্যসন্তান আর ৭১-এর রক্তাক্ত বাংলাদেশের স্মৃতিচিহ্ন এই বধ্যভূমি। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে এসে শাস্তি হয়েছে ঘাতকদের। এখন সময়ের দাবি, ৭১-এর চেতনা ফেরানোর।
এএইচ/