ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১

৫০ বছরে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া অর্থনীতির চালচিত্র

মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া

প্রকাশিত : ০৩:৪১ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার

১৯৭০-এর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের স্বৈরাচারী সামরিক সরকার আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করতে থাকে। বাঙালির আন্দোলন, মিছিল ও প্রতিরোধ সংগ্রামে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে সারা পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল থাকে। ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে বর্বর সেনাবাহিনী পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংসতম গণহত্যা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে।

সেনাবাহিনী ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে হানা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করার আগে ১২-৩০ মিনিটে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলেও তার সহযোগী আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, যথা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ বাংলাদেশের ছাত্র, যুবক ও আপামর জনতাকে সঙ্গে নিয়ে দেশের মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা ছিল। অবশেষে নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সংগ্রামের পর ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জিত হয়। মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে সাড়ে নয় মাস বন্দি জীবন কাটিয়ে বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে আসেন। ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে দেখা যাক এ দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বাংলাদেশ কত দূর এগিয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি বলতে কিছুই ছিল না। রাস্তাঘাট, রেললাইন, সেতু-কালভার্ট, বন্দর প্রভৃতি বিধ্বস্ত। ব্যাংকগুলো টাকাশূন্য। তদুপরি দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা, প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন, পশ্চিম পাকিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশী সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ও নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন, দেশের সেনাবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন পুনর্গঠন, অফিস-আদালত স্থাপন ও সচল করা এবং তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফেরত পাঠানো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংক পুনর্গঠন, ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করা ইত্যাদি কাজ করতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। এছাড়া জাতীয় সংসদ সচল করা এবং গণপরিষদ প্রতিষ্ঠা করে সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণ, দেশ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন আইন প্রণয়ন, দশ মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়ন প্রভৃতি গুরুদায়িত্ব পালন করে বঙ্গবন্ধুর সরকার। নানা ধরনের অর্থনৈতিক সংকট, অনিয়ম, দুর্নীতি মোকাবেলা করে দেশকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের রূপরেখাও তিনি প্রণয়ন করেছিলেন। এ রূপরেখার প্রতিফলন দেখা যায় ১৯৭৩ সালে প্রণীত প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। এ পরিকল্পনায় তিনি কৃষি, শিল্প উৎপাদন এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ওপর বেশি জোর দেন। কৃষির সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ শিল্প উৎপাদনে গুরুত্ব দেয়া হয়। কতিপয় অসৎ ব্যক্তি ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর কারসাজিতে ১৯৭৪ সালে দেশের কোনো কোনো স্থানে সাময়িক দুর্ভিক্ষ দেখা দিলেও অল্প সময়ের মধ্যে এটি মোকাবেলা করে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করতে পেরেছিলেন। ১৯৭২-৭৩ সালে জিডিপির আকার ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার। স্বাধীনতা অর্জনের সময়ে দেশের মাথাপিছু আয় যেখানে ছিল ৯৪ ডলারের মতো, সেখানে ১৯৭৫ সালে মাথাপিছু আয় প্রায় তিন গুণ বেড়ে ২৭৩ ডলারে দাঁড়ায়।

বঙ্গবন্ধুর সরকারই অর্থনীতিতে ব্যক্তি খাতের অংশগ্রহণ শুরু করেছিল। তবে তার দুঃখজনক মৃত্যুর পর দেশে বেসরকারি ও ব্যক্তিগত বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধি পায়। গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক, পেশাজীবী প্রমুখের মধ্যপ্রাচ্যসহ বহির্বিশ্বে চাকরির সুযোগ অবারিত হয়। জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দেশ সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা থেকে বেরিয়ে পুঁজিবাদী অবাধ অর্থনীতির দিকে ধাবিত হয়। কারো কারো মতে, ১৯৭১ সালের আগের পাকিস্তানি ভাবধারায় তিনি দেশ পরিচালনা শুরু করেন। আশির দশকে শহর ও গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি হতে থাকে। এলজিইডি নামে প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হলে সড়ক বিভাগের পাশাপাশি এ বিভাগ গ্রামাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট নির্মাণেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ১৯৭৯ সালে বিদেশে তৈরি পোশাক রফতানি শুরু হয়। তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসারকল্পে আশির দশকের প্রথম দিকে সরকার দুটো নীতি প্রবর্তন করে। একটি ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণ প্রদান এবং অন্যটি হলো রফতানির জন্য প্রস্তুতকৃত পোশাকের কাঁচামাল আমদানিতে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ স্থাপন ও শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ ডিউটি ড্র ব্যাক। এতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে বিপ্লব ঘটে। ক্রমে রফতানিতে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান ৮৫ শতাংশে পৌঁছে। পোশাক শিল্পে নারীদের কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ শ্রমিকদের বিদেশে কর্মসংস্থানের ফলে গ্রামে অর্থপ্রবাহ ও ভোগ-চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

কৃষিতে সার ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে এবং বর্তমান শতাব্দীর শুরুতে শস্য উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। উচ্চফলনশীল শস্যের আবাদ হওয়ার কারণে বর্তমানে খাদ্য উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। ১৯৭২ সালে দেশে ধান উৎপাদন ছিল মাত্র ১ কোটি ১০ লাখ টন, ২০২০ সালে তা বেড়ে ৩ কোটি ৮২ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। ধান, গম ও ভুট্টা মিলিয়ে ২০২০ সালে খাদ্য উৎপাদন ছিল ৪ কোটি ৫৩ লাখ টন। ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয়, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, তরিতরকারি উৎপাদনে বাংলাদেশ চতুর্থ এবং আম উৎপাদনে অষ্টম স্থানে রয়েছে। তৈরি পোশাক উৎপাদনে চীন ও ভিয়েতনামের পরই বাংলাদেশের স্থান।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীন হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পরপর আরো দুবার নির্বাচনে জয়লাভ করে চতুর্থ মেয়াদে (এবং টানা তৃতীয় মেয়াদে) শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তার শাসনামলে গত ১৩ বছরেই অর্থনীতি ও সামাজিক সূচকের নানা ক্ষেত্রে আগের তুলনায় প্রভূত উন্নতি হয়েছে।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘দিন বদলের রূপকল্প-২০২১’ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, যে রূপকল্পে উল্লেখ ছিল বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার অঙ্গীকার। ২০১৮ সালেই বাংলাদেশ ‘স্বল্পোন্নত’ দেশের ক্যাটাগরি থেকে ‘উন্নয়নশীল’ দেশের ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়েছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে গত ১৩ বছরের গড় অর্জন, এর আগের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। ২০০১-০৬ সালে যেখানে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, সেখানে ২০০৯-২১ সালে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত হয়। মাথাপিছু আয় ২০২১ সালে এসে দাঁড়ায় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। ১৯৭৫ থেকে এ পর্যন্ত মাথাপিছু আয়ের যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তার ৭৩ শতাংশই ঘটেছে গত ১২ বছরে। আইএমএফের হিসাব মতে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। অবশ্য ২০১৫ সালেই আমাদের মাথাপিছু আয় পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ১৯৭২-৭৩ সালে যেখানে জিডিপির আকার ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২১ সালে মোট জিডিপি ৪০৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মোট জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল, ২০০৫ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ। ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার কমে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়ায়। চরম দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালের ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ২০১৯ সালে ১০ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছে।

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পে বিনিয়োগের ফলে তৈরি পোশাক, খাদ্য-পানীয়-তামাক, ইস্পাত, সিমেন্ট, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, ভোজ্যতেল, রাবার ও প্লাস্টিক পণ্য, ইলেকট্রনিকস, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রব্যাদি, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল প্রভৃতির উৎপাদন বেড়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো ও রফতানি উভয়ই সম্ভব হচ্ছে। দেশে ২০১৯ সালে জিডিপিতে শিল্পের অবদান প্রায় ৩৫ শতাংশে পৌঁছে। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের প্রসারের ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। শুধু শিল্পে নয়, পরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁ, পর্যটন প্রভৃতি সেবা খাত এবং অবকাঠামো উন্নয়ন, হাউজিং, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, আইসিটি প্রভৃতি খাতের ব্যাপক বিস্তৃতি ও কর্মসংস্থান লক্ষ করা যায়।

সরকারি খাতে বর্ধিত বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকার বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করে। বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশে বৈদেশিক সহায়তা ও অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থায়নে কোনো সমস্যাই হয় না। এছাড়া বিদেশী বেসরকারি বিনিয়োগেও আশাব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া যায়। ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলার। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হবে।

তৈরি পোশাক রফতানি শুরুর আগে বাংলাদেশের রফতানি ঝুড়িতে ছিল মূলত পাট, পাটজাত দ্রব্য, চা ও চামড়া। গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে তৈরি পোশাক রফতানি শুরু হলে ক্রমে রফতানিতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি হতে থাকে। ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিল মাত্র ৭৫ দশমিক ২ কোটি ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রফতানি আয় দাঁড়ায় ৪২ বিলিয়ন (৪২০০ কোটি) ডলার। করোনাকালীন ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি আয় ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছিল, তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানি আয় ৪৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। প্রায় দুই দশক ধরে রফতানি আয়ের ৮০-৮৫ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ও পাট ও পাটজাত দ্রব্য এবং ওষুধ রফতানিতে প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। উৎপাদনের পরিবেশ ও পণ্যের মান ও ছাড়পত্র নিশ্চিত হলে চামড়াজাত পণ্য, জাহাজ নির্মাণ ও কৃষিভিত্তিকি খাদ্যপণ্য (মাছ, সবজি ও ফলমূল) রফতানিতেও বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরই বিদ্যুৎ উৎপাদনে সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। বেসরকারি উৎপাদকদের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে সরাসরি বিদ্যুৎ ক্রয়ের সুবিধার্থে সরকার বিশেষ আইন প্রণয়ন করে, যাতে ভবিষ্যতে সরকারের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। উদ্যোক্তাদের  উৎপাদনের শুরু থেকে ১৫ বছরের কর মওকুফ করা হয়। এছাড়া কারখানা, প্লান্ট স্থাপন ও যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ইত্যাদি আমদানিতে শুল্ক মওকুফ করা হয়। সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়। সরকারি-বেসরকারি উৎপাদনের সমন্বয়ে দেশ এখন বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। ২০০৪-০৫ সালে যেখানে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট, যেখানে ২০২০ সালে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে। বর্তমানে দেশে ৯৯ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানেও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য রামপাল, পায়রা, বাঁশখালী, মহেশখালী ও মাতারবাড়ীতে আরো ৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। রাশিয়া থেকে কম-বেশি ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তায় রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। এতে দুটি ইউনিটে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে অন্তত একটি ইউনিট থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন সম্ভব হবে।

বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন। রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট, উড়াল সেতু, রেলপথ, স্কুল-কলেজ, গ্রোথ সেন্টার, হাটবাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন কমপ্লেক্স, সাইক্লোন শেল্টার প্রভৃতি নির্মাণ করে শহর ও গ্রামীণ জনগণের নাগরিক সুবিধা উন্নত করে জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্য আনা হয়েছে।

পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করার পর আরো ১০-১২টি মেগা প্রকল্প দেশী-বিদেশী অর্থায়নে বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। এদের মধ্যে কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা মেট্রোরেল, ঢাকায় দুটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রামপাল ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রামের মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আগামী ২০২২-২৩ সাল নাগাদ বেশ কয়টি মেগা প্রকল্প সমাপ্ত হবে। শুধু পদ্মা সেতু চালু হলেই দেশের মোট জিডিপিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। সুতরাং আরো কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের পর দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।

‘রূপকল্প ২০২১’-এর একটি অঙ্গীকার ছিল ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে আইসিটি জ্ঞানসম্পন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। বর্তমান সরকারের গত ১৩ বছরের প্রচেষ্টা ও কর্মপরিকল্পনায় দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, রেলওয়ে, বিমান প্রভৃতি স্থানে কম্পিউটারাইজড অনলাইন সেবা চালু হয়েছে। আইসিটি রফতানি ২০১৮ সালেই ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ৩৯টি হাইটেক পার্কের মধ্যে এরই মধ্যে নির্মিত নয়টিতে ১৬৬টি দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে। করোনা মহামারীর সময়ও অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, করপোরেট অফিস এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। বর্তমানে দেশে মুঠোফোনের সংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটি। বঙ্গবন্ধু-১ সাটেলাইট উেক্ষপণ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এতে দেশব্যাপী ইন্টারনেট সেবা প্রদান ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার সহজ হয়েছে।

ডিজিটালাইজেশনের পাশাপাশি তৃণমূল জনগণের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির নীরব বিপ্লবও গত এক যুগের উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে মাইক্রোক্রেডিট, সাধারণ ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং গ্রামাঞ্চলেও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করেছে এবং জনগণের ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলাকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ কঠিন সত্যটি মাথায় রেখে সরকার ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২০২১’ নামে একটি শতবর্ষের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। ক্লাইমেট ভালনারেবল গ্রুপের সভাপতি হিসেবে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন ফোরামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা পরামর্শ ও উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে। সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৯৮ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, ফলে সমৃদ্ধ ব্লু-ইকোনমির সুফলপ্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে ৬৮ বছরের অমীমাংসিত স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১১১টি ছিটমহলের ১৭ হাজার ৮৫১ একর জায়গা বাংলাদেশের সীমানায় যুক্ত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু অনুসৃত ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’—বৈদেশিক নীতি অনুসরণে সরকার সব বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। কোনো উন্নত শক্তিশালী রাষ্ট্র বা অর্থনৈতিক জোটের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ও বাস্তুচ্যুত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাদের শান্তিপূর্ণভাবে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলোর সঙ্গে সর্বতোভাবে যোগাযোগ রেখে কাজ করে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চার মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেক দূর এগিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের চাকরিতে নারীদের অংশগ্রহণ সন্তোষজনক। সরকারের সচিব, করপোরেট গ্রুপের চেয়ারম্যান বা পরিচালক পদে নারীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। স্কুল-কলেজে উপবৃত্তি প্রদান করার ফলে নারীশিক্ষার যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০ শতাংশ শিক্ষক নারীদের মধ্যে থেকে নেয়ার বিধান করা হয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পে ৬০ শতাংশ শ্রমিক নারী হওয়ায় গ্রামীণ নারীদের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত হয়েছে। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বর্তমানে ৩৬ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও দেশের পার্লামেন্টের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, মন্ত্রী, এমপি পদে এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায়ও নারীদের নির্বাচনের ফলে রাজনীতির ক্ষেত্রেও তাদের প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে। এসব কারণে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে এক অনন্য স্থানে রয়েছে। জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে সপ্তম।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তার একটি গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে নানা সামাজিক সূচকে, যেমন গড় আয়ু, শিক্ষার হার, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমানো, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির শতকরা হার, টীকাকরণ প্রভৃতিতে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ভালো করেছে। গত ৫০ বছরে আরো কয়েকটি সূচকে বাংলাদেশের অর্জন তুলনা করা যেতে পারে। যেমন ১৯৭২ সালে যেখানে গড় আয়ু ছিল ৪৬ দশমিক ৫ বছর, সেখানে বর্তমানে গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৮ বছর, ১৯৭২-৭৩ সালে যেখানে রাজস্ব আয় ছিল ১৬৬ কোটি টাকা, সেখানে ২০২০-২১ সালে রাজস্ব আয় হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ রাজস্ব বেড়েছে ১ হাজার ৫৬৬ গুণ। ১৯৭২-৭৩ সালে বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটিতে, অর্থাৎ বাজেটের আকার বেড়েছে ৭৬৮ গুণ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, আত্মপ্রত্যয়ী ও সাহসী নেতৃত্বের ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়, উন্নয়নের রোল মডেল। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে শূন্য হাতে, ধ্বংসস্তূপ থেকে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে তারই কন্যা শেখ হাসিনার চেষ্টায় ও নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বানায়, স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে দেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখায়। বাংলাদেশ এখন দ্রুত উন্নয়নশীল প্রথম পাঁচটি দেশের একটি। আর্থসামাজিক খাতে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান ও অগ্রযাত্রা এখন সারা বিশ্বে স্বীকৃত। প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্টের ২০২০ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান নবম। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ’ তাদের ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল-২০২১’-এ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও সার্বিক অগ্রগতি এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৫টি বড় অর্থনীতির একটি হবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। উন্নয়ন গবেষকরা আজকের বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের রোল মডেল, ‘এমার্জিং টাইগার’, দক্ষিণ এশিয়ার ‘তেজি ষাঁড়’ প্রভৃতি অভিধায় ভূষিত করছেন।

স্বাধীনতা-উত্তর ৫০ বছরে বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সত্ত্বেও কতিপয় সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ আমাদের অগ্রগতি ব্যাহত করে কিংবা গতি দুর্বল করে দেয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমাজের উচ্চবিত্ত শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও সুবিধাভোগী উচ্চমধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর হাতে অধিকাংশ সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। ফলে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণী উন্নয়নের ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়। আয়বৈষম্য কমানোর জন্য অধিক কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়ানো এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে নিয়মিত মজুরি বৃদ্ধির ব্যবস্থা থাকা জরুরি। মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ এবং একশ্রেণীর লোকের নীতিবিবর্জিত নষ্ট রাজনীতি আমাদের অগ্রগতি ব্যাহত করে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’সহ উপরে বর্ণিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার ও নাগরিকদের দেশপ্রেম নিয়ে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্যে আমরা সফল হব এবং রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পরিগণিত হবে।
লেখক: সাবেক সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান; বর্তমানে জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত
এসএ/এসইএল